কিশোরগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে মোছাঃ ফেনা ওরফে হেনা আক্তারকে (২৮) শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন, ওই নারীর স্বামী মোঃ খোকন মিয়া, মামাতো ভাসুর জালাল মিয়া এবং ননাশ জরিনা খাতুন।
এছাড়াও আদালত মোঃ খোকন মিয়াকে ৫০ হাজার, জালাল মিয়াকে ৩০ হাজার ও জরিনা খাতুনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় বিচারক অন্য তিন আসামিকে মামলা থেকে খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, শশুড় ইমান আলী, শাশুড়ী কমলা খাতুন ও ভাসুর সাইদুর রহমান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া গ্রামের খোকন মিয়া ২০০৪ সালে মোছাঃ ফেনা ওরফে হেনা আক্তারকে বিবাহ করেন। তাদের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা সস্তান ফাতেমা (৮) ও কুলছুম (৫) জন্ম গ্রহন করে। সন্তান জন্ম গ্রহন করার থেকে যৌতুক লোভী স্বামী, ননাশ ও মামাতো ভাসুর এক লক্ষ টাকা দাবি করে। ফেনা ওরফে হেনা আক্তারকে চাপ সৃষ্টির এক পর্যায়ে মানসিক অত্যাচার ও শারীরিক নির্যাতন করা শুরু করে। অনেক বিষয় চিন্তা করে সংসারের সুখ শান্তির জন্য ৪০ হাজার টাকা ও দোচালা টিনের ঘরসহ একটি গাভী দেন ফেনা ওরফে হেনা আক্তারের ভাই ও বাবা।
২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর জালালের কুপরামর্শে ফেনা ওরফে হেনা আক্তারের ওপর যৌতুকের জন্য ঘুম থেকে উঠিয়ে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে জালাল, খোকন মিয়া ও জরিনা আক্তার হেনাকে কিল ঘুষি মারে এবং চুলে ধরে টেনে হেঁচড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এমন সময় হেনা চিৎকার শুরু করলে খোকন মিয়া, জালাল মিয়া ও জরিনা আক্তার মোছাঃ ফেনা ওরফে হেনা আক্তারকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা করিমগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক এস এম জহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ আফজল ও আসামিপক্ষে এডভোকেট আতাউর রহমান আকন্দ ও এডভোকেট শ্যামল কুমার সরকার মামলাটি পরিচালনা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ আফজল বলেন এ রায়ের মাধ্যমে আবারও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।’
আসামি পক্ষের আইনজীবী শ্যামল কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
মামলার বাদী হেনা আক্তারের ছোট ভাই সাইকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আর কোনো মা-বোনেরা যেন যৌতুকের জন্য প্রাণ না হারায়। আমরা বিচার পেয়েছি।’
Comments
comments