টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করছে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী, বাজিতপুর, কটিয়াদী, ভৈরব, তাড়াইল ও করিমগঞ্জ উপজেলার ৬২ ইউনিয়নে। প্লবিত হয়েছে ১৫০৭ বর্গ কিলোমিটার। পানি বিপদসীমার তিন ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে জেলা প্রশাসনের কর্মতৎপরতা প্রশংসনীয়। মাঠে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় চরাঞ্চলের মানুষজন। পানিবন্দি হয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ। গোখাদ্য ডুবে যাওয়ার কারণে গৃহপালিত পশু খাদ্য সংকটে ভুগছে। এমতবস্থায় ২৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন। আশ্রয়কেন্দ্রে ৩১৩৮টি পরিবারের বন্যা কবলিত ১২৭৪৮ জন মানুষ ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। গোখাদ্যসহ ২০৪৭টি গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কর্মতৎপরতায় খুশি বানভাসি মানুষ। চোখের জল মুছে দিতে বদ্ধপরিকর জেলা প্রশাসন। ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি ইউনিয়নের শহীদ বলেন, আমাদের ডিসি স্যার আমাদের দুর্দশা স্বচোখে দেখে গেছেন। আমরা যেন মানসিকভাবে ভেঙে না যাই। আমাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকতে বলছেন। ডিসি স্যার বলে গেছেন, খাদ্য এবং আশ্রয় নিয়ে আমরা যেন কেউ চিন্তা না করি। আল্লাহ উনার ভালো করুক।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ইতিমধ্যে ১২৭৪৮ জন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। তাদের জন্য শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০৪৭টি গবাদি পশু আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। পানিবন্দিদের সহযোগিতায় বন্যা কবলিত এলাকায় টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। মানুষকে উদ্ধারে পর্যাপ্ত নৌকা প্রস্তুত রাখাও হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বন্যা পরিস্থিতি সরজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছি। তারা সবাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আটটি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়নের ১৫০৭ বর্গ কিলোমিটার প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার বন্যার্তদের জন্য ১৪০ টন জিআর চাল, আড়াই লক্ষ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ছবি- সংগ্রহীত।