ঢাকাশুক্রবার , ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. দেশজুড়ে
  3. পজিটিভ বাংলাদেশ
  4. ফটো গ্যালারি
  5. ফিচার
  6. ভিডিও গ্যালারি
  7. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভারতে আটক কিশোরগঞ্জের হিন্দু পরিবারের মিথ্যা দাবি, যা জানা গেল

প্রতিবেদক
Kolom 24
ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪ ১১:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কিশোরগঞ্জে অত্যাচারের মুখে ১০ সদস্যের একটি হিন্দু পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে দাবিতে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম। এসব সংবাদমাধ্যমে ওই পরিবারের একজনের সাক্ষাৎকারও দেখানো হচ্ছে। সেই সাক্ষাৎকারে এক ব্যক্তি নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিয়ে দাবি করছেন, তিনি বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারের মুখে ভারতে আশ্রয় নিতে দেশ ছেড়েছেন।

ভারতে আটককৃতরা হলেন, সুধীর চন্দ্র সরকার (৭৭), তাঁর ছেলে শংকর চন্দ্র সরকার (৪০), শংকর চন্দ্র সরকারের স্ত্রী সারথি চন্দ্র সরকার (৩৫), মেয়ে সুবর্ণা রাণী সরকার (১৭), শ্যামলী রাণী সরকার (১২), সংগীতা রাণী সরকার (১০), ছেলে চন্দ্র সেন সরকার (৫), ভাই মনোধীর সরকার (৩৫), মনোধীর চন্দ্র সরকারের স্ত্রী গীতা রাণী সরকার (২৫), মেয়ে চম্পা রাণী সরকার (৪)। তাঁরা সবাই জেলার ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের করঞ্চা বড়হাটি গ্রামের বাসিন্দা।

এদিকে কিশোরগঞ্জে ওই ব্যক্তির এলাকায় সরেজমিন ঘুরে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। জানা গেছে, তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে শংকর চন্দ্র সরকার বড়। তাঁর মধ্যে সবার ছোট ভাই সুজিত চন্দ্র সরকার তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও মা মাইতারা চন্দ্র সরকারকে নিয়ে ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের করঞ্চা বড়হাটি গ্রামে বসবাস করছেন। শংকর চন্দ্র সরকার ও তার পরিবারের আদি নিবাস সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার আবদা গ্রামে। প্রায় ২০ বছর আগে ইটনা এলাকায় এসে তাঁরা বসবাস শুরু করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শংকর চন্দ্র সরকার তার বড় মেয়ে সুবর্ণা সরকারকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকায় থাকতেন। তিনি অটোরিক্সা চালাতেন এবং তার মেয়ে সুবর্ণা পৌর মহিলা কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রায় দুই মাস পূর্বে শংকর তার অটোরিক্সাটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন এবং মেয়েকে নিয়ে নিজ গ্রামে চলে আসেন। গত ৪ ডিসেম্বর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে নিজ বাড়ি হতে বের হয়ে প্রথমে হবিগঞ্জ এরপর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বর্ডার ক্রস করে ভারতে প্রবেশ করেন। শংকর চন্দ্র সরকার এর মামা রোহিনী (মাইতারা রাণী সরকারের ভাই) কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ হতে ভারতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

সুর্বনা চন্দ্র সরকারের বান্ধবী রিমা রাণী দাস। তাঁরা একই সাথে পৌর মহিলা কলেজে পড়াশোনা করতেন। তিনি বলেন, বত্রিশ এলাকার মুক্তি স্মরণী সড়কে পৌর মহিলা কলেজের সাথেই ডাক্তার তাহেরের বাসায় ভাড়া থাকতেন সুর্বনা। সে খুবই ভালো মেয়ে। সুর্বনা বলতো তাঁরা খুবই গরিব। তাঁর বাবা কিশোরগঞ্জ থেকে গাড়ি চালাতো। তবে কোথায় থাকতো তা জানি না। শুনছিলাম তাঁর বাবাকে গ্রামের হিন্দুরা মারছিলো।

এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে শংকর চন্দ্র সরকার তাহাকে ও তার পরিবারকে অত্র ধনপুর এলাকায় মুসলমান সম্প্রদায় কর্তৃক ক্রমাগত হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্য নয়। এছাড়া ধনপুরের করঞ্চা বড়হাটি গ্রামে বসবাসরত সকলেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

ছোট ভাই সুজিত সরকার বলেন, শংকর বাড়িতে এসে বলে, “এই দেশ গাড়িঘোড়া চলে না, মানইজ্জত থাকে না। এই দেশ আর থাকতাম না।” আমি তখন বলি, “আরে শহরে গেছো, এইটা এখন বাড়িতে আইসা দেখাও এইটাতো হইতাছে না।” এটা নিয়া অনেক বুঝাইলাম কিন্তু ভাইয়ে বুঝছে না। গ্রামেতো কোনো ঝামেলা নাই। একই বাড়িতে থাকলেও আমরা পৃথকভাবে থাকি। আমার স্ত্রী গর্ভবতী। আমি আমার মাকে জোর করে রাখি। মাও ওদের সাথে চলে যেতে চাইছিলো। আমার ভাই ওইখানে গিয়ে কেনো এসব বললো তা বলতে পারি না। ভাই, বাবা সবাই মিলেই গেছে। আমিতো ওদের অনেক বুঝাইছি।

ধনপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরিচরণ দাস বলেন, শংকরশ পরিবারের ১০ জন সদস্য ভারতে গেছে এটা সঠিক। আমার ওয়ার্ডে কোনো অত্যাচার নাই। কোনো ঝামেলা নাই। আমার ওয়ার্ডে কোনোদিন শংকরকে কোনো মুসলমান ভাইয়ে আক্রমণ করে নাই। অন্যকোনো জ্বালা যন্ত্রণাও আমার ওয়ার্ডে নাই। শংকর কিশোরগঞ্জ শহরে অটোরিকশা চালাতেন ওইখানে কিছু ওই জায়গায় কিছু হইছে কিনা আমি জানি না।

স্থানীয় রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি বিপু লাল বলেন, শংকর কিশোরগঞ্জে ৩ বছর যাবত গাড়ি চালাতেন। সরকার পতনের পরে শংকর এসে বলতেছে দেড় লাখ টাকার গাড়ি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে এসেছি। এ দেশে আর থাকবো না। কেনো ভারত চলে যাবে তাও বলেনি।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নারায়ণ দত্ত প্রদীপ বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি ওই পরিবার তাদের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে স্বইচ্ছায় দেশত্যাগ করেছে। কেউই তাদের নির্যাতন করে নাই। আর আমার কমিউনিটি থেকেও এই পর্যন্ত আমি কোনো অভিযোগ পাইনি।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ওই ব্যক্তির দাবি সঠিক নয় বলে জেনেছি। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম এবং আইনি সহায়তা প্রদান করতাম।

Comments

comments