কিশোরগঞ্জের একটি বসতবাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দিবাগত রাত দুইটার দিকে সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের সাদুল্লারচর এলাকায় আবুল হাশেম মাস্টারের বসতবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় জনতা ৫ ডাকাতকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
আটককৃতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই পাটধা কাঠালিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মোঃ সেলিম মিয়া, করিমগঞ্জ উপজেলার চরকুরুমসি গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুর রহমান, নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার বালাপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মোঃ আসলাম (২৫), একই উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামের বাছেরের ছেলে সবুজ (৪০), নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের দিরুল ইসলামের ছেলে আল আমিন মিয়া (৪০)।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, গতকাল মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে সবুজ নামে এক ব্যক্তি তাদের দোতলা বাসার নিচ তলা ভাড়া নিতে আসে। তখন কৌশলে সে বাসাটি দেখে নেয়। রাত ৯টার দিকে সবুজ ফোন দিয়ে বলে আপনাদের বাসাটি ভাড়া নিব। ভাড়া নেয়ার জন্য আপনারা যে কাগজপত্র চেয়েছেন তা রেডি করেছি। তখন আচ্ছা ঠিক আছে বলা হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে খাওয়া দাওয়া করে পরিবারের সদস্যরা শুয়ে পড়ে।
রাত ২টার দিকে নিচতলার কেচি গেটের তালা ভেঙে দোতলা বাসার দরজার লক ভেঙে ঘরে ঢুকে অস্ত্রসহ ৮-১০ জনের একটি ডাকাত দল। ঘরে ঢুকেই অস্ত্র ঠেকিয়ে আবুল হাশেম মাস্টারের স্ত্রীর গলা থেকে দেড় ভরির স্বর্ণের চেইনটি টান দিয়ে নিয়ে নেয়। তারপর সবাইকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মোট তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৪২ হাজার টাকা, ১৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন লুট করে। পরে ৮-১০ জনের ডাকাত দল বাসা থেকে বের হলে আবুল হাশেম মাস্টারের ছেলে মিজানুর রহমান নিচে এসে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ধাওয়া করে ৫ জনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। অন্যরা তখন পালিয়ে যায়।
আবুল হাশেম মাস্টারের ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, সবুজ নামের লোকটা যখন বাসা ভাড়া নিতে আসে তখন আমি বাসায় ছিলাম না। আমার ছেলে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা বাসায় ছিলো। সবুজ নামের লোকটা আমাদের এলাকার জাহিদ চাচার পরিচয় দিয়েছিলো। জাহিদ চাচাও আমার সাথে ফোনে কথা বলে সবুজকে আত্মীয় পরিচয় দেয়। রাতে আমি গ্রুপকলে একটি মিটিং শেষ করে শোয়ার পর নিচতলার কেচি গেটের তালা ভেঙে দোতলা বাসার দরজার লক ভেঙে ঘরে ঢুকে অস্ত্রসহ ৮-১০ জনের একটি ডাকাত দল। এতোটা হিংস্র ছিলো তারা বলে বুঝাতে পারবো না। তাদের হিংস্রতার সামনে আমি আত্মসমর্পণ করে বলি মোবাইলটা ছাড়া বাকি সব নিয়ে যান। এই মোবাইল নিলে আমি পঙ্গু হয়ে যাব।
মিজানুর রহমান বলেন, মালামাল লুট করে বাসা থেকে বের হয়ে পড়লে আমি পিছন পিছন বের হই। বের হয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিতে থাকি। ডাকাত দলের সদস্যরা তখন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো। আমি কিছুক্ষণ পর শুনতে পাই গ্রামবাসী ডাকাত দলের ৫ জনকে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গেলে আমার ছেলে বলে আব্বা এই লোকটাই দিনে বাসা ভাড়া নিতে আসে। আমি চিনছি আব্বা এই লোকটাই আসছিলো।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মফিজুর রহমান বলেন, ১ জনকে আমরা রিলিজ দিয়ে দিছি। ১ জন অবজারভেশনে আছে। বাকি তিনজনকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।
Comments
comments