কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই গত ৪ মাসে ৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক সহিংসতা ও সংঘবদ্ধ অপরাধে হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে করোনাকালে নৃশংসতার ঘটনা বেড়েই চলছে। সম্প্রতি বনগ্রাম ইউনিয়ন জামষাইট এলাকায় সম্পত্তির দ্বন্দ্বে একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী-শিশু সন্তানসহ তিনজনকে হত্যা, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রকাশ্যে সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা, জমির সীমানা দিয়ে চলাচলের জেরে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার মতো নিষ্ঠুর ঘটনাও ঘটছে।
জানা গেছে, এ উপজেলায় নয়টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে ধূলদিয়া, করগাঁও, বনগ্রাম, জালালপুর, লোহাজুরী, মুমুরদিয়াসহ এই ৬টি অঞ্চলে অধিকাংশ স্বজনরা পারিবারিক বা জমিসংক্রান্ত বিরোধে পরিচিতরাই এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তবে পুলিশের সংখ্যাগত অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে, মার্চ-এপ্রিলে অপরাধ কমে পরবর্তী সময়ে বাড়লেও তা বিগত সময়ের তুলনায় কমই আছে। পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
-
চার মাসে সাত হত্যা
-
করোনায় সংকটে মানুষের হিংস্রতা বাড়ছে
-
ধৈর্যচ্যুতির কারণে অল্পতেই সহিংস হয়ে উঠছে মানুষ
-
নতুন কৌশল অবলম্বন করছে পুলিশ
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড এখনও নৃশংস অপরাধ তেমন বাড়েনি। করোনাকালে অন্যান্য অপরাধের মামলা কমলেও এখন অনেকটা বাড়ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, কটিয়াদী উপজেলায় জুলাই মাসে ১টি, আগষ্ট মাসে ১টি, সেপ্টেম্বর মাসে ১ ও অক্টোবর মাসে ৪টিসহ মোট ৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে সবকটি হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়েছে। অধিকাংশ মামলা সিআইডি কিংবা পিবিআইতে তদন্তাধীন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ট্রিপল মার্ডারের হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এতো বড় হত্যাকাণ্ড ঘটনা রহস্য খুব অল্প সময়ে বের করতে পেরে প্রশংসায় ভাঁসছে পুলিশ।
অপরাধ, সমাজ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় ঘরবন্দি থাকার পর আর্থিকসহ জীবনের বিভিন্ন ধরনের হতাশা-সংকটে মানুষের হিংস্রতা বাড়ছে। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সংঘবদ্ধ অপরাধীরাও সুযোগ খুঁজছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনসম্পৃক্ততা এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনায় একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণে অপরাধ সাময়িক কিছুটা কমেছিল, এতে স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই। মানসিক অস্থিরতা থেকে এবং আর্থিক কারণে অনেকে অপরাধ করতে শুরু করবে। ধৈর্যচ্যুতির কারণে অল্পতেই সহিংস হয়ে উঠছে মানুষ। এখন আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশকে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
কটিয়াদী মডেল থানার (ওসি) এম এ জলিল কলম২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ বখাটে, কিশোর গ্যাং ও ইভটিজারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। আবার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেও নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোনাহর আলী কলম২৪.কমকে জানান, ‘বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে ‘জনসম্পৃক্ততা এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। পাশাপাশি পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি পুলিশ সচেতনতা, নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।’