কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া-মটখলা-টোক ও কিশোরগঞ্জ-কটিয়াদী-টোক এ দুটি আঞ্চলিক সড়ক। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ দুটি সড়ক এখন এক আতঙ্কের নাম। যানবাহনে ডাকাতি এখন প্রায় প্রতিরাতের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রাতে ঘন্টাব্যাপী ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাকুন্দিয়া থানার ঘাট থেকে টোক ব্রিজ, পাকুন্দিয়া মঠখলা-বটতলা থেকে ড্রেনের ঘাট মোড়, মঠখলা থেকে কটিয়াদী যাওয়ার পথে মান্দারকান্দি স্কুল, বেতাবাজার বিলপাড়, কটিয়াদী হেলিপ্যাড ও পাকুন্দিয়া থেকে মটখলা বাজারের আগে ছোট পুলের কাছে গাছের গুঁড়ি ও পিলার ফেলে যানবাহন থামিয়ে ডাকাতি করা হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কোথাও ৮-১০ জনের দল, কোথাও ৩০ জনের বেশি মিলে ডাকাতি করে।
চালক, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত ৫ আগস্ট থেকে চলতি মাসের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এ দুটি আঞ্চলিক সড়কে। কোথাও ৮-১০ জনের দল, কোথাও ৩০ জনের বেশি মিলে ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত করে।
জেলা শহরের শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা কামরুলের মাইক্রোবাস দুই সপ্তাহ আগে রাত পৌনে ১টার দিকে ডাকাতের কবলে পড়ে। তিনি জানান, মঠখলা বাজারের আগে একটি তেলের পাম্পের কাছে ট্রাক্টর ফেলে তাঁর গাড়ি আটকে ডাকাতি করা হয়। দলটিতে ২৫-৩০ জন ছিল বন্দুক দেখিয়ে ও গলায় ছুরি ধরে চালক ও যাত্রীদের প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ সময় আরও পাঁচটি গাড়িতে লুট করা হয় বলে জানান কামরুল।
সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের বাসিন্দা সোহেল জানান, তিনি ২০ আগস্ট বিমানবন্দরে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে টোক ব্রিজের কাছে পাঁচটি গাড়ি থেমে থাকতে দেখে ভাবলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটল কি না। তা দেখতে নিজের গাড়ি থামাতেই আগের গাড়িগুলোর মতো তিনিও ডাকাত দলের কবলে পড়েন। ডাকাতেরা নারী যাত্রীর কানের দুল, সোনার চেন, মোবাইল ফোন, টাকা এবং পুরুষ যাত্রীর মোবাইল, মানিব্যাগ লুট করে নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, রাতের বেলায় সড়কের ওপর গাছ, পিলার ফেলে ডাকাতরা যানবাহনে থাকা যাত্রী ও চালকদের টাকা-পয়সা এবং মালামাল লুটে নেয়। পুলিশের তৎপরতা আমরা খুব একটা দেখিনি।
কিশোরগঞ্জ মাইক্রোস্ট্যান্ড সঞ্চয় সমিতির সহ সভাপতি নুরুজ্জামান মঞ্জু ও রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী আজহারুল ইসলাম রুমান বলেন, ডাকাতির আতঙ্ক থাকায় মালিক ও চালকদের সঙ্গে আলোচনা করে রাত ১১টার পরে অলিখিতভাবে গাড়ি চলাচলে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মোঃ আশরাফুল কবির বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাকুন্দিয়া উপজেলার টোক ব্রিজ ও আশপাশ এলাকায় ডাকাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাকাতি রোধকল্পে টহল সংখ্যা বৃদ্ধি, গুরুত্বপূর্ন স্থানে চেক পোস্টসহ গোয়েন্দা নজরধারী অব্যাহত আছে। এছাড়াও ডাকাতির সাথে জড়িত ও ডাকাতি মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, আমি গত ৩১ আগস্ট যোগদান করেছি। আমি রাতেও মনিটরিং করি। হাইওয়ের বিষয়ে আমি নিজেও কাজ করি। আমি বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।
Comments
comments