ঢাকাশনিবার , ১৫ আগস্ট ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বঙ্গবন্ধু: ৭১’র পরাজিত শক্তি ও রাজনৈতিক মৌলবাদের শিকার…

প্রতিবেদক
Kolom 24
আগস্ট ১৫, ২০২০ ৪:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!



এক.
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির রাজনৈতিক চিন্তা, স্বাধীনতা ও সংহতির প্রতীক। একজন ব্যক্তি অপরিসীম ত্যাগ ও আর্দশের মাধ্যমে পরাধীন জাতিকে জাতীয়তাবাদের চেতনা জাগ্রত করে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রত্যেক পরতে পরতে তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। যেকেউ চাইলে তা পাঠ করতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে নিয়ে রচিত ইতিহাস যখন পাঠ করছি, তখন অণুজীব বিজ্ঞানের জগতে মরণ ঘাতক করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গোটা পৃথিবী মহামারী মোকাবেলা করছে। এমনি এক প্রতিকূল সময়ে এসেছে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, মুক্তিযুদ্ধের মহান কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী। গোটা জাতি ঝাঁকজমক পূর্ণভাবে মহান নেতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের সকল প্রস্তুতি নিলেও বৈশ্বিক মহামারীর দরুন সকল আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। সরকার জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে দুই মাস সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করে। ইতোমধ্যে সরকার জাতির জনকের জন্মশত বর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০২০ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছেন। যাইহোক, বৈশ্বিক ও জাতীয় জীবনে স্বতন্ত্র জাতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ, নেতৃত্ব ও অবদান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রতিটি সুনাগরিকের কর্তব্য। আর তাই শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদের চেতনার স্ফূরণে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা এবং সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে জাতির জনকের জীবনাচরণ থেকে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো তোলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস।



দুই.
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান, মা সায়েরা খাতুন। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন টুঙ্গিপাড়া, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে। ১৯৩৬ সালে স্বদেশী আন্দোলনকারী এবং নেতাজি সুভাষ বসুর সমর্থকদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৩৮ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গোপালগঞ্জ সফরের সুবাদে ১৯৩৯ সালে কলকাতায় তিনি সোহরাওয়ার্দীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ও মুসলিম ছাত্রসমাজকেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ঐ কলেজ থেকে তিনি স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। পাকিস্তান আন্দোলন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী অগ্রণী ভ‚মিকা রেখেছেন। দেশ ভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র হিসাবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলার প্রথম ভাষা-আন্দোলনে নেতৃত্বদান এবং একই বছরের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ এর ২৩শে জুন পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে নয়াচীনে শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৫৩ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে স্বল্পকালীন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৫৬ সালে পূর্ব-পাকিস্তান শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম ও দুর্নীতি দমন বিভাগের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি দ্বিতীয়বার চীন সফর করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব সরকার তাকে গ্রেফতার করেন। ১৯৬৬ সালে পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে তিনি ৬ দফা দাবী পেশ করেন। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৯ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতা কর্তৃক “বঙ্গবন্ধু” উপাধি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয়। ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের টালবাহানা এবং ১৯৭১-র ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৭১-এর ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা ১০ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। ১৭ই এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিসভা বঙ্গবন্ধুর পূর্ববর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে।



তিন.
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে শ্রদ্ধার আসনে সমাসীন হয়েছেন। এই সময় বাংলাদেশ যে সকল আর্ন্তজাতিক সংস্থার সদস্য পদ লাভ করেছে- কমনওয়েলথ অব নেশনস, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা ও জাতিসংঘ। প্রতিটি সম্মেলন ও অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম বিদেশ সফর। মুক্তিযুদ্ধের পরমমিত্র প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা মহানগরীর ব্রিগেড ময়দানে বিশ লক্ষাধিক মানুষের গণমহাসমুদ্রে তিনি বক্তৃতা করেছিলেন।



জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুই প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেন। তিনি বক্তৃতায় বলেছিলেন, শান্তি ও ন্যায়ের জন্য পৃথিবীর সকল মানুষের আশা-আকাঙ্খা বিমূর্ত হয়ে উঠবে এমন এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ আজ পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতিসংঘের সনদে যেসব মহান আদর্শ উৎকীর্ণ রয়েছে তারই জন্যে আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম ত্যাগ স্বীকার করেছে। পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ৪৫ মিনিট বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা শেষে সভাপতি নিজেই দাঁড়িয়ে করতালি দিয়েছেন, তখন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ বিপুলভাবে করতালি দিয়ে আলিঙ্গন করে অভিনন্দিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকে।



