ঢাকাশুক্রবার , ৯ জুলাই ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মানব আচরণে ক্লান্ত পৃথিবীঃ করোনা কি সংশোধনের শেষ সুযোগ?

প্রতিবেদক
Kolom 24
জুলাই ৯, ২০২১ ৩:০৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এ কথা অনস্বীকার্য যে, মানুষ হিসেবে আমরা অনেক আগেই সীমা লংঘন করেছি। যদি ধর্মীয় মাপ কাঠিতেও বিবেচনা করা হয়, সেখানেও অনুসারী হিসেবে সকল ধর্মের অনুসারীই কেউই তাদের স্বীয় ধর্মীয় গাইডলাইন মেনে চলছে না। এমনকি ধর্মীয় পন্ডিত যারা, যাদের উপর সমাজে তার স্বীয় ধর্মের নির্দেশিকা প্রচার, প্রসার, সর্বোপরি  নিজে মেনে চলার কথা তারাও আজ নানান ফেকরায় বিভক্ত। ফলশ্রুতিতে নিজ ধর্মেই ভেদাভেদ মাত্রাতিরিক্ত। অবস্থা এমন হয়েছে যে ধর্ম চর্চার চেয়ে পান্ডিত্য জাহির নিয়ে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরছে স্বয়ং ধর্ম্ববোদ্ধারা। ফলাফল হিসেবে প্রতিমূহুর্তে এই ধর্মযুদ্ধেই রক্তাক্ত হচ্ছে পৃথিবী।ধর্মের সৌন্দর্য আজ বিলীন। ইতিহাসে ধর্মীয় সাধকগন কেউই অশান্তির বানী ছড়ান নি। তাদের জীবন চরিত আলোচনা, পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শুধু শান্তির সুবাতাসই বিলিয়ে গেছেন অকাতরে। পৃথিবীতে শান্তি, প্রেম, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের জন্য ইত্যকার এমন কোনো ত্যাগ নেই যা সাধু পুরুষগন করেন নি। কেউ কেউ জীবনও দিয়েছেন মানুষের জন্য, মানবতার জন্য। কিন্তু তাদের অনুসারী হিসেবে কতোটুকু গ্রহন করতে পেরেছে মানুষ? তাদের জীবনালেখ্য, মতাদর্শ, ত্বত্ত্ববোধ কি মানুষের জীবনে সত্যিই কাজে লাগছে, কাজে লাগায় মানুষ? আসলেই কি মনীষীদের বানী দিয়ে ‘বাস্তব জীবনের’ কোনো কাজে লাগে? জীবন ক্ষুদায় কতোটুকু চাহিদা মেটায়? কিংবা গ্লোবালাইজেশনের এ সময়ে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলা মানব জীবনে সত্যিই কি কোনো প্রভাব ফেলতে পারে কোনো ত্যাগী মনীষীর বানী? এসব বানী, উপদেশ, গাইডলাইন তো বেশির ভাগই জীবনকে সহজবোধ্যতা শেখায়। ভোগবাদীতা ছেড়ে জীবনমুখীতা শেখায়। শেখায় কিভাবে ইট কাঠের খাঁচার বাইরে অরন্যে পাখির ডাক শুনে ঘুমানো যায়। এইযে সকালে এলার্ম শুনে ঘুম থেকে উঠে কর্পোরেট লাইফে নিজে জড়িয়ে নেয়া, সন্তানের স্কুল, স্ত্রীর আধুনিক লাইফ, শতাব্দীর প্রায় সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধায় সাজানো সংসারের তৈজসপত্র। এই আয়োজন, আয়োজন তৈরির আয়োজনেই কি ব্যাস্ত হচ্ছে না পৃথিবী? সব রসদ কি পৃথিবী স্বাভাবিক ভাবে দিতে পারছে?? কষ্ট হচ্ছে না? মানুষ কি জোড় পুর্বক আদায় করে নিচ্ছে না?? প্রকৃতির উপরে যে অত্যাচার চলছে তার হিসেব কষে দেখেছে কেউ?

