দেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কিছু আইন ও নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ এখনো অবহেলিত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার বঞ্চিত। তাদের অধিকার রক্ষায় আইন সংশোধন ও প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন ও মনিটরিং প্রয়োজন।
বুধবার (১২ জুন) সকাল ১১টায় রাজধানীর ব্র্যাক ইনের অডিটোরিয়ামে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আইনগত ও সামাজিক সুরক্ষায় করণীয়’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ক্রিশ্চিয়ান এইড, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা যৌথ উদ্যোগে এই মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আ. ফ. ম রুহুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী সমাজের নিপীড়িত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা অনন্য এবং বিরল। দেশের সকল জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছানোর জন্য যেখানে পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা দরকার সেখানে তা অবশ্যই করা হবে। শতভাগ জনগণকে শিক্ষিত করা সম্ভব হলে তারা নিজেরাই নিজেদের অধিকার আদায়ে সক্ষম হবে।’
সভার অতিথি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের হাতে বিস্তৃত কর্মসূচি রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মসূচিগুলোতে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে যে অধ্যায়টি আছে তা সরিয়ে দেওয়া হলে এই জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতিকে অস্বীকার করা হবে, তাই আমি মনে করি উক্ত অধ্যায়টি অবশ্যই বাদ দেওয়া সমীচীন হবে না বরং পরিমার্জন করা যেতে পারে। দলিত জনগোষ্ঠীর উচ্ছেদ সম্পর্কে তিনি বলেন, পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা কোনোভাবেই উচিত নয়।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, অশিক্ষা একটি মূল সমস্যা হিসেবে সবগুলো জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান। শিক্ষা দিয়ে যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক এম এম মাহমুদুল্লাহ, ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য তাহমিনা রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
আলোচকেরা বলেন, ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয়’— স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের এই নীতিকে বাস্তবায়ন করতে চাইলে কারা পিছিয়ে আছে তাদের প্রথমে শনাক্ত করা ও স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে দলিত, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন প্রয়োজন এবং সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত পাস করা প্রয়োজন এবং ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করা দরকার।
সভায় মুদ্রাস্ফীতিকে বিবেচনায় এনে প্রতিবন্ধী ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
Comments
comments