দিনটি ছিল গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার)। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। কুয়াশার কারণে আসপাশে খুব একটা দেখা যায় না। সবেমাত্র লোকজন কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা বাজারে আসা শুরু করেছে। এমন সময় একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার এসে মাইশা ক্লথ স্টোর এন্ড পর্দা গ্যালারীর সামনে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে দুইজন স্মার্ট ব্যক্তি নামেন। এদের মধ্যে এক ব্যক্তি মাথায় ক্যাপ পরা অবস্থায় ডান হাত দিয়ে মুখ লুকিয়ে মাইশা ক্লথ স্টোর এন্ড পর্দা গ্যালারীর শাটার একধরনের লোহার রড দিয়ে খুলে দোকানের ভিতর ঢুকেন। তাঁর সাথে থাকা ব্যক্তিটিও দোকানের ভিতরে ঢুকেন। দোকানে থাকা নগদ টাকাসহ ৫ লাখ ১২ হাজার ৪৪০ টাকার বিভিন্ন প্রকারের কাপড় চুরি করে প্রাইভেট কার দিয়েই পালিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে দোকান মালিক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম এসে দেখেন তাঁর দোকানের সব মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছেন।
ঘটনার পর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি (রোববার) কটিয়াদী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দোকান মালিক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম। মামলার তদন্তভার পরে গচিহাটা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সফর আলীর ওপর। তিনি মামলাটি তদন্ত করে সুরাহা করতে না পারায় জেলা গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক হাসমত আলীর ওপর ২৫ জানুয়ারি (বুধবার) ন্যস্ত হয়। উপপরিদর্শক হাসমত আলী তাঁর সোর্স এক্টিভ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অবশেষে গত সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাদা রঙের প্রাইভেট কারসহ তাদের আটক করে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব বিষয় জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) নূরে আলম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) নূরে আলম জানান, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের সদর উপজেলার বড়পুল এলাকা থেকে প্রথমে মো: সুমন মিয়াকে (৪০) সাদা রঙের প্রাইভেট কারসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যমতে শহরের একরামপুর থেকে সোহাগ মিয়াকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জানা যায় সাধারণ মানুষের মতো ঘুরাফেরা করেই প্রাইভেট কারের নাম্বার প্লেট বদলিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দিনদুপুরে চুরি করে। মো: সুমন মিয়া জেলার বাজিতপুর উপজেলার নবুরিয়া গ্রামের মৃত গোলাম মোহাম্মদ ছেলে ও মোঃ সোহাগ মিয়া জেলা শহরের বয়লা এলাকার মৃত আঃ জলিল মিয়ার ছেলে। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নূরে আলম জানান, সুমন ও সোহাগ বিভিন্ন মালামাল চুরি করে ভৈরব বাজারে হাটের দিন কম দামে ফুটপাতে বিক্রি করে। মাইশা ক্লথ স্টোর এন্ড পর্দা গ্যালারী থেকে চুরি করা মালামাল ওই বাজারের ফুটপাতে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করে। তাদের গ্রেপ্তারের সময় মালামাল বিক্রয়ের ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) সুজন চন্দ্র সরকার, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামছুর রহমান, উপপরিদর্শক হাসমত আলী প্রমুখ।
Comments
comments