কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভাড়া বাসায় রিনা বেগম (৩৭) নামে এক নারী হোটেল শ্রমিককে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তারের পর আসামি আজমান হোসাইন শাকিল (২৩) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর দত্তের আদালতে এ স্বীকারোক্তি দেন তিনি। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে সোমবার (১৯ জুন) হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার কালাউক গ্রাম থেকে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে। শাকিল একই এলাকার জালাল মিয়ার ছেলে। অন্যদিকে নিহত রিনা বেগম শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার পশ্চিম টালকী এলাকার মৃত আঃ জব্বারের মেয়ে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন মঙ্গলবার (২০ জুন) রাত বারোটার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শাকিলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি জানান, ভৈরব বাজার টিনপট্টি এলাকায় জুয়েল মিয়ার বাসায় হোটেল কর্মী রিনা বেগম তার দুই ছেলে মোজাম্মেল (১৭) ও রিয়াজ (২০) এবং কথিত স্বামী দুলাল (৫৭) নিয়ে ভাড়া থাকত। ৬ মাস আগে রিনা বেগম ভৈরব বাজারে যে হোটেলে কাজ করতেন সেই হোটেলেই বাবুর্চীর কাজ নেয় শাকিল।
একই হোটেলে কাজ করার সুবাদে শাকিলের সাথে রিনা বেগমের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে তা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। গত ১৭ জুন সকালে শাকিল রিনা বেগমের বাসায় আসে। পরে রিনা বেগম ও তার দুই ছেলে এবং দুলাল কাজে চলে গেলে শাকিল রিনা বেগমকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলেন।
রিনা বেগম বাসায় আসলে শাকিল তাকে বলে, ‘ কথিত স্বামী দুলালের জন্য তার বিভিন্ন অসুবিধা হচ্ছে।’ এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে রিনা বেগম শাকিলের ওপর রাগান্বিত হয়ে ঘরে থাকা একটি ইট নিয়ে নিজেই নিজের মাথায় আঘাত করে। শাকিল রিনা বেগমকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও সে শান্ত হয়নি।
একপর্যায়ে শাকিল পিছন দিক থেকে হাত দিয়ে রিনা বেগমের গলায় চেপে ধরলে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য শাকিল রিনা বেগমের গলায় ওড়না প্যাচায় ও গিট দেয়। তারপর শাকিল নিহতের ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ও ১টি এলইডি টিভি মনিটর নিয়া চলে যায়। যেন এলাকার লোকজন মনে করে ঘটনাটি চুরির ঘটনা এবং চুরির কাজে বাধা দেয়ার কারণেই রিনা বেগম খুন হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন আরও জানান, এ ঘটনায় রিনা বেগমের কথিত স্বামী তারই মামাতো ভাই দুলালকে ওইদিনই আটক করা হয়। দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শাকিলের কথা জানা যায়। পরে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাকিলের দেয়া তথ্য মতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিহতের ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ও ১টি এলইডি টিভি মনিটর উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা রুপবানু খাতুন বাদী হয়ে ভৈরব থানায় এজাহার দাখিল করলে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।
Comments
comments