ঢাকামঙ্গলবার , ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ছাত্রলীগ নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, ২৫ দিন পর নরসুন্দা নদী থেকে লাশ উদ্ধার

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১০:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কিশোরগঞ্জে রমজানের তারাবিতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ছাত্রলীগ নেতার গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সন্দেহভাজন আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নরসুন্দা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। অবশেষে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের ব্যবহৃত লুঙ্গি, ভাড়া বাসার চাবি ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম—মোখলেছ উদ্দিন ভূইয়া (২৫)। তিনি জেলার মিঠামইন উপজেলার কেওরজোড় ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনের ছেলে। মোখলেছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া জেলা জজ আদালতের একজন পেশকারের সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মোখলেছ জেলা শহরের হারুয়া বৌবাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন। আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা গত ২৯ মার্চ সর্বশেষ মোখলেছকে দেখা যায়।

ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর বন্ধু মিজান শেখসহ চারজনকে আটকের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। ওই ছাত্রলীগ নেতাকে জবাই করে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিকভাবে তথ্য দিয়েছিলেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু। এ তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নদীতে নিখোঁজের সন্ধানে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

এ দিকে নিখোঁজের দিনের সিসিটিভি ফুটেজে মোখলেছের বন্ধুকে দেখা যাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর পরিবারের ৪ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন—মোখলেছের বন্ধু মিঠামইনের কেওয়ারজুর ইউনিয়ন ফুলপুর গ্রামের মিজান শেখ (২৮), তার বাবা শেফুল শেখ (৬৫) ও মিজানের দুই ভাই মারজান শেখ (২৬) ও রায়হান শেখ (২১)। গত শনিবার (২০ এপ্রিল) তাদের আটক করা হয়।

নিখোঁজ মোখলেছের বড় ভাই মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ পাগলা মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে ৩১ মার্চ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।’

তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ আমি আমার চাচার সাথে দেখা করে হারুয়া যাওয়ার জন্য যখন গুরুদয়াল কলেজের ঘাটের এখানে আসি তখন খুনি মিজানকে দেখি। আমিতো তখনও জানি না মিজানই খুনি। আমার ভাই আর মিজান একসাথেই চলাফেরা করতো। তাঁরা বন্ধু ছিল। আমি তখন মিজানকে বলি কিরে মিজান মুখলেছরেতো পাইতাছি না অনেকদিন ধইরা। ওরে ফোন দিতাছি ধরতাছে না। তুই কি কোনো খবর টবর জানসনি। তখন মিজান বললো, “না আমিতো কোনো খবর টবর জানি না। খবর টবর জানি না বলে আমাকে এড়িয়ে চলে যায়।”

মুখলেছের বড় ভাই আরও বলেন, খুনি মিজান একবারে সুস্থভাবে কথাগুলো বলতেছিলো। পরে আমি জিজ্ঞেস করলাম তোর নাম্বারটা দে। মিজান আমাকে বলে,” আমিতো মোবাইল ব্যবহার করি না।” বলে আমাকে এড়িয়ে চলে যায়। পরে আমি মুখলেছ যে বাসায় থাকতো সে বাসায় গেলাম। পরে বাসার মালিক আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম আমার ভাই কই? আন্টি বললেন, তোমার ভাই যে গেছে আর তো আসে নাই। পরে এক ভাড়াটিয়া মহিলা এসে বললেন, একটা লোক এসে খুব তাড়াহুড়ো করে আমার ভাইকে বাসা থেকে বের করছে।

তিনি জানান, মোখলেছ ও মিজান ছোটবেলার বন্ধু। মোখলেছ নিখোঁজের পর মিজানকে জিজ্ঞাসা করেও কোনো সদুত্তর পাননি। বরং নির্লিপ্তভাবে তাকে এড়িয়ে চলছিলেন। পরে পুলিশ ওই মোখলেছের ভাড়া বাসার পাশের সিসিটিভি ফুটেজ অনুসন্ধান করে ওই দিন মিজানকে ওই এলাকায় দেখা গেছে।

