ঢাকারবিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দখল দূষণ ও বাঁধে নরসুন্দার প্রাণ যায়, চলে চাষাবাদও

প্রতিবেদক
Kolom 24
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪ ১০:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কিশোরগঞ্জে দখল দূষণ ও নদীর প্রবাহ না থাকায় নরসুন্দা এখন প্রায় মৃত। দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে দখল আর দূষণ। অন্যদিকে হোসেনপুরের কাওনা এলাকায় বাঁধ দেওয়ার কারণে নরসুন্দা নদী তার প্রবাহ হারিয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় বলছে, উপজেলা ভিত্তিক নরসুন্দা নদীর প্রায় ৮২ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে ৪১ জন। তবে পরিবেশ কর্মীরা বলছেন নরসুন্দা নদীর জায়গা দখলদারির সংখ্যা কমপক্ষে ৪০০ জন হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে নরসুন্দার শুরু। প্রায় ৬৭ কিলোমিটার বয়ে চলে জেলার ইটনা উপজেলার বাদলার কাছে ধনু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত এটি।

সরজমিনে নদটি ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু এলাকায় কচুরিপানা পচে যাওয়ায় পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে, সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দূর থেকে দেখলে সবুজ মাঠ বলে মনে হয়। দুই তীরের মানুষের পয়োনিষ্কাশনের সহজ স্থানে পরিণত হয়েছে নদীটি। কোথাও কোথাও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নরসুন্দা বাসাবাড়ি, ড্রেন ও স্থাপনার ময়লা-আবর্জনার পানি নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে। আর নদীর পাশে ওয়াকওয়েতে মানুষ খুব কষ্টে যাতায়াত করছে। কোথাও নদীর পাড়, কোথাও তলদেশ দখল হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ছোট ছোট চর জেগে উঠেছে। চর জেগে ওঠায় অনেকে ধান চাষ করছেন। নদী তীরবর্তীরা দখলে নিয়ে সেখানে যে যার মতো করে ফসলের মাঠ বানিয়েছেন। নদের বক্ষে চাষাবাদ হচ্ছে ধান, মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন ফসল। নদে ধানের চারা রোপণ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, নরসুন্দায় তো পানি নেই। নদের জায়গায় শুধু মাটি আর মাটি দেখা যায় তাই ধান চাষ করছি। অনেকেই করছে। কেউ বাধা দেয়নি।’

জানা গেছে, নরসুন্দার যৌবন ফেরাতে ২০১২ সালে উদ্যোগ নেয় সরকার। শুধু তাই নয়, নদীকেন্দ্রিক কিশোরগঞ্জ শহরকে আধুনিক শহর নির্মাণে নেওয়া হয় ব্যাপক পরিকল্পনা। সে অনুযায়ী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেকের বৈঠকে অনুমোদন পায় একটি প্রকল্পও। `নরসুন্দা নদী পুনর্বাসন ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভাসংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করা হয় ২০১২ সালের ২২ নভেম্বর। সামগ্রিক এ প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ৬৪ কোটি টাকা থেকে পরবর্তী সময়ে বাড়িয়ে ১১৫ কোটি টাকা করা হয়। সরকারি তিনটি প্রকল্পের মধ্যে হাতিরঝিল ও গোপালগঞ্জ প্রকল্প দুটি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হলেও অদৃশ্য কারণে কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হয়নি।

বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। কিন্তু পরে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। পরে ২০১৬ সালের জুন মাসে কোনো রকমে কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের টাকা বাড়ানোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেও নদীটি নাব্যতা ফিরে পায়নি। অন্যান্য কাজ কোনো রকমে শেষ করা হয়েছে। কিন্তু যে নদকে ঘিরে এত আয়োজন, সেই নদীর পানির প্রবাহ না ফেরায় হতাশ হয়েছে কিশোরগঞ্জবাসী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি শহরের ইসলামিয়া সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে নরসুন্দা নদী প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে সমাবেশের মাধ্যমে এ আন্দোলনের শুরু করে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জন সচিবের উপস্থিতিতে গণশুনানি হয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে দাবির সত্যতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু এরপর বিষয়টি আলোর পথ দেখেনি।

নরসুন্দা নদ বাঁচাও আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সৈয়দ ইয়াছিন বলেন, নরসুন্দাকে আমরা সবাই মিলেই হত্যা করেছি, কেউ এর দায় এড়াতে পারবে না, না জনগন, না প্রশাসন। ময়লা ফেলে, অবৈধ স্থাপনা করে, কাওনায় কৃত্রিম বাধ দিয়ে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ করে। প্রকৃতিকে হত্যা করলে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক নিয়মেই প্রতিশোধ নিবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কিশোরগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, কিশোরগঞ্জের লাইফলাইন খ্যাত নরসুন্দা নদী দখল দূষণের কবলে পড়েছে। নদীটাকে কৌশল করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নরসুন্দার সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্পের নামে নদটাকে ধ্বংস করে ফেলছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে কাওনার বাঁধ। কাওনার বাঁধের কারণে নদী তার প্রবাহ হারিয়েছে। কিছু এলাকায় নদটি জীবিত ছিল তাও এখন মানুষ দখল করে পুরোপুরি দখলে চলে গেছে। বিশেষ করে ময়লা আর্বজনা নদে ফেলতেছে। নদীর যে প্রটেকশন ওয়াল করছে এগুলোর মাধ্যমে নদীকে দখলের আরও সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এসব জঘন্য কাজের সাথে পৌর কতৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সমাজের কিছু নদ খেকো মানুষ সরাসরি জড়িত। নদীর উৎসমুখ থেকে পতিত হওয়া পর্যন্ত ৪০০ থেকে ৫০০ জন নদী দখল করে নিয়ে জমিজমা বানিয়েছেন। এমনকি জমির রেকর্ডও পরিবর্তন করে ফেলছে।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ পারভেজ মিয়া বলেন, এলজিইডি নরসুন্দা প্রকল্প বুঝিয়ে দেয়নি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালে আমি ছিলাম না। ফাইল পত্র পর্যালোচনা করে বিষয়টি বলা যাবে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, নরসুন্দা নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে৷

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি আসার পরে নদী দখলতো দূরের কথা নদী একটা খড়কুটাও কেউ ফেলতে পারে নাই। রেকর্ড পরিবর্তনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো কেউ যদি পরিবর্তন করে থাকে তবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে বিশাল অংকের বরাদ্দের প্রয়োজন। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি বরাদ্দের জন্য। আর কাওনার বাধ সরিয়ে ফেলতে অনেকবার কথা হয়েছে কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছে ব্রহ্মপুত্র নদের লেয়ার নরসুন্দা নদের থেকে নিচে। কাওনার বাধটি সরিয়ে ফেললে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা যাবে না বলে মনে করেন তাঁরা।

Comments

comments