ভারতীয় উপমহাদেশে পিঠা খাওয়ার চল অনেক প্রাচীন। শত বছর ধরে চলে আসা এই জনপ্রিয় খাবারের সেকাল আর একালে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পিঠাকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত রাখার পুরো কৃতিত্ব নারীদের থাকলেও বর্তমান সময়ে পুরুষরাও এগিয়ে রয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। বছরজুড়ে পিঠা পাওয়া গেলেও জমিয়ে পিঠা খাওয়ার আসল সময় শীতকাল। কৃষি সংস্কৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকা গ্রামীণ মানুষ পুরো বছর পিঠা খায় না। প্রকৃতিতে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পিঠা খাওয়ার ধুম।
শীতে যত রকমেরই পিঠা তৈরি হোক না কেন ভাপা পিঠার সাথে অন্য কোন পিঠার তুলনাই হয় না। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে এই পিঠা বিক্রি করেই শীতের সময় অনেকে সংসার চালান। পুরানথানা, বড় বাজার, নিউটাউন, একরামপুর, বত্রিশ, নগুয়া, আখড়াবাজার, কালীবাড়ীর মোড়, গাইটাল, গুরুদয়াল কলেজ মাঠ, বটতলাসহ গ্রামের হাট বাজারগুলির বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীরা। অনেকেই মৌসুমী এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। তেমন একটা পুঁজি লাগে না বলে সহজেই এ ব্যবসা শুরু করা যায়। তাই তো অনেকেই মৌসুমী ব্যবসা হিসাবে বেছে নেন। এছাড়া এসব দোকানগুলোতে দেখা যায় পিঠা পাগল লোকজনদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রেতারাও আনন্দের সাথে ভাপা পিঠা বিক্রি করে থাকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ছোট্ট চুলায় মাটির পাতিলে পানি ভরে মুখ লেপে ছোট করে তার ওপর পাতলা কাপড়ের আস্তরণ দিয়ে বসে পড়েন পিঠার কারিগর। পাতলা কাপড়ে মুড়ে পাতিলের ওপর বসিয়ে আগুনের তাপে পানির বাষ্প উঠে তৈরি হয় ভাপা পিঠা। প্রতিদিন বিকাল থেকে এসব দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় জমছে নানা বয়সী মানুষের। বিক্রেতারা পিঠা তৈরি করছেন আর ক্রেতারা দাঁড়িয়ে বা বসে গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। এ যেন শীতকালের আরেক আমেজ। পিঠা প্রেমীরা মজে শীতের আমেজে। মূলত সেখানে ভাপা ও চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে। রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব পিঠার দোকানের ক্রেতা। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেককে পিঠা খেতে দেখা গেল। অনেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন।
পত্রিকার কাগজ দিয়ে ঢাকা পিরিচে পিঠা নেন ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম। তিনি পিঠার কোনা ভেঙে মুখে পুরে বলেন, ছোটবেলার একটা সুখকর স্মৃতি হচ্ছে শীতের সকালে চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়া। এ এক অনন্য স্বাদ। মায়ের পাশে বসে পিঠা খাওয়া জান্নাতি সুখ। সে স্মৃতি ভুলে যাওয়ার নয়। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর চেষ্টা করছি।
ক্রেতা সালাম মিয়া বলেন, বাসাবাড়িতে পিঠা বানানো বেশ ঝামেলার। কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। তাই কী আর করা, দোকান থেকে কিনে খাই।
পিঠাবিক্রেতা ফাইজুর জানান, এবার শীত শুরু হাওয়ার আগেই প্রচুর পিঠা বিক্রি হচ্ছে। বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি হয়। তবে রাতে পিঠার চাহিদা বেড়ে যায়। তাই আয়ও এবার একটু বেশি হচ্ছে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হচ্ছে।
Comments
comments