দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের ৬টি আসনের মধ্যে ১,২ ও ৫ আসনের সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এই ৩টি আসনে নির্বাচন উপলক্ষে কিশোর গ্যাংও সক্রিয় হয়েছে। বিভিন্ন সময় তাঁরা মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে জানান দিচ্ছে তারাও মাঠে রয়েছে। এসব আসনে প্রচার-প্রচারণায় বিভিন্ন প্রার্থীদের সঙ্গে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিদের দেখা গিয়েছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে নির্বাচনকে বানচাল করতে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সর্মথকরা চেষ্টা করতে পারেন সূত্র জানিয়েছেন। এতে করে অজানা, অদৃশ্য এক আতঙ্ক যেন ছেয়ে আছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, শঙ্কার মাত্রা তত বাড়ছে।
প্রচারণায় গিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে লড়ছেন বড় ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম। এই আসনে এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটলেও ভোটারদের মনে সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে। এদিকে গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে সদর উপজেলায় ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা সভায় সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু অভিযোগ করেন নির্বাচন উপলক্ষে হত্যা মামলার আসামিসহ কিশোর গ্যাং মাঠে নেমেছে। যারা নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাহার আকন্দ। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে সোহরাব উদ্দিন ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। অন্যদিকে সবাইকে চমকে দিয়ে ট্রাক প্রতীকের বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আখতারুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। ভোটাররা বলছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের পক্ষের লোকজনের সাথে সোহরাবের বিরোধের কারণে বিভিন্ন সময়ে বড় বড় সংঘর্ষ হয়েছে। যার ফলে আতঙ্ক বিরাজ করতো। এর জেরে নির্বাচন ঘিরেও হতে পারে সংঘর্ষ। এছাড়া এই আসনে হত্যা, বিভিন্ন অপরাধ, মাদক মামলার আসামিসহ কিশোর গ্যাংয়ের একটি বড় অংশ বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পাকুন্দিয়া উপজেলায় নির্বাচনী জনসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কাহার আকন্দ বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের নাম উল্লেখ করে বলেন, আর যদি একটা কথা নৌকার বিরুদ্ধে বলবেন তাহলে আপনার বাড়িও ঘেরাও করবে কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ার নেতাকর্মীরা।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সাংসদ মো. আফজাল হোসেন এবং তাঁর ছোট ভাই বাজিতপুর পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন (আশরাফ) গত ১৫ বছর যাবত গোটা এলাকার নিয়ন্ত্রণ করছে। আরেকটি পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঈগল প্রতীকে লড়ছেন সাংসদ আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে। বাজিতপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩টি ও গ্রেপ্তার হয়েছেন সাতজন। এদিকে সন্ত্রাসীসহ মাদক ব্যবসা, খুন, নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে খাসজমি, দোকানপাট, বাড়িঘর, বালুমহাল দখলের অভিযোগে অভিযুক্ত ও বিভিন্ন মামলার আসামিরা প্রভাবশালী দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছে। নির্বাচনী মাঠে তাদের উপস্থিতি দেখে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে নির্বাচনী সহিংসতার শঙ্কা না থাকলেও নির্বাচন বানচাল করতে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সমর্থকরা উঠেপড়ে লাগতে পারে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। শরীফুল আলমের বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে যারা গত ৩১ অক্টোবর তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই এলাকাকে রণক্ষেত্র পরিণত করেন। তখন এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দলের দুই কর্মী নিহত হয় বলে দাবি করে বিএনপি। তবে তাঁদের মধ্যে একজনের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে তখন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন।
রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৯৭টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৫৯১টি। প্রিজাইডিং অফিসার থাকবে ৮৯৭ জন। ৫৩৯৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার থাকবে। পোলিং এজেন্ট রয়েছে ১০৭৯৪ জন পোলিং এজেন্ট। এছাড়া ৩ ব্যাটেলিয়ন সেনাবাহিনী ও ১৪ প্লাটুন বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সমন্বয় সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি এ এম ওবায়েদ বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশকে যারা বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করবে তাদের দিকে আইনশৃঙ্খলা সজাগ দৃষ্টি রাখবে এটাই প্রত্যাশা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, জনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ তাঁর সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু নিশ্চিত করবে।
রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী থাকবে। ভোটের দিন সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে আমরা ভয় পাচ্ছি না।
Comments
comments