ফেইসবুকে পরিচয়, পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে চুটিয়ে প্রেম। কিছুদিন পর প্রেমের সম্পর্কে ভাটা পড়ায় মৌলভীর মাধ্যমে বিয়ে। পরে গর্ভে আসে বাচ্চা। বাচ্চা নষ্ট করে দেয়ার পর ছেলের অনুরোধে চুক্তি করে মিমাংসা। দুজনে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি করলেন ৫ বছর পর ইসলামিক শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করবেন। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকঠাকই চলছিল সবকিছু। হঠাৎ ছেলেটি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তরুণীর সাথে। অতঃপর অধিকার আদায়ের দাবিতে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের তারাপাশা এলাকায় ছেলের বাড়ির সামনে গত ১৫ দিন যাবত দাঁড়িয়ে আছেন ওই তরুণী। এ নিয়ে এলাকার জনসাধারণের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
অভিযুক্ত আশিকুর রহমান শুভ কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের তারাপাশা এলাকার আজগর আলী ধনু ভূইয়ার ছেলে। আশিকুর রহমান শুভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র। অন্যদিকে ভুক্তভোগী ওই তরুণী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খড়িয়ালা গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে। তিনি ঢাকার বাড্ডা এলাকার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।
ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার সময় ফেইসবুকে আশিকুর রহমান শুভর সাথে পরিচয় হয়। এই পরিচয়ের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা। পরে তাদের এক মৌলভীর মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল বিয়ে হয় বলে দাবি করেন ওই তরুণী। বিয়ের পর থেকে তাঁরা একসাথে থাকতেও শুরু করেন। শুভর ঔরসজাত একটা সন্তানও আসছিল তরুণীর গর্ভে। পরে ক্যারিয়ারের দোহায় দিয়ে তরুণীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলে। এ ঘটনায় ঢাকার চকবাজার থানায় মামলাও করতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তরুণী।
তবে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর দাবি চকবাজার থানায় ভ্রুন হত্যার প্রমাণ যখন পেয়েছে তখন শুভ পায়ে ধরে শেষ একটা সুযোগ চায়। আমি সুযোগ দিছিলাম আর ওইখানে একটা স্ট্যাম্প তৈরি করে। ওই স্ট্যাম্পে ঠিকানা ও তার বাবা-মায়ের নাম ভুল দেয় শুভ।
ভুক্তভোগী তরুনী বলেন, ওই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, পড়াশুনা চলমান থাকার কারনে এই মুহুর্তে আমরা একে অপরের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি না। কিন্তু আমাদের মাঝে বর্তমানে যে সম্পর্ক চলমান আছে তা ভবিষ্যতেও চলমান থাকিবে। উপরে উল্লেখিত শর্ত সাপেক্ষে আগামি ৫ বছর পর উভয়পক্ষদ্বয় ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবেন।
ভুক্তভোগী তরুনী আরও বলেন, আমি শুভর বাড়িতে আসছি আমার অধিকার নিয়া। আমি ওদের সব প্রমাণ দিছি ওর পরিবারকে। প্রমাণ দেয়ার পরও ওরা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতেছে। আমি যেন এখান থেকে চলে যাই এখানকার লোকাল মানুষজনকে দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দিতেছে। আমি কোনো জায়গায় নিরা না। ওরা আমাকে ৫ লাখ টাকা অফার করছে যেন আমি এখান থেকে চলে যাই। আমি এখানে টাকার জন্য আসি নাই। মেয়েদের বিয়ের পরে স্বামীই সব। আমি শুধু আমার অধিকারটা ফেরত চাই।
ভুক্তভোগী তরুনী আরও বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে আমি যেখানে চাকরি করতাম সেখান থেকেও আমাকে বরখাস্ত করে দিছে। চুক্তিতে যা ছিল শুভ তা ভঙ্গ করছে। শুভ বিয়ে করছে সেটা তার পরিবারের কাকছে জানাইতে আসছিলো কিছুদিন আগে। তারপর থেকে আর যোগাযোগ নেই শুভর সাথে। আমি কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এলাকাবাসী বলছেন, শুভদের পরিবারের আমাদের যোগাযোগ কম। তারা এখানে ৭-৮ বছর হয়েছে বাড়ি করেছে। তাদের পরিবারে শুধু তাদের আত্মীয় স্বজন যাওয়া আসা করে কোনো এলাকাবাসী এ বাড়িতে যায় না।
এ বিষয়ে কথা বলতে আশিকুর রহমান শুভর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসাবে দুই পক্ষ ও এলাকার লোকজন নিয়ে সঠিক সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শ্যামল মিয়া বলেন, আমরা ওই তরুণীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তরুণীর ভাষ্যমতে ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন সময়ে ঘটনা ঘটেছে। ওই তরুণী ঢাকার থানায় অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট থানা আমাদের কাছে আইনি সহযোগিতা চাইলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
Comments
comments