‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, পুলিশ আছে জনতার পাশে’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১১২ জনকে। সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনস ড্রিল শেডে ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ। এতে ৯৫ জন পুরুষ এবং ১৭ জন নারী নির্বাচিত হয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্তরা জানান, ঘুষ ও কোনো ধরনের তদবির ছাড়াই তাদের চাকরি হয়েছে।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সোহান সরকার, কেরানীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আল আমিন হোসাইন প্রমুখ। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও পুলিশ হ্যান্ডবুক উপহার দেন। পরে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, টিআরসি পদে চলতি বছরের ৪, ৫ ও ৬ মার্চ প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করার পর লিখিত পরীক্ষা হয় ১২ মার্চ এবং চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয় ২০ মার্চ। ৩৮৫৬ জন পরীক্ষার্থী ফিজিক্যাল এনডুরেন্স টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। এতে ৭১২ জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। মাঠপর্যায়ে, লিখিত, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার মাধ্যমে জেলায় মোট ১১২ জনকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে।
কৃষক আঃ রশিদের ছেলে আঃ কাদির (১৯) করিমগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের পাবইকান্দি গ্রামে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে আঃ কাদির ২০২১ সালে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনস হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় পাস করেন। পড়ালেখার খরচ যোগাতে ও সংসার চালাতে বাবার সাথে কৃষি কাজ করেন তিনি। বাবার স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করবেন তিনি। ঘুষ ও তদবির ছাড়াই তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
কাদিরের বাবা আঃ রশিদ বলেন, শুনেছি ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। এটা মিথ্যা প্রমাণ হলো। আমার মতো গরিব মানুষের ছেলে মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে পুলিশে চাকরি পেল। কথাগুলো যখন বলছিলেন তখন তার শরীর কাঁপছিল।
অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের চৌদন্তগ্রামের মেয়ে আশা রাণী দাস। ৫ বোনের মধ্যে ছোট সে। বাবা টেনু দাস একজন দরিদ্র কৃষক। ২০২১ সালে তিনি এস.এস.সি পাস করেন। টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হয় না জেনেও লাইনে দাঁড়িয়ে চাকরি পেয়ে আনন্দে হাসতে থাকেন। ১২০ টাকায় যে চাকরি হয় তিনি নিজে তার সাক্ষী। দেশসেবাই তার একমাত্র কাজ হবে। দালাল ছাড়াই চাকরি পেয়ে গরিবের জন্য কাজ করতে চান তিনি।
শুধু কাদির ও আশা নয়, তাদের মতো অনেক প্রান্তিক পরিবারের সদস্যই নিজের মেধা ও যোগ্যতা বলে কোনো ধরনের অর্থ ও তদবির ছাড়াই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। তারা পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর চাকরিপ্রার্থী, নেতা, মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের দৌড়াদৌড়ি তেমনটা ছিল না। দালালদের প্রতি জেলা পুলিশের নজরদারি ছিল বেশ। কোনও রকম ঘুষ ও নেতাদের তদবির মাথায় না নিয়ে এ নিয়োগ সম্পন্ন করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে নির্ধারিত রীতি ও নীতির মধ্য দিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সততা, নিষ্ঠা ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করবেন।’
Comments
comments