যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার পর দীর্ঘ ১৭ বছর ছদ্ম পরিচয়ে পালিয়ে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্দেহের বাইরে থাকতে সুনামগঞ্জ জেলায় আরেকটি বিয়েও করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে ভাঙ্গারির ব্যবসাও শুরু করেন। এর মধ্যে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে কিশোরগঞ্জের আদালত তাকে মত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ওই পলাতক আসামির নাম জিয়া উদ্দিন (৪৩)। তিনি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর কদমতলী মেরাজনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা। সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানায় কোম্পানী অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবির।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া উদ্দিনের সাথে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার হাতকাজলা গ্রামের মো: হারেছ মিয়ার মেয়ে রেখা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস শুরু করেন জিয়া উদ্দিন। বিয়ের এক থেকে দেড় মাস পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করেন জিয়া উদ্দিন। ২০০৬ সালের ১৪ জুলাই রাতে জিয়া উদ্দিন নিজ ঘরে স্ত্রী রেখা আক্তারকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। এ ঘটনার পরদিন ১৫ জুলাই নিহত রেখার বাবা মো. হারেছ মিয়া বাদী হয়ে তাড়াইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কোম্পানী অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবির জানান, ঘটনার পর থেকে জিয়া উদ্দিন পলাতক ছিলেন। পুলিশ এ মামলার একমাত্র আসামি জিয়া উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তাঁর অনুপস্থিতিতে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলায় আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একইসঙ্গে আসামিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানারও আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মো. আশরাফুল কবির জানান, সম্প্রতি র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্প আসামি জিয়া উদ্দিনকে ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান শনাক্ত করে। পরে কোম্পানী অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবিরের নেতৃত্বে সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) সকালে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার রাতেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী জিয়া উদ্দিনকে মিঠামইন থানায় হস্তান্তর করা হইয়াছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিতি ছিলেন র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের উপ সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও নুরুজ্জামান মিয়া।
Comments
comments