ঢাকারবিবার , ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. দেশজুড়ে
  3. পজিটিভ বাংলাদেশ
  4. ফটো গ্যালারি
  5. ফিচার
  6. ভিডিও গ্যালারি
  7. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রিজন ভ্যান থামিয়ে মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা, ১১ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রতিবেদক
Kolom 24
সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ছাগল কাণ্ডের ঘটনায় আলোচিত এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান কারাবন্দি অবস্থায় নরসিংদী নিরালা হোটেলে বিশেষ এক ব্যক্তির সাথে গোপন বৈঠকের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এক এসআইসহ ১১ পুলিশ। শনিবার এক অফিস আদেশের মাধ্যমে তাদের বরখাস্ত করা হয়। আদালত থেকে কারাগারে ফেরার পথে নরসিংদী নিরালা হোটেলে এক ঘন্টারও বেশি সময় গোপন বৈঠকের সুযোগ দেয়ার অভিযোগে ১১ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন  কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বরখাস্তকৃতরা হলেন এসআই আবুল কাশেম, কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, মো. কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, মো. রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভির রহমান, মো. আবু সাইদ মিয়া ও রবীন্দ্র দাস।

জানা গেছে, গত ১২ আগষ্ট আলোচিত মতিউরকে কিশোরগঞ্জ কারাগার হতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দুর্নীতির মামলা শুনানির জন্যে নেয়া হয়। শুনানি শেষে কারাগারে ফেরার পথে মতিউরকে বহনকারী গাড়িটি নরসিংদীর নিরালা হাড্ডি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে বিকেল ৫.১৮ মিনিট হতে ৬.০৮ মিনিট পর্যন্ত যাত্রা বিরতি করে। যাত্রা বিরতির সময় কার্যত দেখা যায় মতিউর হোটেলের একটি কক্ষে অপর এক ব্যক্তির সাথে একান্তে বৈঠক করেন। যাত্রা বিরতির নামে প্রায় এক ঘণ্টা তারা গোপন বৈঠক করেন। ঐ কক্ষে কোন নিরাপত্তা কর্মী ছিল না। মতিউর কার সাথে দেখা করেছেন তাঁর পরিচয় খুঁজে বের করা এবং কি কারণে তাঁদের এই মিটিংয়ের আয়োজন সেটাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফুটেজটি যাচাই করে দেখা যায়, বিকেল ৫.১৮ মিনিটে মতিউরকে বহনকারী পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান এবং প্রিজন ভ্যানের সাথে আসা পুলিশের এসকর্ট গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। এবং হাতকড়া ছাড়াই মতিউরকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হয়।

হোটেলের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন সাদা টি-শার্ট, জিন্স ও কালো রঙের জুতা পরিহিত একজন ব্যক্তি (৫.১৯.১৬ সেকেন্ড টাইম কোড দেখুন), মতিউরকে আনা হচ্ছে দেখেই তিনি হোটেলের একটি ভেতরের কক্ষে ঢুকে পড়েন, এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ সদস্যরা মতিউরকেও সেই কক্ষে প্রবেশ করিয়ে বাইরে অবস্থান করেন (৫.১৯.৪২ সেকেন্ড টাইম কোড দেখুন)।

এরপর ৬.০৬.১৯ সেকেন্ডে, মতিউর সেই সাদা টিশার্ট পরিহিত ব্যক্তির কাঁধে হাত দিয়ে সেই কক্ষ হতে বের হন, এবং বেশ স্বাভাবিকভাবে মতিউর প্রিজনভ‍্যানের দিকে এগিয়ে যান, এবং তাঁর আশেপাশের সকল পুলিশদের বডি ল‍্যাংগুয়েজ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে, সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান সম্পূর্ণ পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন।

ঠিক ৬.০৬.৫৬ সেকেন্ডে সাদা টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি মতিউরকে আলিঙ্গন করে প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে বিদায় জানান, ৬.০৮.৫০ সেকেন্ডে এসকর্ট গাড়ি সহ, প্রিজনভ‍্যানটিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে দেখা যায়।

পুলিশ অফিস আদেশে বলা হয়েছে, অত্র জেলার নিম্নবর্ণিত পুলিশ সদস্যগণ পুলিশ লাইন্স এ কর্মরত থাকাকালে এএসআই/এমআই (ফোর্স) অফিসের ঘট সিসি নং-২৮৩/২৫, তারিখ-১২/০৮/২০১৫ খ্রি. মূলে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে হাজতি মতিউর রহমানকে বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ, ঢাকায় হাজির করার জন্য রওনা করেন। হাজতি আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা প্রদান শেষে ফিরতি পথে নিম্নবর্ণিত পুলিশ সদস্যগণের সমন্বয়ে গঠিত স্কট দল কোনো স্থানে দুপুরে খাবার খাওয়ার যাত্রাবিরতি করেন।

এতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানায়, দলের সদস্যগণ হাজতিকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের শর্তে উৎকোচ গ্রহণ করেন। এ সংক্রান্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনপূর্বক বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করে। দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্ণিত হাজতি মতিউর রহমানকে আদালতে হাজিরা প্রদানের পর ফেরত আনার সময় স্কর্ট ডিউটি অফিসার ও ফোর্স কর্তৃক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

এতে আরো বলা হয়েছে, হাজতি মতিউর রহমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার হতে ঢাকায় আদালতে হাজির করা হয় এবং হাজিরা শেষে তাকে ফেরত আনার পথে যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রাবিরতির সময় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্কর্ট ইনচার্জের ব্যবস্থাপনায় হাজতিকে আলাদা কক্ষে বসিয়ে খাবার খাওয়ানো হয় এবং অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা বাইরে সাধারণ স্থানে খাবার গ্রহণ করেন। হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানো প্রচলিত স্কর্ট ডিউটির শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং ইনচার্জের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তারা উপস্থিত থেকেও হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানোর অনিয়ম প্রতিরোধে উদ্যোগ নেননি, যা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার ইঙ্গিত বহন করে।সার্বিকভাবে পর্যলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানোর ঘটনা সত্য এবং এটি স্কর্ট ডিউটির শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

অফিস আদেশে বলা হয়, নিম্নবর্ণিত অফিসার ও ফোর্সগণের উপরোক্ত কার্যকলাপ বিভাগীয় নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থী, অসৎ উদ্দেশ্য, অসদাচরণ ও জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করায় নিম্নবর্ণিত অফিসার ও ফোর্সগণকে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩ এর প্রবিধান ৮৮০ মোতাবেক অদ্য ০৬/০৯/২০২৫ খ্রিঃ পূর্বাহ্নে ‘চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত’ করা হলো। সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন তারা বিধি মোতাবেক বেতন ও ভাতাদি আহরণ করবে। তাছাড়া সাময়িক বরখাস্তকালীন পুলিশ লাইন্সে সার্বক্ষণিক হাজির থেকে সাদা পোশাকে নিয়মিত রোলকল দিবেন এবং পিটি, প্যারেডে হাজির থাকবেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেউ ভুল করলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমার কাছে এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স।

Comments

comments