কিশোরগঞ্জে পুকুরের পানিতে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ বাদল রহমানের লাশ পাওয়া গেছে। রোববার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে সাতটায় জেলা শহরের কানিকাটা রেললাইনের পাশে বেপারি বাড়ির পুকুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের সদস্যরা। বাদল রহমান জেলার নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের ধীরুয়াইল গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে ও জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকার বাসিন্দা। তিনি কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বাদল রহমান শনিবার (০৮ জুলাই) রাতে বাসা থেকে বের হয়। পরে আর বাসায় ফেরেনি। রোববার সকালে কানিকাটা এলাকার বেপারি বাড়ির পুকুরে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর সনাক্ত হয় লাশটি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমানের।
বাদল রহমানের ছেলে নাবিল বলেন, শনিবার রাত সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে বাবা আমাকে ফোন দেন। বাবা আমাকে বলেন, ভালোভাবে পড়াশোনা করিস। ভালোভাবে চলাফেরা করিস।
বাদল রহমানের বড় ভাই আতাউর রহমান মিলন বলেন, বাদল শনিবার রাতে বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি। রোববার সকালে আমাকে একজন ফোন দিয়ে জানায় পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া গেছে। পরে আমি ঘটনাস্থলে যাই। এই মৃত্যুর ক্লু বের করার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ থাকবে। মিলনের দাবি, তার ভাইকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে রাখা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ থাকবে।
বাদল রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়শা আহমেদ জানান, শনিবার (০৮ জুলাই) রাত ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হন তার স্বামী। রাত ১১টার দিকে তার মোবাইল ফোনে কল করেও পাননি। পরে ভেবেছেন ছেলেদের বাসায় গেছে। এই ভেবে রাতে আর খোঁজ করেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল বলেন, বাদল রহমান আমাদের সংগঠনের একজন সক্রিয় নেতা। সকালে তার মৃত্যুর খবর শুনতে পাই। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমি তার মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। পুলিশকে অনুরোধ করব অধিকতর তদন্তের জন্য।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে রাত ৯টা ১৬ মিনিটে সর্বশেষ বাদল রহমানকে কিশোরগঞ্জের মেয়র পারভেজ মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কানিকাটা এলাকার দিকে যেতে দেখা যায়। আরও সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। অধিকতর তদন্ত চলছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও চিকিৎসক মাকসুদুর রহমানকে সভাপতি করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই জন হলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক চিকিৎসক ইমতিয়াজ ও কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক আলী আকবর।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও চিকিৎসক মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা তিন সদস্য কমিটির মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পানিতে ডুবে বাদল রহমানের মৃত্যু হয়েছে। এটা একটা সন্দেহজনক মৃত্যু তাই ভিসেরা নমুনা মহাখালীতে পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।
তিনি আরও জানান, ভিসেরা রিপোর্ট পেতে ১৫-৩০ দিন সময় লাগে। তবে এটা যেন দ্রুত দিয়ে দেয় এ বিষয়ে আমরা অনুরোধ করব।
Comments
comments