আবু হুরাইরাহ্ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহ্ তা’আলার রয়েছে নিরানব্বইটি নাম, একশো থেকে একটি কম, যে এই নামগুলি মনে রাখবে, বুঝবে এবং উপলব্ধি করবে, সে জান্নাত -এ যাবে।” [বুখারি ৩.৫০:৮৯৪, মুসলিম ৩৫:৬৪৭৬, আত-তিরমিযী ৫১.৮৭:৫১৩৮]
সূরা বনী ইসরাঈল:110 – বলুনঃ আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই।
সূরা আল আ’রাফ:180 – আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক।
সূরা আল হাশর:24 – তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।
সূরা ত্বোয়া-হা:8 – আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য ইলাহ নেই। সব সৌন্দর্যমন্ডিত নাম তাঁরই।
*প্রশ্ন: আল্লাহর নাম কি নিরানব্বইটিতে সীমাবদ্ধ নাকি আরো আছে?*
উত্তর:
আল্লাহর নাম নিরানব্বই সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং তাঁর নামের প্রকৃত সংখ্যা তিনি ছাড়া কেউ জানে না।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিম্নোক্ত দুয়াটি:
أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ ، أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ
“আমি আপনার সেই সকল নাম ধরে প্রার্থনা করছি, যে নামগুলো আপনি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। অথবা সৃষ্ট জগতের কাউকে শিক্ষা দিয়েছেন, অথবা আপনার কিতাবে নাজিল করেছেন অথবা আপনার নিজের কাছেই ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান)এ সংরক্ষিত রেখে দিয়েছেন।” (মুসনাদ আহমদ, হা/৩৭০৪, সিলসিলা সহীহাহ, আলবানী)
ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, “এতে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তায়ালার নাম নিরানব্বিইটির অধিক।” (মাজমু ফাতাওয়া ৬ খণ্ড ৩৭৪ পৃষ্ঠা)
আর যে হাদীসে নিরানব্বইটি নামের কথা বলা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যায় ইমাম নওবী রহ. বলেন,
اتَّفَقَ الْعُلَمَاء عَلَى أَنَّ هَذَا الْحَدِيث لَيْسَ فِيهِ حَصْر لأَسْمَائِهِ سُبْحَانه وَتَعَالَى , فَلَيْسَ مَعْنَاهُ : أَنَّهُ لَيْسَ لَهُ أَسْمَاء غَيْر هَذِهِ التِّسْعَة وَالتِّسْعِينَ , وَإِنَّمَا مَقْصُود الْحَدِيث أَنَّ هَذِهِ التِّسْعَة وَالتِّسْعِينَ مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّة , فَالْمُرَاد الإِخْبَار عَنْ دُخُول الْجَنَّة بِإِحْصَائِهَا لا الإِخْبَار بِحَصْرِ الأَسْمَاء اهـ
“আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, উক্ত হাদীসে এ কথা নেই যে, আল্লাহর নাম নিরানব্বইটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। হাদীসের এ অর্থ নয় যে, এই নিরানব্বইটি ছাড়া আল্লাহর আর কোন নাম নেই। বরং এ কথার উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি এই নিরানব্বইটি নাম সংরক্ষণ করবে (তথা মুখস্ত করার পাশাপাশি বুঝে আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ এখানে এ নামগুলো সংরক্ষণকারীর জন্য জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। নামের সংখ্যার সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয় নি।” (শরহে সহীহ মুসলিম)
——————————
গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
আল্লাহর ৯৯ টি নাম