উন্মাদের মতো ছুটে চলছে মানুষ, গাড়ি, যন্ত্র, কারখানা। ছুটছে আর ছুটছেই। সামনের সেকেন্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত মানুষ আগামী ১০০ বছরের রসদ পৃথিবী থেকে জোড় করে আদায় করে নিচ্ছে। পৃথিবীর বুক চিড়ে, হাড় ভেঙ্গে। কে কতো নিতে পারে…. আহা, এ যেনো রেস… ক্ষীপ্রতার বুনন।

কে কতো লুটতে পারে। সীমালঙ্ঘনটা সেখানেই। কি কথায়, কি কাজে, কি খাবারে, কি আচার আচরনে, কি ব্যাবহারে…..কোথায় আমরা সীমালঙ্ঘন করছিনা?? নিজের একটু সদ্ভোগের জন্য হেনো কোনো কাজ নাই করছে না মানুষ। নিজের একটু আয়েশের জন্য অন্যের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে অনায়াসে। আজ যে নিচ্ছে, কাল তার শোধ তুলছে অন্যে। চোখ উল্টে পেছনে তাকানোর সময় কই। অসহিষ্ণুতা ছড়িয়েছে জ্যামিতিক হারে। কোথাও যেনো শান্তি খুজতে যেয়ে ক্রমেই অশান্ত করে ফেলছে পৃথিবীকে। মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষকে মূল্যায়ন কই? তার হক কোথায়? তার সাথে সুন্দর ব্যাবহার কোথায়? কালে ভদ্রে যদি কেউ মানবিক আচরন করেন, তিনিও কি তার সঠিক প্রতিদান পান? পাবেন এই অকৃতজ্ঞ যমানায়? ভালো কাজের চাইতে মন্দ কাজের পাল্টাপাল্টি হচ্ছে। আজ এক দেশ দশটি অস্ত্র বানায় তো কাল অন্য দেশ ১৫ টি। তাকে টেক্কা দিতে অন্য আরেক দেশ তো তারও দ্বিগুন বানিয়ে হাক ডাক দিচ্ছে। তো সেখানে শান্তির মহান বানী কোথায় কাজ করবে? কোথায় সাধু পুরষদের জীবনাল্যেক্ষ্য? বাস্তবে মানছে কেউ? নাকি এটা শুধু সেমিনার সিম্পোজিয়ামের বিষয়। সপ্তাহান্তে কর্পোরেট ব্যাক্তি তার পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যায় রিফ্রেশমেন্টের জন্য। একটা পপকর্ন সেখানে যেমন সাধারন একটা চর্বীয় বিষয়, আমাদের ভোগবাদী যুগে মহান সাধু পুরুষদের জীবনচরিত তেমনি নিছক ‘পপকর্ন’। মৌলিক জীবন, জীবিকা, আদর্শ, নীতি, আচরনে কোনো ভূমিকা রাখছে না। রাখছে না বললেও ভূল হবে। রাখতে দিচ্ছি না আমরা। ওই যে, নিছক ‘পপকর্নে’র ভূমিকায় ফেলে রাখছি।

সাম্প্রতিক করোনা মহামারীতে পৃথিবীর মানুষ ধাক্কা খেয়েছে বিরাট। প্রায় ছয়মাস হলো চলছে অলিখিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মানুষ, বিজ্ঞান, ধর্ম সব একাট্টা বা আলাদা ভাবেও অদৃশ্য ক্ষুদ্রতম এক কণার বিরুদ্ধে লাগাতার যুদ্ধ চালাচ্ছে। দিশেহারা উদ্ভ্রান্তের মতোই ছুটছে এখানেও…. পাগলের মতো নিরাময় খুজছে মানুষ। এটাই স্বাভাবিক। আগেও মহামারী এসেছে হয়তো সামনেও আসবে। মানুষ হয়তো জয়ও করবে এ বিপদকে। কিন্তু যে লক্ষ জীবনের বলি হয় এসব মহামারী বা যুদ্ধে তার মূল কারন কি কেউ খোজে পায়? সেখান থেকে কেউ কি শিক্ষা নেয়? ক্ষান্ত হয়? শান্ত হয়? নাকি মুক্তির সনদ নিয়ে আগামী মহামারী ত্বরান্বিত করতে আবারো দ্বিগুন শক্তিতে ঝাপিয়ে পরে। ভূলে যায় ধাক্কার কথা। মানব জীবনের মূল্য কি আসলেই নেই কিছু? পৃথিবীকে কি মানুষের ভারে ক্লান্ত শ্লান্ত করে ফেলছে না? আগামী একশো বছর পরে পৃথিবীতে কি কি থাকবে? মানুষকে তা নির্ধারণ করতে হবে। আজ, এক্ষনি। মানুষ থাকবে নাকি পৃথিবীর হয়ে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিবে। করোনা মহামারীর ধাক্কা আমাদের সজাগ করার জন্য। আমাদের সংশোধিত হবার শতাব্দীর ও মানবজাতির সর্বশেষ সুযোগ। আমার আমার, ভোগ, অসহিষ্ণুতা, হিংসা, বিদ্বেষ ছেড়ে মানুষকে প্রকৃতিতে ফিরে আসতে হবে। ফিরে আসতে হবে স্বল্প তৃপ্তিতে।

লেখক- সৈয়দ ইয়াসিন

Comments

comments