কিশোরগঞ্জে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মাসুদ (২৪) তার বন্ধু সোহান আহমেদ আলিফকে (২৩) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার (০২ এপ্রিল) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল আমিনের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এর আগে রোববার (০২ এপ্রিল) সকালে সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের ভাস্করখিলা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার মাসুদ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটি গ্রামের মফিজ মিয়ার ছেলে। রোববার (০২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মাসুদ ও আলিফ একই এলাকার এবং বন্ধু। তারা একসাথে মাদক সেবন করতেন। সম্প্রতি মাসুদ তার বোনের ছেলের জন্য রুপার বিছা কিনেন। মাসুদের বোনের ছেলের জন্য কেনা ওই রুপার বিছা এবং নগদ সাড়ে তিন হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায় বলে সোহান আহমেদ আলিফকে সন্দেহ করেন। আলিফকে অনেক বার বলার পরেও চুরির বিষয় স্বীকার করেনি। পরে বোনের ছেলের জন্য কেনা রুপার বিছা ও নগদ সাড়ে তিন হাজার টাকা উদ্ধারের জন্য গত ২০ মার্চ দোকান থেকে মো. অন্তরকে (১৯) দিয়ে ডেকে নিয়ে যায় মাসুদ। পরে রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটি গ্রামের মতি মিয়ার পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে তারা ঘুমের ওষুধ দিয়ে তৈরি ঝাকি নামক মাদক সেবন করে। এ সময় মাসুদ কৌশলে কম মাদক সেবন করে। পরে আলিফকে নিয়ে উলুহাটির বন্দে নিয়ে যায় মাসুদ ও তার সহযোগীরা।
তিনি বলেন, উলুহাটির বন্দে নিয়ে গিয়ে আলিফকে রেন্টি গাছের ডাল ভেঙে পিটানো শুরু করে মাসুদ এবং চুরি করা রুপার বিছা দিতে বলে। আলিফ অস্বীকৃতি জানালে বেধড়ক পিটায় মাসুদ ও তার সহযোগীরা। বেধড়ক মারধরের ফলে আলিফ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আলিফের মৃত্যু হলে আসামিরা বাড়ি থেকে দুটি কোদাল এনে মাটি খুঁড়ে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মাটিতে পুতে রাখে। আসামি মাসুদকে গ্রেপ্তারের পর তার দেখানো মতে হত্যার পূর্বে সেবনকৃত ঘুমের ট্যাবলেটের খালি পাতা, খালি কাশির সিরাপের বোতল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লাঠি ও লাশ গুম করার জন্য গর্ত খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত দুটি কোদাল উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
এর আগে পরিবারের লোকজন সোহান আহমেদ আলিফকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে গত ২৮ মার্চ তাঁর মা হাওয়া আক্তার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে গত বুধবার সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটির বন্দে গাউসুল আজম গোরস্তানের বরাদ্দকৃত জায়গা থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিখোঁজ হওয়া সোহানের মা লাশের পরনে কালো রঙের জিনস প্যান্ট ও কোমরে কালো রঙের বেল্ট দেখে নিশ্চিত হন এটি তাঁর ছেলের মরদেহ। পরে গত বৃহস্পতিবার হাওয়া বাদী হয়ে পাঁচজনের নামসহ ছয়-সাতজনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই পুলিশ এজাহারনামীয় আসামি হুমায়ুন ও আনন্দকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে আলিফ হত্যা মামলার মূল আসামি মাসুদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।
Comments
comments