ঢাকাশুক্রবার , ৪ মার্চ ২০২২
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কিশোরগঞ্জ

প্রতিবেদক
Kolom 24
মার্চ ৪, ২০২২ ৪:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কিশোরগঞ্জের ইতিহাস হাজার বছরের। ইতিহাসবিদদের ধারণা ও জনশ্রুতি অনুযায়ী, ষোড়শ শতকে বত্রিশ এর বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন; এ গঞ্জ থেকেই কালক্রমে নন্দকিশোরের গঞ্জ বা ‘কিশোরগঞ্জ’-এর উৎপত্তি। একাদশ ও দ্বাদশ শতকে পাল, বর্মণ ও সেন শাসকরা এ অঞ্চলে রাজত্ব করে। তাদের পর ছোট ছোট স্বাধীন গোত্র, হাজং, গারো এবং রাজবংশীরা এখানে বসবাস করে। ১৪৯১ সালে ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চল ফিরোজ শাহ-এর অধীনে থাকলেও কিশোরগঞ্জ সেই মুসলিম শাসনের বাইরে রয়ে যায়। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কালে বেশিরভাগ অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর কোচ ও অহম শাসকদের অধীনে রয়ে যায়। ১৫৩৮ সালে এগারসিন্দুরের অহম শাসক মুঘলদের কাছে ও ১৫৮০ সালে জঙ্গলবাড়ির শাসক ঈসা খাঁর কাছে পরাজিত হয়। ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ এগারসিন্দুরে আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করেন। ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর তার পুত্র মুসা খাঁর অধীনে আসে কিন্তু ১৫৯৯ সালে তিনি মুঘলদের কাছে পরাজিত হন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তেও ‘কাটখালী’ নামে পরিচিত ছিল কিশোরগঞ্জ। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জকে জেলা ঘোষণা করা হয়।

ষোড়শ শতকে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিলো। অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য বুকে ধারণ করে দেশ এমনকি বিশ্বের মানচিত্রেও নিজের শিড়দঁাড়া উঁচু করে রেখেছে এই জেলাটি। রাষ্ট্র ও সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পর্যটন, ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ অন্যান্য দিকে অন্যান্য জেলার থেকে পিছিয়ে পরা কিশোরগঞ্জ জেলা জন্ম দিয়েছে দেশের অসংখ্য সূর্য সন্তানদের। তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পি, কন্ঠশিল্পি, অভিনয় শিল্পী, ছড়াকার, কবি সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব, শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, বিচারপতি অন্যতম। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মধ্যে এ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের তিনজন আসীন হয়েছেন। যা গোটা বাংলাদেশের অন্য সব জেলা থেকে বিরল। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশর মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ প্রয়াত জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।

ভাটি রাজ্যের অধিপতি মসনদে আলা বীর ঈসা খাঁ, মধ্যযুগীয় কীর্তিময়ী মহিলা কবি চন্দ্রাবতী, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক প্রয়াত আতাউস সামাদ, শাহনামার অনুবাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত কবি মনির উদ্দিন ইউসুফ, ইতিহাসবিদ ড. নিহার রঞ্জন রায়, কৃষি বিজ্ঞানি ড. এম ওসমান গনি, র‍্যাংলার আনন্দ মোহন বসু, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ প্রয়াত আইভি রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, সাবেক সেনাপ্রধান মবিন খান, বীরপ্রতীক খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন ডাঃ সেতারা বেগম, লেঃ কর্ণেল শহীদ আশফাকুস সামাদ বীরউত্তম, শহীদ খায়রুল জাহান বীর প্রতীক, বাংলাদেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন, মনসামঙ্গলের কবি দ্বিজবংশীদাস, উপমহাদেশের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদ ডাঃ এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরী, লেখক চিত্রশিল্পী উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ কেদারনাথ মজুমদার, কবি, ছড়কার, গল্প লেখক ও নাট্যকার সুকুমার রায়, ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রথম কৃষিমন্ত্রী মরহুম হামি উদ্দিন আহমেদ (খান সাহেব) , রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস, শিক্ষাবিদ প্রবোধ চন্দ্র গোস্বামী, কূটনৈতিক ও রাজনীতিবিদ আবুল ফতেহ, বিশিষ্ট শিল্পপতি বাংলাদেশের প্রথম ধনী ব্যক্তি জহুরুল ইসলাম, বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও রাষ্ট্র চিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক, বাঙালি রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবক আনন্দমোহন বসু, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক কাজী আব্দুল বারী, অবিভক্ত ভারতের ছাত্র আন্দোলনের জনক রেবতী মোহন বর্মণ, বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকনন্দিত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা ও মহিনন্দের শুক্লা সরকার, শিল্পী বিপুল ভট্টাচার্য প্রমুখসহ অসংখ্য কীর্তিমানদের পূণ্যভূমি কিশোরগঞ্জ নিজেই একটি কালজয়ী ইতিহাস হিসেবে সমধিক পরিচিত। এই জেলার বিস্তীর্ণ হাওরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ঐতিহ্য।

দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীর্তি লোকজ ঐতিহ্য
কিশোরগঞ্জের ইতিহাস হাজার বছরের। জেলায় রয়েছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন। ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কিশোরগঞ্জে ঘিরে আছে অসংখ্য ইতিহাস ঐতিহ্য। রয়েছে প্রাচীন এবং আধুনিক বিখ্যাত স্থাপত্বের নানা নিদর্শন। কিশোরগঞ্জ জেলার অনেক পুরাকীর্তি রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ আরকিওলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি আমিনুল হক সাদী জানান, জেলায় ৫২টি পুরাকীর্তির নিদর্শন রয়েছে। এরমধ্যে ৯টিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত করেছে। সংরক্ষিত প্রত্নতত্ত্ব স্থলগুলো হলো অষ্টগ্রাম উপজেলা সদরের কুতুব মসজিদ, হর্ষি মসজিদ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কবি দ্বিজবংশী দাস ও কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতি বিজড়িত মন্দির, করিমগঞ্জ উপজেলার মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁ’র স্মৃতি জড়িত ‘জঙ্গলবাড়ি’, পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুরের ‘শাদী মসজিদ” ও শাহ মাহমুদ মসজিদ, তাড়াইল উপজেলার সাহেব বাড়ী (সেকান্দরনগর) মসজিদ, নিকলী উপজেলার গুরুই মসজিদ।

কিশোরগঞ্জ জেলার লোকজ সাহিত্য সংস্কৃতিতে রয়েছে ঐতিহ্যের ভান্ডার। এ জেলার লোকজ সংগীত, পালাগান, বাউলগান, কীর্তন, কিচ্ছা কাহিনী, জারীগান, সারিগান, নাটক, যাত্রাপালা, বিয়ের প্রবাদ-প্রবচন, পুঁথি, টপ্পা, নৌকা বাইচের গান, হাস্য রসাত্নক শোলক, ধাঁ ধাঁ ইত্যাদি ইত্যাদি আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে আজও উজ্জ্বল করে রেখেছে। কিশোরগঞ্জ জেলার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে দেশীয় লোক সংস্কৃতি। ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন যে হারানো গীতিকা সম্পদকে উদ্ধার করে ইংরেজীতে অনুবাদ করে আমাদেরকে বিশ্বের কাছে বরেণ্য করে তুলেছেন তার চুয়াল্লিশটি গীতিকার মধ্যে ত্রিশটি ছিল পূর্ব ময়মনসিংহের অর্থাৎ কিশোরগঞ্জ মহকুমার। কিশোরগঞ্জ জঙ্গলবাড়ীর কোচ রাজা লক্ষন হাজরা, সুশংরাজ রঘুপতি আর এগারসিন্দুর বেবুদ রাজার কাহিনী এদেশের ইতিহাস সংস্কৃতে কিংবদন্তী। বাংলা সাহিত্যের মঙ্গল কাব্যের প্রথম রচয়িতা দ্বিজবংশী দাসের পূন্যভূমি এই কিশোরগঞ্জ জেলা। তাঁরই কন্যা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের আদি মহিলা কবি চন্দ্রাবতী।

তথ্য সূত্র- গবেষক ও লেখক আমিনুল হক সাদী

Comments

comments