কিশোরগঞ্জে কথা কাটাকাটির জেরে মঞ্জিল মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ওই ব্যক্তির স্বজনদের সামনেই বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় নিহতের ভাতিজা মিজান ও ভাবি আছমা আক্তারকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। মিজান ও আছমা আক্তার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের দামপাটুলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মঞ্জিল মিয়া একই গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত মঞ্জিল মিয়ার ভাতিজা মিজান প্রতিদিনের মতো শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) তার মুরগির খামারে কাজ করতেছিল। এমন সময় গিয়াসউদ্দিন খামারে গিয়ে মিজানকে চোর বলে সম্বোধন করে। তখন মিজান তাকে চোর ডাকার প্রতিবাদ করে। এ সময় তাদের দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে গিয়াসউদ্দিনের ছোট ভাই সিরাজুল মিয়া মুরগির খামারে এসে মিজানকে চর থাপ্পড় দেয়। এ ঘটনা মিজান তার চাচা মঞ্জিল মিয়াকে জানালে তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। অন্যদিকে ওই পক্ষটিও চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে বিচার চান। পরে চেয়ারম্যান দুটি পক্ষকেই আশ্বস্ত করেন ‘রাতটা কাটাও শনিবার সকালে এ ঘটনার বিচার করব।’ শনিবার সকালে সিরাজুল মিয়া ও গিয়াসউদ্দিনসহ ৮ থেকে ১০ জন বিচার সালিসে না গিয়ে মঞ্জিল মিয়ার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে মঞ্জিল মিয়াকে পেয়ে ধারালো দা দিয়ে কোপায়। পরে স্থানীয়রা মঞ্জিল মিয়াকে উদ্ধার করে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও গুরুতর জখম হওয়ায় মঞ্জিল মিয়াকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে মঞ্জিল মিয়ার ভাতিজা মিজান ও আছমা আক্তার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নিহতের ভাগ্নে ইসরাইল মিয়া বলেন, সিরাজুল মিয়া ও গিয়াসউদ্দিন আমাদের গ্রামের ধনী লোক। শুক্রবারের ঘটনার পর তারা এলাকাবাসীদের বলছিল কয়েক কাঠা জমি বিক্রি করে হলেও এদের দেখার আছে। সিরাজুল মিয়া ও গিয়াসউদ্দিনসহ ৮ থেকে ১০ জন দিনদুপুরে আমার মামার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে আত্মীয় স্বজনদের সামনেই কুপিয়ে হত্যা করে। তারা গ্রামের প্রভাবশালী লোক। আমরা নিরীহ মানুষ। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
যশোদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ সুলতান রাজন বলেন, দুটি পক্ষকেই বলা হয়েছিলো আমরা বিচার সালিস করব। তারপরও একটি পক্ষ বাড়িঘরে হামলা চালায় এবং মঞ্জিল মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীব কুমার ঘোষ বলেন, মঞ্জিল মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনলে আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করি বাঁচাতে। কিন্তু তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আর মিজান ও আছমা আক্তারকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে।
Comments
comments