চার.
সমাজ ও রাজনীতিতে সবাই নেতার বা নায়কের স্থান করে নিতে পারে না। হাতেগোনা গুটিকয়েক মানুষের পক্ষেই কেবল তা সম্ভব হয়। তাদের মধ্যে অসাধারণ ক্যারিশমা সম্পন্নরা বড় নেতা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে তারা সবাই সমসাময়িককালের ও চলতি পারিপাশ্বিকতার প্রেক্ষাপটে নেতা। কিন্তু বড় নেতা হলেই একজন ব্যক্তি ইতিহাসের নেতা হয়ে ওঠে না। ইতিহাসের নেতা হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের উদয় সব কালে, সব যুগে হয় না। ইতিহাস তার আপন তাগিদেই তার নেতা বা নায়কের উদ্ভব ঘটায়। তিনিই হয়ে ওঠেন ইতিহাস রচনার প্রধান কারিগর স্থপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বড় নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন যর্থাথভাবেই ইতিহাসের নেতা ও ইতিহাসের মহানায়ক।



বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর তোফায়েল আহমেদ উনার সম্পর্কে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন; ১৯৭১ সালের রক্তঝরা ১৭ই মার্চের কথা। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনা শেষে দুপুরে ধানমন্ডির বাসভবনে বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, আপনার ৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কী? উত্তরে বঞ্জিত বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা স্বভাবসিদ্ধ কন্ঠে বলেছিলেন, জনগণের সার্বিক মুক্তি। এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে তিনি ব্যাথাভারাতুর কন্ঠে বেদনার্ত স্বরে বলেছিলেন, আমি জন্মদিন পালন করি না। আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এদেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যেকোনও মুহূর্তে তাদের মৃত্যুও হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কী, আর মৃত্যুদিনই কী? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। কত বিশাল হৃদয়ের মহৎ মনের অধিকারী মানুষ ছিলেন তিনি।



বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড সম্পর্কে তার একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন যে; ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বদলে ফেলে দেশকে সাম্প্রদায়িক, সামরিক-স্বৈরাচারী, পুঁজিবাদী-লুঠপাটতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদ নির্ভরশীলতার পথে টেনে নামানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাথে সাথেই রাষ্ট্রীয় নীতি যে বদলানো হয়েছিল, তার দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, রাষ্ট্রীয় নীতি বদলানোর উদ্দেশ্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে হয়েছিল। তিনি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরো বলেন- বঙ্গবন্ধু ও জনগণের মিলিত কীর্তি হলো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা ও তার ভিত্তিতে অর্জিত স্বাধীনতা। সুতরাং জনতার মৃত্যু নেই, তাই মৃত্যু নেই বঙ্গবন্ধুরও।



পাঁচ.
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন; “১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ঘটনাটি সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এই হত্যাকান্ড পরিচালনা করে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের সাফল্যকে বিনষ্ট করে দেশকে উল্টো ধারায় প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যই ঘটানো হয় ইতিহাসের এই জঘন্য নারকীয় হত্যাকান্ড। পচাঁত্তর পরবর্তী ঘটনাধারা মূল্যায়ন করলেও আমরা দেখতে পাব, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিই এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ষড়যন্ত্রকারী ও সরাসরি সুবিধাভোগী। তারা এদেশে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে এবং সেই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিপুল কু-প্রভাব ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।”

“বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ” শিরোনাম শীর্ষক এক নিবন্ধে বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন শুরুতে উল্লেখ করেছেন; তিনি সেই মানুষ, যিনি বলেছিলেন, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার নি:শ্বাসে-প্রশ্বাসে। তাঁর সেই সাহস ছিল, মানুষকে অনুপ্রাণিত করে তোলার অনমনীয় ব্যক্তিত্বের জোর ছিল। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ হয়ে উঠার আগেই তিনি নামটির সঙ্গে নিজের অস্বিত্ব এক করেছিলেন। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচিত হতে পারে না। এই অর্থে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অভিন্ন।



