কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন শেষ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে থেমে গেছে। ফলে ২২ বছর পর আয়োজিত এই সম্মেলনে করা যায়নি কোনো কমিটি। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগান, হুংকার ও উত্তেজনায় অস্থির হয়ে ওঠে পরিবেশ। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন কোনো রকমে শেষ হলেও দ্বিতীয় অধিবেশন স্থগিত করতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে হোসেনপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আয়োজন করা হয় এই সম্মেলন। উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি এ আয়োজনের দায়িত্বে ছিল। প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেনন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি শরীফুল আলম। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন, ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ।
এতে সভাপতিত্ব করেন হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মবিন।
জানা গেছে, সম্মেলন ঘিরে দুটি পক্ষ তৈরি হয়। একপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন, আহ্বায়ক জহিরুল মবিন। অন্যপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন, আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল হাশেম সবুজ, মাহবুুবুর রহমান, মনিরল হক রাজন, আবু বাক্কার সিদ্দিক ও শফিকুল ইসলাম কাঞ্চনসহ আরো কয়েকজন। তাদের অভিযোগ, সম্মেলনে কাউন্সিলর মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আহ্বায়কের নিজের পছন্দমতো। তারা কাউন্সিলরদের তালিকা নতুনভাবে তৈরি করার দাবি করছিলেন। এ দাবি না মানায়, সম্মেলনে গিয়ে প্রতিবাদ করেছে।
সম্মেলন শুরুর কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় শোরগোল। দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা নিজেদের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। একপক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে চিৎকার করতে থাকে। দিতে থাকে স্লোগন। প্রচ- হট্টগোলে বক্তব্য দেওয়া পর্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। বক্তাদের বক্তব্য কেউ ভালোভাবে শুনতে পর্যন্ত পারেনি। কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা বারবার হস্তক্ষেপ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। অবস্থার অবনতি দেখে প্রথম অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করে শেষ করা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশন স্থগিত করে দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন অতিথিরা। তবে পরিস্থিতি সংঘর্ষে না গড়ালেও উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে আমরা দ্বিতীয় অধিবেশ স্থগিত করেছি। এটি সুবিধাজনক সময়ে করা হবে। নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে সম্মেলন আয়োজন করেও কমিটি না হওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। ২২ বছর ধরে অনেক নেতাকর্মী কমিটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শেষবার হোসেনপুরে বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল ২০০৩ সালে। তারপর বহুবার চেষ্টা করেও সম্মেলন করা যায়নি। নেতাকর্মীদের ভাষ্য, দলীয় কোন্দল না মিটলে ভবিষ্যতেও এমন পরিস্থিতি হতে পারে। তারা চান, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃত্ব যেন এ সংকটের দ্রুত সমাধান করে।
এ ব্যাপারে হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মবিন বলেন, আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি ছিল। তবে একটি পক্ষ পরিকল্পতিভাবে সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। এ কারণ দ্বিতীয় অধিবেশ হয়নি, মানে কমিটি গঠন করা যায়। আগামীতে সুবিধাজনক সমনে কমিটি গঠন করা হবে বলে আমাকে জানিয়েছে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
Comments
comments