কিশোরগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোঁড়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক ফজলু, সহকারী উপপরিদর্শক খাজা মাইনুউদ্দিন ও আসাদসহ পুলিশের ১০ জন সদস্য ও বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ ৭৭ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়ে ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদের পিকআপটি ভাঙচুর করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে জেলা শহরের রথখলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নেওয়া পদযাত্রা অংশ নিতে সকাল থেকে নেতা-কর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে জড়ো হয়। সেখানে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমসহ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। তারা বক্তব্যে বলেন, “মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরোনো স্টেডিয়ামে মিলিত হবেন।” এরপর সোয়া ১২টার দিকে পদযাত্রার বদলে বিশাল মিছিল নিয়ে গুরুদয়াল কলেজ মাঠ থেকে শহরের রথখলা এলাকায় এসে পুরোনো স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করে। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ থাকলেও শুরুতে পুলিশকে শান্ত থাকতে দেখা যায় এবং মিছিলে কোনোরকম বাঁধা দেয়নি। তবে মিছিলটি যখন আখড়া বাজার মোড় অতিক্রম করে ঈশাঁ খা সড়কের রথখলা দিকে আসতে থাকে তখন এ সড়কের নূর মসজিদ পাশে পুলিশ ঐতিহাসিক রথখলা মাঠে মিছিলটি ঢোকার কথা বলে। এ সময় জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে বেরিকেড ভেঙে সামনে আগানোর চেষ্টা করে তখন মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হাজার হাজার ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এসময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানো গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট শহরের রথখলা থেকে আখড়াবাজার এলাকা পর্যন্ত দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদের সরকারি পিকআপ ভাঙচুর করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম আহত হন।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আইনজীবী ফয়জুল করিম মুবিন, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী মোস্তফা তাজবির, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুজ্জামান পাৰ্ণেল, পল্লী ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার মুসা তানহা, সদর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সৈয়দ শাহ আলম, নিকলী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাফিউল ইসলাম নওশাদসহ কমপক্ষে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং হামলা চালায়। আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, বিএনপির কর্মসূচি ছিল গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে রথখলা ময়দান পর্যন্ত। পুলিশ বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি। বিএনপির লোকজন পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়ে এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
Comments
comments