কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিরোধপূর্ণ জমিতে চারাগাছ রোপন ও কাটাকে কেন্দ্র করেই চাচাতো ভাই মাহমুদুল হাসান আলমগীর ও বোন নাদিরা খাতুনকে হত্যা করা হয়েছে বলে গ্রেপ্তার ইমরান ও আরমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার (১৬ জুলাই) বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিন্নাত আরা আক্তারের আদালতে এ স্বীকারোক্তি দেন তারা। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে মোঃ ইমরানকে (২৬) ও কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে আরমান মিয়াকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আরেক আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৬) হওয়ায় তার নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। এর আগে গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) এ মামলার আসামি ফরিদা ইয়াসমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসামিরা হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের কুড়িমারা গ্রামের মোঃ আব্দুল কাদিরের ছেলে। অন্যদিকে নিহতরা হলেন একই এলাকার শামসুল ইসলামের ছেলে মাহমুদুল হাসান আলমগীর ও মেয়ে নাদিরা খাতুন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইমরান ও আরমানের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি জানান, শামসুল ইসলাম ও আব্দুল কাদির সম্পর্কে ভাই হয়। তাঁদের মধ্যে কিছুদিন ধরে জমির সীমানায় গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলছিল। গত বুধবার বিকেলে আব্দুল কাদির বিরোধীপূর্ণ জমির কয়েকটি চারাগাছ কেটে নতুন গাছের চারা রোপণ করেন। এর জেরে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে আসামিরা আবার জমিতে চারাগাছ রোপণ করতে গিয়ে দেখে আগের দিনের গাছগুলো উপড়ে ফেলে দিয়েছে। তখন আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে শামসুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে গালি দেন।
এ সময় শামসুল ইসলাম, বড় ছেলে মাহমুদুল হাসান আলমগীর, স্ত্রী শাহিদা, মেয়ে নাদিরা, মেজো ছেলে হুমায়ন কবির ও ছোট ছেলে সালমান ঘর থেকে বের হয়ে তাদের গালি দিতে বারণ করেন। পরে শামসুল ইসলামের পরিবারের ওপর হামলা চালায় আসামিরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন জানান, হামলার সময় আসামি ইমরান চাচাতো ভাই আলমগীরের ঘাড় চাকু দিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আলমগীরকে বাঁচাতে তার মা ও ভাই–বোনেরা এগিয়ে গেলে আসামি ইমরান নাদিরার পেটে ছুরিকাঘাত করে। ঘটনাস্থলে আলমগীর মারা যান। হামলায় আলমগীরের মা, ভাই ও বোন গুরুতর আহত হন। এ সময় ঘটনাস্থলেই আলমগীর মারা যান। অন্যদিকে নাদিরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৪ জুলাই) নিহত আলমগীর ও নাদিরা খাতুনের বাবা শামসুল ইসলাম বাদী হয়ে হোসেনপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও জানান, আব্দুল কাদিরের পরিবারের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে শামসুল ইসলামের পরিবারের দীর্ঘদিনের বিরোধ। গ্রেপ্তাররা আমাদের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়াল, কোদাল, লোহার খুন্তি, দা ও চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের মূল অভিযুক্তসহ মোট ৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের ঘটনার পর পুলিশ এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিসএবি) নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন, হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার ও হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান টিটু প্রমুখ।
Comments
comments