ঢাকাশনিবার , ১৬ জানুয়ারি ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাড়ছেই তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম

প্রতিবেদক
Kolom 24
জানুয়ারি ১৬, ২০২১ ৬:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজধানীতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে প্রভাব পড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। দাম বৃদ্ধির জন্য অনেক সময় সরবরাহ কম বা চাহিদা বেশির অজুহাত দেখানো হলেও বাস্তবে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। চাল ও তেলের পর গত কয়েকদিনে নতুন করে বেড়েছে চিনি, মসুর ডাল ও রসুনের দাম।

এছাড়া শীতকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এসব পণ্যের দাম বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এছাড়া যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে সেগুলোর দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।

এদিকে আমদানির খবরে পাইকারি পর্যায়ে মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। চালের বাজারের জন্য নতুন করে দুঃসংবাদ হলো যে মুহূর্তে সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে ঠিক তখনই বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

বাংলাদেশ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘গত ২০১৯ সালের তুলনায় সার্বিকভাবে ২০২০ সালে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি করোনা মহামারীর কারণে অনেকের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে সঙ্গতি না থাকায় অনেক মানুষকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।’

গোলাম রহমান বলেন, ‘বাজারকে সরকারের এমনভাবে মনিটরিং করতে হবে যাতে পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। কেউ বেআইনিভাবে মজুদের মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করে কিনা সেটার নজরদারি রাখা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘পণ্যের দাম বাড়লেই সরকার ব্যর্থ এটা বলা ঠিক হবে না। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে যে কাঠামো রয়েছে সেই কাঠামোতে নানা দুর্বলতা রয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়।’

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গত ২ থেকে ৩ মাসে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। বর্তমানে অনেক খুচরা দোকানে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, বাংলাদেশে বেশিরভাগ চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করার পর প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে ছাড়া হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চিনি প্রায় ১০০ ডলার বেড়েছে। এ কারণে চিনির দাম বেড়েছে। তারা বর্তমানে পাইকারি প্রতি কেজি চিনি ৬১ টাকা দরে বিক্রি করছেন, যা ২-৩ দিন আগে ৬২ টাকা ছিল।

তিনি জানান, গত ২-৩ মাসে পাইকারিতে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ২-৩ টাকা। তিনি বাজারে চিনির অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতাদের দায়ী করে বলেন, ‘পাইকারিতে মাত্র ১ টাকা বাড়লেই খুচরা বিক্রেতারা ৫ টাকা দাম বাড়িয়ে দেন। এ কারণে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে।’

মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, চিনিশিল্প করপোরেশনের কাছে প্রায় দেড় লাখ টন চিনি মজুদ রয়েছে। সেগুলো বাজারে ছাড়া হলে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এদিকে তেলের দামও যথারীতি ঊর্ধ্বমুখী। শতভাগ আমদানিনির্ভর এই পণ্যটির দামও গত ১ মাসে বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানি করে পরিশোধনের পর বাজারে ছাড়ে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে কয়েক মাস ধরে কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দামও বাড়িয়েছে।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১২০-১২৫ টাকা, পাম তেল ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারের দাম ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আর পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল বাজারভেদে ৫৭০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

মৌলভিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, ‘দেশের ভোজ্যতেল শতভাগ আমদানিনির্ভর। আর ভোজ্যতেল আমদানি করে থাকে ৬টি প্রতিষ্ঠান। এদের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই কারো। তারা যা বলে তাই সবাইকে মেনে নিতে হয়। বিশ্ববাজারে বর্তমানে তেলের দাম বেশি থাকায় সয়াবিনের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে এসব কোম্পানি। এ কারণে তারা দাম কমালে আমরাও কমাতে পারব।’

গোলাম মাওলা বলেন, ভোজ্যতেলের দাম কমাতে হলে ট্যাক্স তুলে দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রতি লিটার তেলে ৩ স্তরে ১৮ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। ট্যাক্স তুলে দিলে অন্তত লিটারপ্রতি ১৮ কমে আসবে।

বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি অভাবকে দায়ী করে গোলাম মাওলা বলেন, ‘পাইকারি এবং খুচরা বাজারের মধ্যে একটা বিরাট ব্যবধান রয়েছে।

এক কেজি পেঁয়াজ, আদা, রসুনে খুচরা বিক্রেতারা কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত লাভে বিক্রি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যের সমপরিমাণ বাড়িয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেন। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব থাকলেও এদিকে তারা নজর দেন না। শুধু দুটি ঈদ এলেই মিডিয়ার ভয়ে নড়েচড়ে বসেন তারা।’

এদিকে বিশ্ববাজারে চালের দাম হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে। প্রধান চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান প্রায় প্রতিদিনই চালের রপ্তানিমূল্য বাড়াচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম টনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ ডলার বেড়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ আলাদা দুটি প্রতিবেদনে চালের মূল্যবৃদ্ধির এই চিত্র তুলে ধরেছে। দুটি সংস্থার প্রতিবেদনই বলছে, বাংলাদেশ শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি শুরু করায় হঠাৎ দাম বাড়তে শুরু করেছে।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই চিত্র উঠে এসেছে। ‘দৈনিক খাদ্য পরিস্থিতি’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে ভারতীয় চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত আগস্টে প্রধানমন্ত্রী যখন চাল আমদানির অনুমতি দেন, তখন বিশ্ববাজারে চালের দাম ছিল কম। তখন চাল আমদানির করা হলে এত দাম শোধ করতে হতো না।

এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চাল আমদানি শুরু হলে পাইকারি পর্যায়ে মোটা চালের দাম ২ টাকা কমেছে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে কমেনি এক টাকাও। সরকার চলতি মাসে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও বাজারে তেমন একটা প্রভাব নেই। অনুমতি পেয়ে ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু চাল ইতোমধ্যে ভারত থেকে দেশে এনেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানিতে চালের দাম কমবে, এই আশঙ্কায় বেচাকেনা কমে গেছে। ফলে দাম সামান্য কমেছে। এখন ভারতীয় চাল এলে পরিস্থিতি বোঝা যাবে। সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে তেমন কোনো সুখবর নেই। এজন্য সরকারের কঠোর নজরদারির ওপর জোর দিয়েছেন ভুক্তভোগী ক্রেতাসহ বাজার বিশ্লেষকরা।

Comments

comments