ঢাকাসোমবার , ২৬ এপ্রিল ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ২৬, ২০২১ ৫:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

১৭৫০ সাল থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসাব অনুসারে শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২শ’ ৭১ বছর। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া। কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থান করে আছে মানুষের হৃদয়ে। স্থানীয় হয়বতনগর সাহেব বাড়ির উর্ধ্বতন পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ (র:) সে জামাতে ইমামতি করেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী এ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত। শোলাকিয়ার এ ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ৬ষ্ঠ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাদ খান তার মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন। সেই ওয়াক্ফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে, ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিশ্বাস রয়েছে যে, এ মাঠে পর পর ৩টি ঈদে নামাজ আদায় করতে পারলে একবার হজ্ব পালনের সওয়াব পাওয়া যায়। সে জন্য শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ‘গরীবের মক্কা’ নামেও বিশেষ পরিচিত। সে বিশ্বাস থেকে এবং বৃহৎ ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করার মানসে প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পাশাপাশি ভিনদেশী মুসল্লিরাও এ ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।

কিশোরগঞ্জ মৌজার এ মাঠের মূল আয়তন বর্তমানে ৬.৬১ একর। চারপাশে অনুচ্চ প্রাচীর ঘেরা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে মোট ২৬৫টি কাতার রয়েছে যেখানে একসঙ্গে দেড় লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। এছাড়া মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন খালি জায়গা, রাস্তা এবং নিকটবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে সমসংখ্যক মুসল্লি এ বৃহত্তম ঈদজামাতে শরিক হন।

জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ মাঠে খ্যতিসম্পন্ন আলেমগণ ইমামতি করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রথম বড় জামাতের পর আরো যাঁরা ইমামতি করেছেন, তাঁরা হলেন- হযরত মাওলানা হাফেজ মুহম্মদ হযরত উল্লাহ, হযরত মাওলানা পেশওয়ারী, হযরত মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন, আলহাজ্ব মাওলানা হামিদুল হক, হযরত মাওলানা মাজহারুল হক, হযরত মাওলানা আবদুল গনি, হযরত মাওলানা আতহার আলী, হযরত মাওলানা আবদুল মান্নান, হযরত মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ নূরুল্লাহ ও মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

২০০৯ সাল থেকে আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ঈদ জামাতে ইমামতি করছেন। তবে ২০১৬ সালে ঈদ জামাত শুরুর আগে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরিস্থিতিতে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের পরিবর্তে জামাতে ইমামতি করেন বিকল্প ইমাম শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ। তবে পরবর্তী তিন বছর বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ এর ইমামতিতেই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায়ের অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। সোমবার (২৬ এপ্রিল) ধর্ম মন্ত্রণালয় ঈদের নামাজ নিয়ে নির্দেশনা জারি করে তা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছে।

২০০৬ সালে প্রথম বারের মতো স্যাটেলাইট চ্যানেল এনটিভি দেশের সর্ববৃহৎ এই ঈদ জামাত সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে। ২০০৭ সাল থেকে চ্যানেল আই নিয়মিত ঈদ জামাত সরাসরি সম্প্রচার করছে। এছাড়া অন্যান্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো গুরুত্বের সঙ্গে এ ঈদজামাতের নিউজ কাভার করে থাকে।

প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন ধনী-গরীব নির্বিশেষে। সবার উদ্দেশ্য একটাই, যেন কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া হয়ে না যায় জামাতে অংশ গ্রহণ, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার শিক্ষা নিয়েই জামাত শেষে বাড়ির পথে শোলাকিয়া ছাড়েন তাঁরা।

Comments

comments