বিজিবি’র লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে তিন সহযোগীসহ ৪ প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। রোববার (০২ জুন) রাতে জেলা শহরের পূর্ব তারাপাশা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার কাদিরন ভৌহখনা গ্রামের মৃত আঃ খালেকের ছেলে বিজিবি’র লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পরিচয়দানকারী আবুল খায়ের (৪৫), কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার গাইটাল নয়াপাড়া এলাকার শরীফ উদ্দিনের ছেলে মোঃ রুবেল মিয়া (৩২), একই উপজেলার লতিবাবাদ চরপাড়া এলাকার মৃত আঃ কুদ্দুছের ছেলে মোঃ বিল্লাল (৪৮) ও সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজকুন্তি এলাকার আবু তালেবের ছেলে মোঃ তাজুল ইসলাম (৩০)।
মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এ কে ফজলুল হক (৫৩) ও তাঁর স্ত্রী টিটি কলেজের সিনিয়র প্রভাষক রেদুয়ানা আক্তার জেসমিন (৪৩) সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের দামপাটুলী গ্রামে ৬৯ শতাংশ জায়গায় “হক পোল্ট্রি ফার্ম’ কর্মচারীদের দ্বারা পরিচালনা করেন। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছিলেন তারা তা পরিশোধের জন্য জায়গাটি বিক্রয়ের পরিকল্পনা করেন এই দম্পতি। গত ২২ মে দুপুরে দুপুরে ফজলুল হক তাঁর পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করছিলেন। এ সময় ওই ৪ প্রতারক পোল্ট্রি ফার্মে আসেন। ওই ৪ প্রতারকের মধ্যে আবুল খায়ের নিজেকে বিজিবি’র লেফটেন্যান্ট কর্ণেল হিসেবে পরিচয় দেন এবং প্রমান হিসাবে তার মোবাইলে বিজিবির ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি দেখায়।
পরে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পরিচয়দানকারী আবুল খায়ের ওই দম্পতির হক পোল্ট্রি ফার্মটি খুবই পছন্দ হয়েছে বলে ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। ওই সময় আবুল খায়েরের তিন সহযোগী ভুক্তভোগী ফজলুল হককে বলেন, “স্যার প্রচুর টাকার মালিক। টাকার জন্য আপনি কোন চিন্তা করবেন না। ফার্মটি দেখে এবং আপনাএ সাথে কথা বলে আমাদের খুবই ভাল লেগেছে।”
ওই ৪ প্রতারকের কথায় বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী ফজলুল হক তাদের বাসায় নিয়ে আসে এবং খাওয়া দাওয়া করান। পরে জায়গার কাগজপত্র দেখে ৪ প্রতারক জায়গার দাম এক কোটি আশি লক্ষ টাকা নির্ধারন করে সন্ধ্যার দিকে চলে যায়। পরদিন ২৩ মে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা শহরের গাংচিল রেস্টুরেন্টে ভুক্তভোগী ফজলুল হককে ফোন দিয়ে যেতে বলেন। গাংচিল রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়ার সময় ফজলুল হককে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার ব্যাংক লোন মওকুফ করে দেয়ার কথা বলে একটি আবেদনে স্ত্রী রেদুয়ানা আক্তার জেসমিনের স্বাক্ষর নেয় ওই চক্র। পরে ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা মওকুফ করেছে বলে ওই দম্পতিকে জানায় চক্রটি। চক্রের সদস্যরা তখন হেড অফিসের ফাইল প্রসেসিংয়ের খরচ দেখিয়ে ওই দম্পতির নিকট থেকে বিকাশের মাধ্যমে নগদ ১৬ হাজার টাকা নেয়।
গত ২৪ মে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা আবার ফজলুল হকের বাসায় গিয়ে নেত্রকোনা যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ফজলুল হকের শরীর ভালো না থাকায় যেতে মানা করে দেন। ওইরাতে প্রতারক চক্রের সদস্যরা আবারও ফজলুল হকের বাসায় রাত্রিযাপন করেন। পরের দিন ২৫ মে সকালে ভুক্তভোগী দম্পতির পোল্ট্রি ফার্মে গিয়ে জায়গা মাপজোখ করে জায়গা বুঝে নেন এবং ২৬ মে জমি রেজিষ্ট্রি করার কথা বলেন।
ওই সময় লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পরিচয়দানকারী আবুল খায়ের তার সহযোগীদের কিছু টাকা দিতে হবে বলে ফজলুল হকের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ২২ হাজার টাকা ধার নেন। ওই চক্রের সদস্যরা চলে যাবার পর বিকাশ নম্বর চেক করে দেখা যায় বিকাশ নম্বরটি লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পরিচয় দেয়া আবুল খায়েরের। তখনই ওই দম্পতি বুঝতে পারে তাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছে।
প্রতারণার বিষয়টি বুঝার পরও তাদের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন ওই দম্পতি। গত রোববার (০২ জুন) রাতে জমির বায়া দলিল ও কিছু খরচের টাকা নেয়ার জন্য পুনরায় আমার বাড়িতে আসলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের আটক করে ওই দম্পতি। পরে স্থানীয়দের জেরার মুখে আবুল খায়ের ভূয়া পরিচয় প্রদান এবং প্রতারনার বিষয়টি স্বীকার করে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শ্যামল মিয়া বলেন, এ ঘটনায় ফজলুল হক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
Comments
comments