——————–
১। আল্লাহ্,
২। আর রহিম – পরম দয়ালু,
৩। আর রহমান – পরম দয়াময়,
৪। আল জাব্বার -পরাক্রমশালী,
৫। আল-আযীয -প্রবল,
৬। আল-মুহাইমিন -রক্ষণ ব্যবস্থাকারী
৭। আল-মু’মিন – নিরাপত্তা বিধায়ক,
৮। আস-সালাম -শান্তি বিধায়ক,
৯। আল-কুদ্দূস – নিষ্কলুষ,
১০। আল-মালিক – সর্বাধিকারী,
১১। আল-ওয়াহ্হাব – মহা বদান্য,
১২। আল-ক্বহ্হার- মহাপরাক্রান্ত,
১৩। আল-গফ্ফার-মহাক্ষমাশীল,
১৪। আল মুসউয়ির- রুপদানকারী,
১৫। আল-বারি’- উন্মেষকারী,
১৬। আল খলিক্ব- সৃষ্টিকারী,
১৭। আল মুতাকাব্বির- অহংকারের
ন্যায্য
অধিকারী,
১৮। আর ঢ়’ফি- উন্নয়নকারী,
১৯। আল খ্ব’ফিদ- অবনমনকারী,
২০। আল বাসিত- সম্প্রসারণকারী,
২১। আল ক্ববিদ- সংকোচনকারী,
২২। আল আলীম- মহাজ্ঞানী,
২৩। আল ফাত্তাহ্- মহাবিজয়ী,
২৪। আর রযযাক- জীবিকাদাতা,
২৫। আল লাতিফ- সুক্ষ দক্ষতাসম্পন্ন,
২৬। আল আদল্- ন্যায়নিষ্ঠ,
২৭। আল হাকাম- মিমাংসাকারী,
২৮। আল বাসীর- সর্বদ্রষ্টা
২৯। আস সামী’- সর্বশ্রোতা,
৩০। আল মুঝিল- হতমানকারী,
৩১। আল-মু’ইয্ব- সম্মানদাতা,
৩২। আল কাবীর- বিরাট, মহৎ,
৩৩। আল আলিই -অত্যুচ্চ,
৩৪।আশ শাকুর- গুণগ্রাহী,
৩৫। আল গ’ফূর- ক্ষমাশীল,
৩৬। আল আযীম-মহিমাময়,
৩৭। আল হালীম- সহিষ্ণু,
৩৮। আল খবীর- সর্বজ্ঞ,
৩৯। আল মুজীব- প্রার্থনা গ্রহণকারী
৪০। আর রক্বীব- নিরীক্ষণকারী,
৪১। আল কারীম-মহামান্য,
৪২। আল জালীল- প্রতাপশালী,
৪৩। আল হাসীব- মহাপরীক্ষক,
৪৪। আল মুক্বিত- আহার্যদাতা,
৪৫। আল হাফীয- মহারক্ষক,
৪৬। আল হাকক্ক-সত্য,
৪৭। আশ-শাহীদ-প্রত্যক্ষকারী
৪৮। আল বা’ইছ-পুনরুত্থানকারী,
৪৯। আল মাজীদ- গৌরবময়,
৫০। আল ওয়াদুদ- প্রেমময়,
৫১। আল হাকীম –বিচক্ষণ,
৫২। আল ওয়াসি- সর্বব্যাপী,
৫৩। আল মুবদী- আদি স্রষ্টা,
৫৪। আল মুহসী- হিসাব গ্রহণকারী,
৫৫। আল হামিদ-প্রশংসিত,
৫৬। আল ওয়ালী- অভিভাবক,
৫৭।আল মাতীন- দৃড়তাসম্পন্ন,
৫৮।আল ক্বউই- শক্তিশালী,
৫৯। আল ওয়াকীল- তত্বাবধায়ক,
৬০। আল মাজিদ-মহান,
৬১। আল ওয়াজিদ-অবধারক,
৬২। আল ক্বইয়ূম- স্বয়ং স্থিতিশীল,
৬৩। আল হাইই- জীবিত
৬৪। আল মুমীত- মরণদাতা,
৬৫। আল মুহয়ী- জীবনদাতা,
৬৬। আল মু’ঈদ- পুনঃ সৃষ্টিকারী,
৬৭। আল আওয়াল- অনাদী,
৬৮। আল মুআক্ষির- পশ্চাদবর্তীকারী,
৬৯। আল মুক্বদ্দিম- অগ্রবর্তীকারী,
৭০। আল মুক্বতাদির- প্রবল, পরাক্রম,
৭১। আল ক্বদির- শক্তিশালী,
৭২। আস সমাদ- অভাবমুক্ত,
৭৩। আল ওয়াহিদ- একক,
৭৪। আত তাওয়াব- তওবা গ্রহণকারী,
৭৫। আল বারর- ন্যায়বান,
৭৬। আল মুতা’আলী- সুউচ্চ,
৭৭। আল ওয়ালি- কার্যনির্বাহক,
৭৮। আল বাতিন- গুপ্ত,
৭৯। আজ জহির- প্রকাশ্য,
৮০। আল আখির- অনন্ত,
৮১। আল মুক্বসিত- ন্যায়পরায়ণ,
৮২।যুল জালাল ওয়াল ইকরম-
মহিমান্বিত
ও মাহাত্ম্যপূর্ণ
৮৩।মালিকুল মুলক-রাজ্যের মালিক,
৮৪। আর র’ওফ- কোমল হৃদয়,
৮৫। আল আফুউ-ক্ষমাকারী,
৮৬। আল মুনতাক্বীম- প্রতিশোধ
গ্রহণকারী,
৮৭। আল হাদী- পথ প্রদর্শক,
৮৮। আন নাফী- কল্যাণকর্তা,
৮৯। আদ দরর – ( তাগুতের)
অকল্যাণকর্তা,
৯০। আল মানি’- প্রতিরোধকারী,
৯১। আল মুগ’নি- অভাব মোচনকারী,
৯২। আল গ’নিই – সম্পদশালী
৯৩। আল জামি- একত্রীকরণকারী,
৯৪। আস সবুর- ধৈর্যশীল,
৯৫। আল রশীদ- সত্যদর্শী,
৯৬। আল ওয়ারিস- উত্তরাধিকারী,
৯৭। আল বাকী- চিরস্থায়ী,
৯৮। আল বাদী- অভিনব সৃষ্টিকারী,
৯৯। আন নূর- জ্যোতি।
Comments
comments