কিশোরগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দেবর, জাল ও ভাগ্নে মিলে হনুফা নামে এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের বুরুঙ্গাচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী, সন্তানসহ ৫-৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত হনুফা (৪০) সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের বুরুঙ্গাচর গ্রামের খাইরুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার পরপরই পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন যাবত খাইরুল ইসলাম ও তাঁর ছোট ভাই জহির, দীন ইসলাম, বোন সখিনার মধ্যে বসতবাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। বাড়ির জায়গা নিয়ে তাদের মধ্যে বাটোয়ারা মামলাও চলছে। গত মঙ্গলবার (১৪ মে) তাদের বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে মাছ ধরে খাইরুল ইসলাম। সেই মাছ ৪ ভাগ করে বন্টন করে খাইরুল। কিন্তু বন্টনকৃত মাছ তাঁর ভাই ও বোনেরা না নিয়ে ভিডিও করে রাখে। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বসতবাড়ির ভিতরের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয় জহির। রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ওইদিনই খাইরুল পুলিশের কাছে অভিযোগ করে।
পুলিশ গিয়ে রাস্তা খুলে দেয়ার কথা বলে চলে আসে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে গেলে খাইরুল রাস্তার বেড়া তুলে বাইরে বের হতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খাইরুলের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে জহির, দীন ইসলাম, সখিনা, ভাগ্নে রফিক, রফিকের স্ত্রী জুসনা ও জহিরের স্ত্রী হুসনাসহ আরও ৪-৫ জন। খাইরুলকে বাঁচাতে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানসহ ৫-৬ জন এগিয়ে আসলে তাদের ওপরও হামলা চালায়। একপর্যায়ে হনুফাকে ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় তাঁরা। পরে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করে হনুফাকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যদের কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হনুফার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে ঢাকা নেয়ার পথে হনুফা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নিহতের ভাই আবুল হাশেম বলেন, আমার বোন, দুলাভাই ও ভাগ্নের ওপর হামলা চালানো হয়। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাড়ি ফাঁকা পেয়ে বসতবাড়িও ভাংচুর ও লুটপাট করে। আমার বোন, দুলাভাই ও ভাগ্নেকে কুপিয়ে আহত করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে থানায় জহির, দীন ইসলাম ও কাশেম নামে এক ব্যক্তি যায় মামলা করতে। ওইসময় আমার চাচাতো ভাই মিজান থানায় জানাতে যায় যে আমার বোন মারা গেছে। থানায় গিয়ে দেখে জহির, দীন ইসলাম ও কাশেম থানায় বসা। সঙ্গে সঙ্গে ওসি সাহেবকে মিজান জানায় যে জহির ও দীন ইসলাম আমার বোনকে মেরে ফেলছে। এ বিষয় জানানোর পর পুলিশ জহির ও দীন ইসলামকে আটক করে। আমি আমার বোন হত্যার বিচার চাই।
নিহতের স্বামী খাইরুল ইসলাম বলেন, ফায়সালাতো আদালতই করে দিত। কেনো এভাবে হামলা করে আমাদের এভাবে মারলো। আমার স্ত্রীকে কেনো হত্যা করলো। আমি আমার স্ত্রী হত্যার বিচার চাই।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত জহির ও দীন ইসলামকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক চিকিৎসক ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পরবর্তীতে জমা দেয়া হবে।
Comments
comments