সিসিটিভি ফুটেজের বর্ণনা দিয়ে নিহতের বড় ভাই মিজান বলেন, ‘আমরা হারুয়া টপ টেনের দোকান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। পাগলা মসজিদ থেকে তারাবির নামাজ পড়ে মোখলেছ বাসায় যাচ্ছিল। সে যে বাসায় থাকত তার কাছাকাছি একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফুটেজে দেখা গেছে, ২৯ মার্চ রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে মোখলেছ হেঁটে বাসায় ফিরছে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পেছন থেকে হেঁটে আসছে মিজান। অথচ মিজান হারুয়া এলাকায় থাকে না।’ পরে গত ১৬ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মিজান ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে অপহরণের মামলা করেন তিনি।

নিহতের বড়ভাই মিজান বলেন, তারাবির নামাজ পড়ে আমার ভাই যে বাসায় থাকতো সে বাসায় মিজান শেখ গিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া করছে। কেমনে মারলো আমার ভাইরে। আমি এ ঘটনায় জড়িত সবার ফাঁসি চাই। আমার বাবা মকবুল আমার ভাইয়ের নিখোঁজের সংবাদ শুনে ঈদের পরদিন স্ট্রোক করে মারা যাউ। পুরো পরিবারটিকে ধ্বংস করে দিছে খুনি মিজান।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয় যে মুখলেছ নিখোঁজ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। একপর্যায়ে আমাদের মনে হয় যে এই নিখোঁজটা বেশ সন্দেহজনক। তরুণ বয়সের একটা মানুষ হঠাৎ করে নাই হয়ে যাওয়াই আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেই। পরিবারের সদস্যরাও মুখলেছের হারিয়ে যাওয়াটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। পরে উনারা একটা অপহরণের মামলা করেন। ডিজিটাল ডিভাইসের নানামাত্রিক উপকরণ ব্যবহার করে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এই ঘটনার সাথে আসামি মিজানের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, আসামি মিজানের বক্তব্য অনুযায়ী মোখলেছকে হত্যা করে নরসুন্দা নদীর ফুটওভার ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে সেখানে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অবশেষে আজ বিকেলে বিকৃত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার হলো। মিজান যেখানে লাশ ফেলে রাখার কথা বলেছিল তার ১০০ গজ দূর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। মুখলেছের ডিএনএ প্রোফাইল নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করবো। লাশ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, আসামি মিজানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মিজানের দুই ভাই ও বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কারা কারা সম্পৃক্ত রয়েছে তা নিশ্চিত করবো। ইতিমধ্যে মিজান আমাদের জানিয়েছে তাঁর সাথে কারা কারা সম্পৃক্ত ছিল তবে সে বললেইতো হবে না আমরা সব তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ পর্যালোচনা ও যাচাই করে দেখবো।

এদিকে গ্রেপ্তার মিজান শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান তাঁর খাসকামরায় এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ছোটবেলা থেকেই মোখলেছকে এলাকার মানুষ মূল্যায়ন করতো। এছাড়া মিছানের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা পেতেন মোখলেছ। এলাকার মানুষ মোখলেছকে বেশি মূল্যায়ন করায় মিজানের মনে হিংসার জন্ম নেয়। ঘটনার রাতে আসামি মিজান মোখলেছকে বাসা থেকে কৌশলে নিয়ে এসে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ সংলগ্ন মুক্তমঞ্চের পাশে ওয়াচ-টাওয়ারের পাশে বসে আড্ডা দেয়। পরে মিজান ও তাঁর সহযোগী মিলে আড্ডা দিতে দিতে পৌরসভা কার্যালয়ের পেছনে নরসুন্দা নদীর ফুট ওভারব্রিজের নিচে নিয়ে যান। আড্ডার মাঝেই মিজান শেখ মোখলেছের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। পরে মিজান ও তাঁর সহযোগীরা মিলে মোখলেছের পেট ফুটো করে লাশ বস্তায় ভরে পাথরের ব্লক বেধে নদীতে ফেলে দেয়।

Comments

comments