ঢাকাবুধবার , ১৬ আগস্ট ২০২৩
  1. অন্যান্য
  2. দেশজুড়ে
  3. পজিটিভ বাংলাদেশ
  4. ফটো গ্যালারি
  5. ফিচার
  6. ভিডিও গ্যালারি
  7. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রয়োজনে রক্ত দিব তবু বেড়িবাঁধ হতে দিব না

প্রতিবেদক
Kolom 24
আগস্ট ১৬, ২০২৩ ১১:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে ফসলি জমি রক্ষা ও প্রস্তাবিত মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে প্রকৃত কৃষক, শ্রমিক, জেলে সমন্বিত জোটের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৬ আগস্ট) সকালে উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের মৌগাঁও এলাকায় দাউদপুর, বাঁশহাটি, ডুরিয়াপাড়া, মৌগাঁও, মোড়ারকান্দি, মেছগাঁও, শিমুলহাটি, গগড়া এবং আতকাপাড়া গ্রামের হাজার খানেক কৃষক ও জেলে এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে কৃষক আফজাল হোসেন আজম, জাহাঙ্গীর হাসান ভূইয়া, হাবিবুর রহমান, সাইদুল ইসলাম মঞ্জু, আবুল হাসান রতন, আকাশ আহমেদ লুৎফর, এরশাদ মিয়া, আবুল কাশেম, জেলে আসামুদ্দিন, বজলুর রহমান হুশিয়ার দিয়ে বলেন, কার স্বার্থে ও কিভাবে এ বেড়িবাঁধ করতেছে তা আমরা জানি না। আমরা না খেয়ে মারা যাবো এ বেড়িবাঁধ হলে। প্রয়োজনে রক্ত দিব তবু এখানে বেড়িবাঁধ হইতে দিব না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শিমুলহাটি ঈদগাহ ব্রিজের উত্তর পার্শ্ব থেকে সুতি নদীর পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে দাউদপুর আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত ৮.৬ কি.মি দৈর্ঘ্যের বেড়িবাঁধের প্রস্তাব জমা হয়েছে। এই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এজেন্সি (জাইকার) তদারকি করবে।

স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাড়াইলের বৃহত্তম শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত ‘নামার হাওর’। শিমুলহাটি গ্রামে সুতি নদী খননের আগে এক ফসল হতো নামার হাওরে। নদীটি খননের পর নামার হাওরের হাজার হাজার একর জমিতে দুই থেকে তিন ফসল হয়। নদীটি খননের কারণে এ হাওরাঞ্চলে স্থায়ী কোন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না। ৫টি ওয়ার্ডের বিশাল হাওরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বাস। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী, বর্গাচাষী, মৌসুমী জেলে ও প্রকৃত জমির মালিক রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। সম্প্রতি একটি স্বার্থন্বেষী মহল বেড়িবাঁধ ও মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে ৯টি গ্রামের ফসলি জমি নষ্ট করতে চাচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ভূমি অধিগ্রহণ, জাতীয় পানি নীতিমালা ও নদী রক্ষা আইনের সহিত সাংঘর্ষিক। সদ্য খননকৃত নদীর তীর ঘেঁষে বাঁধটি হলে নদী তার পানি প্রবাহ হারাবে। যে হাওরে সেচ ও নিষ্কাশনে কোন ফসলি জমি রক্ষা বাঁধের আদৌ প্রয়োজন নেই সেখানে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে বৃহত্তর ফসলি হাওর বিনষ্ট করা মানে কৃষক হত্যা, নদী হত্যা করার নামান্তর।

প্রতিবাদ সমাবেশে কৃষক ও জেলেরা বলেন, বিশাল এ হাওরে ৩০ হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে ৷ এখানে অদ্যাবধি দুটি ফসল হচ্ছে। কারণ জাইকা ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সুতি নদী খনন করেছে। এখন যদি ৮.৬ কি.মি দৈর্ঘ্যের বেড়িবাঁধ হয় তাহলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। যারা নিজেদের ফায়দার জন্য বেড়িবাঁধ ও মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প করবে তারা ঘরে ঘরে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ করাবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জাইকার কাছে যে প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে তার সভা হয়েছে ২৬টি। অবহিতকরণ সভা, অংশ গ্রহণ সভা, অংশিদারিত্ব কিংবা বাস্তবায়ন কমিটিতে প্রকৃত জমির মালিকদের অত্যন্ত সু-কৌশলে এড়িয়ে গেছে ঐ প্রভাবশালী মহল । কারন তারা জানে প্রকৃত জমির মালিকদের ডাকলে প্রথমেই বাঁধার মুখে পড়বে তারা। আমরা ফসলি জমি বিনষ্ট হতে দিবোনা। প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিভিন্ন অংশগ্রহণ, সুবিধা ভোগী ও বাস্তবায়ন কমিটিতে ভাড়াটে, ভুয়া কৃষকদের নাম সম্বলিত করেছে। যারা ভিন্ন গ্রামের ভিন্ন ভিন্ন আজ্ঞাবহ লোক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৯টি গ্রামের মানুষ সর্বশান্ত ও বেকার হয়ে পড়বে। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা হবে স্থায়ী বেকার। হাওরে অবস্থিত দাউদপুর, নওগাঁ, মৌগাও এবং মেছগাঁও এর ৪টি সরকারি আবাসন প্রকল্পের বসবাসরত ৪০০টি পরিবার কোথায় যাবে? যারা হাওরে শ্রমভিত্তিক জীবনযাপন করে। তাদের জন্যও এটা মরণফাঁদ। এ কারণে গত ৩১ জুলাই আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন করেছি।

জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আহমেদ উল্লাহ বলেন, প্রস্তাবিত বাঁধ বাস্তবায়ন হলে অত্র এলাকার কয়েক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং এলাকায় নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃস্টি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, প্রকল্পটি আমাদের না। অন্য কোনো সংস্থা মনে করছে।

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশের আলোকে ও ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক রেজুলেশন দিয়ে অনুমোদনের প্রেক্ষিতে জাইকা কতৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পটি ফিজিবিলিটি রিপোর্ট প্রাপ্তির পর প্রকল্পটি জনগণের উপকারে আসবে বিধায় এটি গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাঁদের আবেদন আমি পেয়েছি। তাদের আবেদনের যৌক্তিকতা কি তা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।

Comments

comments