চাহিদা মতো ঘুষ না পেয়ে ভৈরবের মেঘনা নদীতে এসে ইজারাদারের বৈধ ড্রেজার জব্দ ও দুই শ্রমিককে কারদণ্ড দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়ার বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় ভৈরবের সীমানায় ঢুকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন আশুগগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এসময় তিনি ৪টি ড্রেজার ও ৫টি বাল্কহেড জব্দ করে দুই শ্রমিককে ১বছর কারাদণ্ড দেন এবং দুই দিনের বালু উত্তোলনের জমা ১১লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইজারাদার মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী তানভীর আহমেদ নাগিব। এঘটনায় আজ শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভৈরব প্রেসক্লাব মিলনাতয়নে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী।
লিখিত অভিযোগে ইজারাদার তানভীর আহমেদ নাগিব বলেন, চলতি বছরের ১৪মে ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর, লুন্দিয়া ও টুকচানপুর এলাকায় ১৬১০ একর জায়গায় বালু উত্তোলনের ইজারা দেয় কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক। পরে প্রশাসন বালু উত্তোলনের জন্য সীমানা নির্ধারণ করে দিলে নিয়ম মেনেই বালু উত্তোলন করছেন তারা। কিন্তু আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া বালু উত্তোলনের শুরু থেকেই বিভিন্নভাবে বাধা প্রয়োগের চেষ্টা করে। বালু উত্তোলন করতে হলে ইউএনওকে প্রতিদিন ১লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তাঁর চাহিদা মতো ঘুষ না দেয়ায় প্রশাসনিক সীমা লঙ্ঘন করে ভৈরব প্রান্তে এসে কিছুদিন পরপরই অবৈধভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এই পর্যন্ত ১৪টি ড্রেজার জব্দ ও ১টি বাল্কহেড জব্দ করে এবং ৭জন শ্রমিককে ধরে নিয়ে শারিরিক নির্যাতন কওে স্বীকারোক্তি আদায় করেন। গত ২ সেপ্টেম্বর ৪টি ড্রেজার ও ৫টি বাল্কহেড জব্দ করে দুই শ্রমিককে ১বছর কারাদণ্ড দেন এবং দুই দিনের বালু উত্তোলনের জমা ১১লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এতে করে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। সরকারকে বিপুল পরিমান রাজস্ব জমা দিয়ে বৈধভাবে বালু উত্তোলনেও আশুগঞ্জ প্রশাসন বাধা ও হয়রানি করায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। তাছাড়া তিনি আক্রোসে ভৈরবের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট বাধা ও ইউএনওকে অপহরণের মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা করেছন।
এছাড়াও তিনি বলেন, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন টেন্ডারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ইজারা দিয়েছেন। সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করেই বৈধভাবে বালু উত্তোলন করছি। অথচ কোন রকম নিয়ম অনুসরণ না করেই আমাদেও ব্যবসারক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে প্রকল্পের কিছু অংশের ঠিকাদার মীর আক্তার কোম্পানীর পক্ষে কিছু ব্যক্তিকে বালু উত্তোলনের জন্য অনুমতি দেয় মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য। আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেও ওই ইজারার দখল নামার বিষয়ে কোন সুদোত্তর পায়নি। পরে আমরা মীর আক্তার কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেন। এসময় ভুক্তভোগী আশুগঞ্জের ইউএনও রাফে মোহাম্মদ ছড়ার এধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিচার দাবি করে তার প্রত্যাহার চেয়েছেন।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ভৈরবে সীমানা রেখে আশুগঞ্জ সীমানায় বালু উত্তোলন করার সময় গগুল ম্যাপে নিশ্চিত হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। এসময় ৪টি ড্রেজার ও বাল্কহেড জব্দসহ জড়িত দুইজনকে আইন মোতাবেক সাজা দেয়। মোবাইল কোর্ট চলাকালীন সময় অবৈধ পহ্নায় বালু উত্তোলনকারীদের লোকজন স্পীড বোর্ডে এসে সরকারি কাজে বাধা ও হামলা করে জব্দকৃত একটি ড্রেজার ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। এঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান ইউএনও।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন বলেন, আমাদের সবারই প্রশাসনিক একটি সীমানা রয়েছে। মেঘনা নদীর একপাশে ভৈরব এবং অন্য পাশে আশুগঞ্জ। দুই উপজেলার জন্যই নদীর সীমানা রয়েছে। বৈধ ইজারাদার যারা তারা তাদের নির্ধারিত অংশে বালু উত্তোলন করতে পারবে। সীমানার বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারা যার যার সীমানা বজায় রেখে বালু উত্তোলন করবে। আইনশৃংখলা বজায় রাখার জন্য আমার প্রশাসনিকভাবে নদীতে নিয়মিত তদারকি করছি এবং অভিযানও অব্যহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৪মে, কিশোরগঞ্জ জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তে ভৈরব উপজেলার “মেঘনা নদী বালুমহাল” ১৩কোটি ৫৫লাখ ৫০হাজার টাকার ইজারামূল্যে ইজারা প্রদান করেন মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ১৪৩২বাংলা সনের ৩০চৈত্র পর্যন্ত, ইজারা মূল্যবাবদ ১৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা তৎসহ ইজারা মূল্যের উপর ১৫%ভ্যাট বাবদ ২ কোটি ৩ লাখ ৩২ হাজাএ ৫০০ টাকা ও ১০% আয়কর বাবদ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১৬ কোটি ৯৪লাখ ৩৭হাজার ৫শত টাকা পরিশোধে চুক্তির মাধ্যমে ভৈরব উপজেলার মেঘনা নদীর সাদেকপুর, লুন্দিয়া ও টুকচানপুর এলাকায় ৯টি দাগে ১৬১০ একর ভুমি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ইজারাদারকে দখল বুঝিয়ে দেন। দখল বুঝে পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মেঘনা নদীতে তাদের দখলীয় স্থানে গত কয়েকমাস ধরে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন।
Comments
comments