ঢাকাশনিবার , ১৯ আগস্ট ২০২৩
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টাকার খনি পাগলা মসজিদের দান বাক্সে পাওয়া গেল ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা

প্রতিবেদক
Kolom 24
আগস্ট ১৯, ২০২৩ ৯:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রতিদিন দেশের অগণিত মানুষ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে আসেন। তাঁরা দু’হাত ভরে দান করেন এ মসজিদে। তাঁদের বিশ্বাস, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলেই মনবাঞ্চা পূর্ণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করেন। আর তিন মাস পর পর দান সিন্দুকগুলো খুললেই পাওয়া যায় কোটি কোটি টাকা! এ যেন রহস্যে ঘেরা টাকার খনি! দানের টাকার অঙ্ক শুনে লোকজনের চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে ওঠে।

শনিবার (১৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের আটটি সিন্দুক খুলে পাওয়া যায় রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে দানবাক্স কমিটির আহ্বায়ক ও কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে এ বাক্সগুলো খোলা হয়। দানবাক্সগুলো খুলে ২৩টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় নেওয়া হয় গণনার জন্য। সারা দিনে এগুলো গুনে পাওয়া গেল ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পাওয়া গেছে। এবার দানের পরিমাণ আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। শনিবার (১৯ আগস্ট) রাত ৯টা ১০ মিনিটের দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ গণনা শেষে টাকার এ হিসাব নিশ্চিত করে জানান, টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এ ছাড়া টাকার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার দানবাক্স পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ জাবের আহমেদ, সহকারী কমিশনার নাবিলা ফেরদৌস, সুশান্ত সিংহ, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষকেরা গণনাকাজ তত্ত্বাবধান করছেন। টাকা গণনায় মসজিদ মাদরাসার ১৩৮ জন ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ১৯৮ জন মানুষ টাকা গণনার কাজ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

এর আগে চলতি বছরের ৬ মে দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৪ মাসে ওই দানবাক্সগুলোতে জমা পড়েছিল ১৯ বস্তা টাকা। দিনভর গণনা শেষে এতে টাকার পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ২০ বস্তা টাকা। তখন দিনভর গুনে ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপার অলংকারও মিলেছিল। সে সময় তিন মাসে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়েছিল মসজিদের দানবাক্সগুলোতে।

টাকা গণনার এলাহি কাণ্ড নিজ চোখে দেখতে শহরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান। তাঁদের অনেকে বলেছেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে আয়ের পাশাপাশি মসজিদের টাকা-পয়সা ব্যয়ের হিসাবটাও জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত।

মসজিদ পরিচালনা কমিটি জানায়, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। দান করেন মোটা অঙ্কের টাকা। তবে এ মসজিদের দানবাক্সে যে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, তা জেলার আর কোনো মসজিদে মেলে না। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। তা ছাড়া প্রতিদিন বিপুলসংখ্যাক গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন। আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দান বাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করেন। এমনকি শত্রুকে ঘায়েলের দাবিও থাকে কোনো কোনো চিঠিতে।

সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা বিশাল পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদটি প্রথমে ১০ শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এর আয়তন আরও বাড়ানো হয়েছে। মসজিটি এখন প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে রয়েছে।

কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে ঈসা খাঁর আমলে ‘দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা’ নামে এক ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তী সময়ে ওই স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। পরে জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদের দান সিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। দানসিন্দুকে দান করা ছাড়াও মসজিদের নিলামঘরে প্রতিদিন মানুষ নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, ফল-ফলাদি, কোরআন শরীফ ইত্যাদি। নিলামঘরে প্রতিদিন এসব নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, জেলা প্রশাসকসহ আমরা কমিটির সদস্যরা এখানে ছিলাম। পুলিশ যে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয় তার প্রমাণ সকাল থেকে আমি এখানে। আমার সাথে আমার পুলিশ সদস্যরা ছিল, আনসার সদস্যরাও ছিল। নিরাপত্তার সাথে এখানকার টাকা গণনা শেষ করে ব্যাংকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের প্রতি সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের অন্যরকম আবেগ রয়েছে। এই এলাকার মানুষেরা চান এখানে একটা দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স হউক। সুন্দর মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্তের পথে। নিয়োগ চূড়ান্ত হলেই আমরা মসজিদের কাজে হাত দিব। এখানকার মানুষের ইচ্ছা এই মসজিদে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ যেন নামাজ পড়তে পারে। আমরাও সেরকমটি চাই।

Comments

comments