দ্বাদশ সংসদের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিতে ফোন পেয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। বুধবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাকে শপথ নিতে ফোন করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন তাঁর ব্যাক্তিগত সহকারী আলমগীর হোসেন। বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গণভবনে শপথ নেবেন তিনি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। শপথগ্রহণ শেষে নবনিযুক্ত মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা নিজ নিজ শপথবাক্যে স্বাক্ষর করবেন।
জানা গেছে, ২০১৯ এর ৩ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের জন প্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা যান। স্বাধীনতার পর সেদিনই কিশোরগঞ্জের মানুষ জেনেছিল জেলায় কোনো মন্ত্রী না থাকার সংবাদ। তবে সেই কস্ট লাঘব হয়েছে দ্বাদশ সংসদে। নাজমুল হাসান পাপন পেলেন বঙ্গভবন থেকে ফোন। কাল যাবেন শপথ নিতে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বলছেন, গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দুর্গ হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ। মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারেই কিশোরগঞ্জ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কেউ না কেউ ছিলেন। দ্বাদশ সংসদে কিশোরগঞ্জ তাঁর হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে।
১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সেই থেকে কিশোরগঞ্জের জন্য মন্ত্রিত্বের দরজা আর কখনো বন্ধ হয়নি।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী হন মনোরঞ্জন ধর। ১৯৭৩-১৯৭৫ পর্যন্ত পাটমন্ত্রী ছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ আসাদুজ্জামান খান। ১৯৭৯ সালে বিএনপির শাসনামলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবু আহমদ ফজলুল করিম।
১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের শাসনামলে ভূমি উপমন্ত্রী হন মুজিবুল হক। তিনি কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন। ওই সময় আইনমন্ত্রী ছিলেন জেলার আরেক নেতা হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া। ১৯৮৪–১৯৮৭ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন এই জেলার মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে কিশোরগঞ্জ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য এ বি এম জাহিদুল হক নৌপরিবহন উপমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তখন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত জিল্লুর রহমানকে করা হয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী। সৈয়দ আশরাফ পান বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে। ওই সময় কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ওসমান ফারুক হন শিক্ষামন্ত্রী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসে। তখন সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। মহাজোটের শরিক কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হককে করা হয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী।
২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সৈয়দ আশরাফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর পদটি ধরে রাখেন। সবশেষ তাঁকে দেওয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গত রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এ নিয়ে তিনি টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর পরেই জেলাজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। কিশোরগঞ্জ থেকে কে হবেন মন্ত্রী? কিশোরগঞ্জবাসীর দাবি ছিল হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবার। সকল জল্পনা কল্পনা শেষে ফোন পেলেন নাজমুল হাসান পাপন। হতে যাচ্ছেন মন্ত্রী।
ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ বলেন, ভৈরবসহ পুরো জেলাবাসী অত্যন্ত আনন্দিত। খুবই খুশির সংবাদ। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। পাপন ভাইয়ের নেতৃত্বে পুরো জেলায় উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে কিশোরগঞ্জ।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সমন্বয় সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি এ এম ওবায়েদ বলেন, দু:খজনক হলেও সত্য ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ৫ বছর কিশোরগঞ্জে কোন মন্ত্রী ছিল না, যা ১৯৭২ সালের পর এক বিরল ঘটনা। কিশোরগঞ্জ বাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সন্তান নাজমুল হাসান পাপনকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করায় কিশোরগঞ্জবাসীর পাঁচ বছরের দুঃখের অবসান ঘটল। প্রধানমন্ত্রীকে কিশোরগঞ্জের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা রইল। পাশাপাশি অনুরোধ অন্ততপক্ষে আরেকজন প্রতিমন্ত্রী যেন কিশোরগঞ্জে থেকে করা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কিশোরগঞ্জের মান রেখেছেন। আমরা আবার মন্ত্রী পেলাম। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।
Comments
comments