রশিদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মণকচুরি জাঙ্গালিয়া মোড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-ছাত্রী জনতার ব্যানারে নারী-পুরুষসহ হাজারো গ্রামবাসী এ মানববন্ধন করেন।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, রশিদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব চিকিৎসক দিলোয়ার হোসেন, লতিবাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব হবিকুল ভুইয়া, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে আফসানা আক্তান মীম, রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও কলেজের সমন্বয়ক শ্যামল আহমেদ, ঢাকা সাত কলেজের সমন্বয়ক মো: আল আমিন, রাজধানী ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজের সমন্বয়ক মো: রাকিব হোসেন, কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ সম্পাদক নাইমুর রহমান দূর্জয়, গ্রামবাসী শুকর আলী, মোঃ সাত্তার মিয়া, মো: নাবেল আহমেদ, নিজামুদ্দিন, ফিরোজ আলম, শামীমা আক্তার, আক্তার, আসমা আক্তার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ইদ্রিসের শরীরে ৩৭টি গুলি। সে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য। তখন উনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৫ আগস্ট ব্রাহ্মণকচুরি গ্রামের জয় কৃষ্ণ বর্মণ ও গীতা রাণী বর্মণের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা ভাংচুর করেন। এ ঘটনায় ইদ্রিস কোনোভাবেই জড়িত নন। আন্দোলন চলাকালে জয় কৃষ্ণ বর্মণ ও গীতা রাণী বর্মণের দুই ছেলে চপল বর্মণ এবং চন্দন বর্মণ আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক হওয়ায় বিভিন্ন সময় আন্দোলনে বাঁধা দিয়েছিলেন ও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। এ কারণেই উত্তেজিত ছাত্র জনতা তাদের বাড়িতে হামলা করে। ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ওই পরিবার সংখ্যালঘুর বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর বলে প্রচার করতে থাকেন। গত ১২ নভেম্বর ইদ্রিসকে রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। আমরা এই মিথ্যা মামলায় ইদ্রিসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বিকাল তিনটার দিকে ইদ্রিস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ব্রাহ্মণকচুরি গ্রামের প্রয়াত জয় কৃষ্ণ বর্মণের স্ত্রী গীতা রানী বর্মণের (৬৫) বাড়িতে আক্রমন করে। তারা বাড়িঘর ভাঙচুর করে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফা হামলা করে নগদ ১৫ লাখ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।এ সময় ইদ্রিস মিয়া ও তার অনুসারীদের হুমকিতে ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা প্রাণ রক্ষার্থে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গীতা রানী বর্মণ বাদী হয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণকচুরি গ্রামের জয় কৃষ্ণ বর্মণ ও গীতা রাণী বর্মণের দুই ছেলে চপল বর্মণ এবং চন্দন বর্মণ আওয়ামী লীগের সমর্থক। তারা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনে বিভিন্ন পোস্ট করতেন। এছাড়া চপল বর্মণ এলাকায় আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। আর তার ভাই চন্দন বর্মণ সিঙ্গাপুরে থেকে নিয়মিত ফেইসবুকে আওয়ামী লীগের সমর্থনে পোস্ট দিতেন। পরিবারটি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় গত ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা তাদের বাড়িতে গিয়ে ভাংচুর করে। কিন্তু এ ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের রুপ দেয় ওই পরিবার।
ব্রাক্ষণকচুরি গ্রামের বাসিন্দা দোলন রাণী সরকার ও উজ্জ্বল বর্মণ বলেন, ৫ আগস্ট ও তার পরে আমাদের ওপর হামলা হয়নি। আমরাতো নির্ভয়ে চলাফেরা করছি। আমাদেরতো এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে জয় কৃষ্ণ বর্মণ ও গীতা রাণী বর্মণের সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া তাদের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইদ্রিস মামলার এজহারনামীয় আসামি। মামলাটির তদন্ত চলছে।
Comments
comments