“রোদনভরা পনেরই আগস্ট” শীর্ষক প্রবন্ধে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন; তা’হল “এক আশ্চর্য মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মৃত্যুর পরও যিনি আরো বেশী শক্তিশালী। তাঁকে যতবার খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই তিনি আরো বেশি মাথা উঁচু করে স্বমহিমায় দীপ্ত হয়েছেন। যারা তাঁকে ছোট করার চেষ্টা করেছে তারাই উল্টো আরো বেশি খর্ব হয়েছে।



ছয়.
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ‍‍”Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman”  শীর্ষক গ্রন্থের মুখবন্ধে লিখেছেন; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেন। বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সেই স্কুলজীবন থেকেই সোচ্চার ছিলেন। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের মূল্যবান সময় তাঁকে কারাগারে কাটাতে হয়। তিনি আরো বলেন; হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সুদীর্ঘ ২৩ বছরের স্বাধীকার থেকে স্বায়ত্তশাসন, স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সকল পর্যায়ে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার নিবিড় নজরদারীর আওতায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময়গুলো কারাবন্দি হিসেবেই কাটাতে হয়েছে। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়েই তাঁর জীবনে বারবার এই দু:সহ নিঃসঙ্গ কারাজীবন নেমে আসে। তবে তিনি কখনও আপস করেন নাই। ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তাঁর জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তাঁর মন কাঁদত। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাঁসি ফুটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন এটাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। যে কারণে তিনি নিজের জীবনের সব সুখ আরাম আয়েশ ত্যাগ করে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এক আর্দশবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন স্বাধীনতা।



বাঙালি জাতিকে বীর হিসেবে বিশ্বে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে বিশ্বে এক রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন সফল করেছেন। বাংলার মানুষের মুক্তির এই মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন জাতীয় পুর্নগঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন নিশ্চিত করছিলেন তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেট তাঁকে জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। স্বাধীন বাংলার সবুজ ঘাস তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। বাঙালি জাতির ললাটে চিরদিনের জন্য কলঙ্কের টিকা এঁকে দিয়েছে খুনিরা।



সাত.
পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তারা সাময়িকভাবে সফল হয় এবং পরবর্তীকালে দেশকে স্বাধীনতাবিরোধী চেতনায় পরিচালনা করে। অতপর ক্ষমতাসীন চক্র বঙ্গবন্ধুর অবদানকে সম্পূর্ণভাবে শুধু অগ্রাহ্যই করে না, তাঁর নামোচ্চারণও অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করে রাখে। স্মরণীয় যে, বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে বঙ্গবন্ধুই সবসময় তাদের প্রধান শত্রু । তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পরও তারা স্বস্তিবোধ করে না, ফলে নিহত বঙ্গবন্ধুও হয়ে ওঠেন তাদের আক্রমণের প্রধান শিকার। এভাবে ১৯৭৫ এর আগস্ট-পরবর্তী দুই দশকে দেশে এমন একটি প্রজন্ম গড়ে ওঠে যারা এদের পরিকল্পিত প্রচারণায় বিভ্রান্তির শিকার হয়। এই ইতিহাস বিকৃতির বিষময় ফল হিসেবে একটি বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মূল্যবোধহীনতা, সুবিধাবাদ, ন্যায়-নীতিবিবর্জিত উচ্চাভিলাষ, স্বার্থলোলুপতা প্রভৃতি প্রবল হয়ে উঠেছে। যা আমাদের সমগ্র দেশকে এক সর্বনাশা বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করার জন্যই বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অবদানকে বর্তমান ও ভবিষৎ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন। কাজেই বঙ্গবন্ধু’র পুরো জীবন জুড়ে রয়েছে বাঙালির অধিকার আদায় ও স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম, যা কালে কালে বাঙালি জাতির ইতিহাসের স্রোতধারায় লিপিবদ্ধ হয়েছে। বস্তুতপক্ষে, বাঙালি জাতির অস্তিত্বের প্রতীক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭১’র পরাজিত শক্তি  ও রাজনৈতিক মৌলবাদের বলি ..।

লেখক: মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক,
লোকপ্রশাসন বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট।



Comments

comments