কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় মা ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃতরা হলেন সৌদি আরব প্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে মোহনা (১১) ও ছোট মেয়ে বন্যা (৭)। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নের বাসুর চর গ্রামে নিজ ঘরের দুটি বিছানায় তাদের লাশ পাওয়া যায়।
পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি সোমবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতের যেকোনো সময় তাদের হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী বলছেন, মঞ্জিল মিয়া পাঁচ বছর আগে সৌদি আরবে যান। বাড়িতে তার স্ত্রী তাছলিমা তাদের দুই মেয়ে মোহনা ও বন্যাকে নিয়ে বসবাস করতেন। দুই মেয়ের মধ্যে মোহনা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি এবং বন্যা প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে মোহনাকে স্কুলে নিয়ে যেতে তার এক বান্ধবী তাদের ঘরে যায়। মোহনাকে সে ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজাটি খুলে যায়।
পরে ভেতরে গিয়ে সে মা ও দুই মেয়েকে মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার নেয়। পরে অন্যরা ঘরে গিয়ে তাদের লাশ দেখতে পায়। স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দুটি বিছানায় মা ও দুই মেয়ের লাশ পায়। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
এদিকে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে ময়মনসিংহ সিআইডির ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থলে এসে নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। নমুনা সংগ্রহ শেষে বিকেলে তারা ফিরে যায়। পুলিশ সূত্র জানায়, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি তছলিমা আক্তারের ১১ বছর বয়সী মেয়ে মোহনাকে ধর্ষণ করা হয়। পরে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয় থেকে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এদিকে পিবিআই সূত্র বলছে, সিআইডির ফরেনসিক এক্সপার্টরা নমুনা সংগ্রহ শেষ করে জানায় তছলিমা আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, তাছলিমার পরকীয়া সম্পর্ক থাকতে পারে। নাহয় ঘরের দরজা খোলা কিভাবে থাকে। আমরা ধারণা করছি তাছলিমার সাথে কারও পরকীয়া ছিল পরে হয়তোবা তাছলিমার বড় মেয়ের দিকেও কুনজর পরে।
সাহেদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে এমন ঘটনা এই প্রথম। আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি গিয়ে দেখি পুলিশ ঘটনাস্থল বেষ্টনী দিয়ে রেখেছি। এলাকাবাসী একেক সময় একেক কথা বলছে। পুলিশের তদন্ত শেষে জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, সিআইডির ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। আমরা পিবিআইকেও এখানে সম্পৃক্ত করেছি। আমরা বিভিন্ন দিক দিয়ে পূঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছি।
তিনি বলেন, সিআইডির ফরেনসিক এক্সপার্ট নমুনা সংগ্রহের পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজন যারা তাদের দিকে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আরও অনেকেই আসবে। জিজ্ঞাসাবাদ করার পর যদি কাউকে আটক করতে হয় করব। কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে করব।
Comments
comments