করোনায় স্থবির হয়ে পড়া জনজীবনে রোজগারহীন ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এক ঝাঁক স্থানীয় যুবক, নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই নিজের দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ঝিনাইদহের এই নাট্যকার, নির্দেশক তথা নাট্যশিক্ষক।
শৈলকূপার ভাটই বাজার কেন্দ্রীক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একঝাঁক ছাত্রের সম্মিলনে করোনা দূর্গতদের সচেতনায়ন ও সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয় “করোনা স্কোয়াড এক” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হীরক মুশফিকের তত্ত্বাবধানে স্থানীয়ভাবে শুরু করা হয় এই কার্যক্রম। গ্রামাঞ্চলের অসচেতন মানুষকে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে সাধারণকে সহায়তা করা, কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন সম্পর্কিত ধারণা প্রদান এবং অসহায়, কর্মহীন মানুষকে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মাধ্যমে সাহায্য করার মত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। প্রথমে এলাকা ভিত্তিক সেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে এবং ফেসবুক গ্রুপে কমেন্ট, মেসেজ বা ফোন কলের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করা হয়। তারপর যাচাই-বাছাই করে নিতান্ত অসহায় মানুষের ঘরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছে সংগঠনটি। এপর্যন্ত প্রায় পাঁচ শত মানুষের কাছে নগদ অর্থ, খাদ্যদ্রব্য বা অন্যান্য প্রত্যক্ষ সেবা পৌঁছে দিয়েছে দলটি। সেক্ষেত্রে কেউ সেচ্ছায় আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে তা মূল কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ অসহায় মানুষ ছাড়াও চক্ষুলজ্জায় যে সকল মধ্যবিত্ত খাবার চাইতে পারছেননা, প্রতিদিনই সেই সকল পরিবারকে পরিচয় গোপন রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। ‘সেবার গাড়ি’ নামে বিশেষ সুবিধা পৌঁছে গ্রামের ঘরে। সেবার গাড়িতে রয়েছে শাক সবজি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী। সঠিক মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ঘরে ঘরে, নিত্যপ্রয়োজনে মানুষকে ঘরের বাইরে যেন না বের হতে হয় সেকারণেই এমন প্রকল্পণা বলে জানা যায়। দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে এসব পণ্য দেয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয় সংগঠন থেকে। সর্বশেষ ৫ মে দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে রমজানের উপহার হিসেবে বিনামূল্যে শাক সব্জি বিতরণ করা হয় বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে করোনা স্কোয়াডের অন্যতম উপদেষ্টা ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন ” এই দুর্যোগে মানুষ যাতে ভালো থাকে, সচেতন ও সুস্থ থাকে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। স্কোয়াড মেম্বারদের অক্লান্ত শ্রমে করোনা স্কোয়াড সামান্য সম্বল নিয়ে মানুষের মুখে যে হাসি ফোটাতে পারছে, সেটাই বড় প্রাপ্তি। আশা করছি দেশের যে কোন সংকটে ওরা মানুষের পাশে থাকবে “।
এর আগে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানাধীন প্রায় দশটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাজার, উন্মুক্ত টিউবওয়েল, মসজিদ প্রাঙ্গণে জীবাণু নাশক স্প্রে ও সাবান বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সংগঠনটি।
করোনা স্কোয়াড এক এর প্রতিষ্ঠাতা হীরক মুশফিক বলেন “ভয়ঙ্কর একটি সময় পার করছি আমরা, এসময়ে সাবধানতা সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। প্রথমে পারিবারিক উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু করি। পরবর্তীতে সম্মিলিত ভাবে সাবধানতা অবলম্বন করে, যতটা সম্ভব সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সকলকে সচেতন ও মানবিক হতে আহবান জানাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমরা পারবো।”
এই সংকটে সর্বত্র সম্মিলিতভাবে কাজ করতে সচেতন যুবসমাজকে এগিয়ে আসাতে অনুরোধ করেন তিনি। এধরণের কর্মকান্ডে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
Comments
comments