কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে দাদনের টাকার জন্য বিলকিস বেগম (৪০) নামের এক ইটভাটা শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ নূর আলমকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা। গ্রেপ্তার মোঃ নূর আলম করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের ইন্দাচুল্লি গ্রামের মৃত মশ্রব আলীর ছেলে। নূর আলম গুনধর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সভাপতি। অন্যদিকে নিহত বিলকিস বেগম একই গ্রামের বাসিন্দা ইটভাটা শ্রমিক আব্দুল করিমের স্ত্রী।
রোববার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমাণ্ডার জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সবুজ রানা গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমাণ্ডার জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সবুজ রানা মামলার বরাত দিয়ে জানান, বিলকিসের স্বামী করিম গত বছর সুজনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা দাদন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। বাকি ৬০ হাজার টাকা তাঁরা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এই টাকার জন্য গত রোববার (০৬ আগস্ট) দুপুরে সুজনের ভাই নূরে আলম বিলকিসের বাড়িতে যান। তখন বিলকিসের স্বামী আব্দুল করিম বাড়ি ছিলেন না। পাওনা টাকা নিয়ে দুজনের কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে নূরে আলম ক্ষিপ্ত হয়ে বিলকিসকে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে বাড়ির সামনের পাকা রাস্তায় নিয়ে যান। তখন তাঁকে কিল, ঘুষি, লাথি মারাসহ লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। মারধরে বিলকিস জ্ঞান হারান। পরে বিলকিসের ছেলে মাসুম তাঁকে স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যান। এরপর হাসপাতালে নেয়ার পথে বিলকিস তার ছেলের কোলেই মারা যান। এ ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারিত হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, এ ঘটনায় গত রোববার (০৬ আগস্ট) রাতেই নিহতের ছেলে মাসুম মিয়া বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় সুজন মিয়া (৩৫) ও নূর আলমের (২৮) নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর সুজন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্ত নূর আলম গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। পরে অভিযুক্ত এই আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
তিনি আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত আসামির অবস্থান নিশ্চিত করে র্যাব-৩ এর সহায়তায় রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইট এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাতেই আটক অভিযুক্ত আসামিকে করিমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম সিদ্দিকী বলেন, অভিযুক্ত আসামি নূর আলমকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
Comments
comments