কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় মা ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের পর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন হোসেনপুর থানা পুলিশ। বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নের বাসুর চর গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নিহত তাছলিমা আক্তারের প্রতিবেশী ছোটন মিয়া ও জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান টিটু ‘আজকের পত্রিকা’কে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে হোসেনপুর থানায় নিহত তাছলিমা আক্তারের ভাই ও তার দুই মেয়ে মোহনা ও বন্যার মামা কবিরুল ইসলাম নয়ন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরও আগে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে জেলার হোসেনপুর উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নের বাসুর চর গ্রামে নিজ ঘরের দুটি বিছানা থেকে সৌদি আরব প্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে মোহনা (১১) ও ছোট মেয়ে বন্যা (৭) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মঞ্জিল মিয়া পাঁচ বছর আগে সৌদি আরবে যান। বাড়িতে তার স্ত্রী তাছলিমা তাদের দুই মেয়ে মোহনা ও বন্যাকে নিয়ে বসবাস করতেন। দুই মেয়ের মধ্যে মোহনা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি এবং বন্যা প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে মোহনাকে স্কুলে নিয়ে যেতে তার বান্ধবী ফারজানা তাদের ঘরে যায়। মোহনাকে সে ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজাটি খুলে যায়।
পরে ভেতরে গিয়ে সে মা ও দুই মেয়েকে মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার নেয়। পরে অন্যরা ঘরে গিয়ে তাদের লাশ দেখতে পায়। স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দুটি বিছানায় মা ও দুই মেয়ের লাশ পায়। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে ময়মনসিংহ সিআইডির ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থলে এসে নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। নমুনা সংগ্রহ শেষে বিকেলে তারা ফিরে যায়।
এদিকে পিবিআই সূত্র বলছে, সিআইডির ফরেনসিক এক্সপার্টরা নমুনা সংগ্রহ শেষে জানিয়েছেন তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে তছলিমা আক্তার ও তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে মোহনাকে ধর্ষণ করা হয়। পরে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয় থেকে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
হত্যার আগে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ফরেনসিক রিপোর্ট পাচ্ছি না এটা কনফার্ম বলা ডিফিকাল্ট। পুলিশের ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল থেকে সমস্ত আলামত সংগ্রহ করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলকে বেষ্টনী দিয়ে রেখেছিল। এখান থেকে আলামত বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম। সেখান থেকে যদি কোনো আলামত পাওয়া যায় তবে নিশ্চিতভাবে ফরেনসিক রিপোর্টে পাওয়া যাবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, আমরা প্রথমেই বলেছি এটিকে হত্যাকাণ্ড ধরেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আমরা পুরো বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।
Comments
comments