ঢাকাশনিবার , ৪ জুন ২০২২
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বর্ষা কিংবা শুকনো; ঘুরে আসতে পারেন রহস্যময় দিল্লির আখড়ায়

প্রতিবেদক
Kolom 24
জুন ৪, ২০২২ ৫:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রকৃতি ছাড়াও হাওরে পর্যটকদের দেখার মতো বেশ কিছু জায়গা রয়েছে। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের ‘দিল্লির আখড়া’এর মধ্যে অন্যতম এবং রহস্যময় স্থান। এখানে রয়েছে শত শত হিজল গাছ। চারশো বছরের পুরনো এই আখড়া সম্পর্কে সুন্দর একটি গল্প আছে। এক সাধক নাকি এখানে এসেছিলেন ধ্যান করতে। তার ধ্যান ভাঙার জন্য কিছু দৈত্য তাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো। একদিন এই সাধক মহাবিরক্ত হয়ে তার দিক্ষাগুরুর মন্ত্রবলে এই দৈত্যগুলোকে হিজল গাছ বানিয়ে রাখেন। হিজল গাছগুলো দেখলে মনে হবে সত্যি সত্যি দৈত্য দানব দাঁড়িয়ে আছে।

জায়গাটির নাম দিল্লির আখড়া কিভাবে হলো?

সে আরেক গল্প। দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের লোকজন একদিন ওই ধ্যানমগ্ন সাধকের পাশ দিয়ে নৌকার বহর নিয়ে নদীপথে যাচ্ছিলেন। এ সময় সোনার মোহর ভর্তি একটি নৌকা পানিতে ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীরা মোহর তোলার জন্য নদীপাড়ে আসে। ডুব দিয়ে তারা দু-একটি মোহর তুলেও আনে। কিন্তু সেই মোহরগুলোও চোখের ইশারায় পানিতে ফেলে দেন ওই সাধক। পরে নৌকার যাত্রীদের অনুরোধে তিনি সোনার মোহরগুলো মাছের ঝাঁকের মতো পানির উপর ভাসাতে থাকেন। মোহরগুলো তুলে নেন যাত্রীরা। এই ঘটনা শুনে সম্রাট জাহাঙ্গীর অভিভূত হন। পরে ৩’শ একর জমি তাম্রলিপির মাধ্যমে সেই সাধুর আখড়ার নামে দান করে দেন। সেই থেকে এটি দিল্লির আখড়া।

সাধুর বানিয়ে রাখা সেই হিজল গাছগুলো এখনও দাঁড়িয়ে আছে

হিজল গাছের সারি তিনশো একরের পুরো আখড়া এলাকা জুড়েই! শত শত হিজলগাছ! দেখলে ধারণা হতেই পারে, একসময় এগুলো সত্যি সত্যিই দৈত্য ছিলো! সারা বর্ষায় এগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

বর্ষা কিংবা শুকনো। একবার ঘুরে আসা যেতে পারে সেই আখড়া থেকে। হিজলের বন ভেদ করে একবার আখড়ায় পৌঁছতে পারলেই দেখা যাবে সেই সাধুর স্মৃতি। আখড়ার নির্জনতায় আপনারও মনে হবে, সত্যি এটি ধ্যান করার মতো চমৎকার একটি স্থান বটে।

আখড়ায় রয়েছে ধর্মশালা, নাটমন্দির, অতিথিশালা, পাকশালা ও বৈষ্ণবদেব থাকার ঘর। বর্তমানে আখড়ায় মোহন্ত নারায়ণ দাসসহ তিনজন বৈষ্ণব আছেন। এখানে আশ্রিত হয়ে আছে ৪০-৫০ জন শ্রমজীবী মানুষ। সবাই নিরামিষভুজি। থাকে একটি যৌথ পরিবারের মতো। রাতে এখানে দর্শনার্থীদের থাকারও ব্যবস্থা আছে। আখড়ার পাশে রয়েছে ঘের দেয়া দুটি পুকুর। ইচ্ছে করলে পুকুরের ঘাটলায় বসে কাটিয়ে দেয়া যাবে একটা বিকেল।

ঘুরে আসতে পারেন আপনিও

বর্ষা আসছে। পানি ও বাতাসের সাথে লড়াই করবে হাওরবাসী। এই যুদ্ধক্ষেত্রটা একবার দেখে এলে কেমন হয়? একটি রাত ও একটি দিন কাটানো যেতেই পারে হাওরে। সেটা ঈদের ছুটিতেও হতে পারে। ভয়ের কিছু নেই। আবহাওয়া খারাপ না থাকলে ঢেউগুলো অতটা রুদ্রমূর্তিতে দেখা দেবে না। তাছাড়া, ‘আফাল’ না থাকলে তো একেবারেই সুবোধ হয়ে থাকবে। ২৪ ঘন্টার জন্য নৌকাই হতে পারে বাড়ি, নৌকাই হতে পারে ঘর। হাওরে নাওয়া, নৌকাতে খাওয়া, আর নৌকাতেই ঘুম। আর কী চাই?

যেভাবে যাবেন

কিশোরগঞ্জে বেশ কয়েকটি রুটে হাওরে যাওয়া যায়। তবে সহজ হলো সায়েদাবাদ বা গোলাপবাগ থেকে বাসে অথবা কমলাপুর থেকে ট্রেনে সরাসরি কিশোরগঞ্জ শহরে। স্টেশনে নেমে রিকশায় মিনিট দশেক, এর পর একরামপুর। ওখান থেকে অটো-রিকশায় করে মরিচখালি বাজার, চামটাঘাট বা বালিখলাতে। ব্যস, এগুলোই হাওরের দরজা বা হাওরের চৌকাঠে পা রাখা। চৌকাঠ পেরিয়ে সোজা নৌকায়। এর পর শুরু হবে ধুকপুক ধুকপুক, মানে ইঞ্জিনের শব্দ। এই শব্দের ওপরেই থাকতে হবে চব্বিশ ঘন্টার মতো। প্রথমে বিরক্তিকর মনে হলেও পরে কানের সাথে মানিয়ে যাবে। এর পর সোজা দিল্লির আখড়া। দিল্লির আখড়া পরিদর্শন শেষে পরের সময়টা কাটাতে পারেন একেবারেই পরিকল্পনা ছাড়া। সব কিছুই নির্ভর করবে পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার ওপর। তবে সময়গুলো কাটবে হাওরের ভাসা পানিতেই। বৃষ্টি না হলে ট্রলারের ছাদেই রাত কাটিয়ে দিতে পারেন তাছাড়া ট্রলারের ভেতরে তো ঘুমানোর ব্যবস্থা আছেই। ইচ্ছে করলে ডাকবাংলোতেও রাত কাটানো যায়। এরপর ভাসমান তাবু নিয়ে ধুকপুক করতে করতে নৌকার নাক ঘুরিয়ে দিতে পারেন হাওর উপজেলা ইটনা, কিম্বা অষ্টগ্রামের দিকে।

Comments

comments