রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সরকারি জমিতে অসহায় কৃষকদের চাষাবাদ করা ফসলের ক্ষেত বিনষ্ট করে সরকারিভাবে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দূর্গম চর দৌলতদিয়া এলাকার। সেখানে নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা ১৫০ টি পরিবারের পূনর্বাসনের জন্য সরকারীভাবে গৃহ নির্মানের জন্য তিন দিন আগে মাটি কেটে ভিটে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু কোন ধরনের নোটিশ না দিয়ে ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা তাদের ফসল রক্ষার দাবিতে সোমবার ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের নৈমদ্দিন খান পাড়ার শমসের বেপারির ছেলে জয়নাল বেপারি বলেন, এই প্রকল্প এলাকায় আমার বাপ-দাদার ৯ বিঘা জমি রয়েছে। এই জমি চাষাবাদ করেই আমরা কয়েকটা ভাই বেঁচে আছি। জমিগুলো সরকারীভাবে খাস হয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা চালাচ্ছি। আমাদের পক্ষে দুইটা ডিক্রিও রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই ৯ বিঘা জমিতে বেগুন, টমেটো, পিয়াজসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করেছি। এতে আমাদের প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লক্ষ টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নেয়া। অল্প কিছুদিন ধরে বেগুন তোলা শুরু করেছি। অন্যান্য ফসলও কিছু দিনের মধ্যে তোলার উপযোগী হবে। এখন এই সকল ক্ষেত ধ্বংস করে মাটি কাটা হলে আমি পথে বসে যাব।পাওনাদারদের চাপে আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে।
একইভাবে আইয়ুব আলী (৫৫), চানমিয়া (৪৫), সূর্য শেখ (৫০), হাফজা বেগম (৪০), করিমুন নেছা (৪৫) সহ অনেক কৃষক-কৃষানী অভিযোগ করে বলেন, এখানে আমাদের আরো অনেকের মোট ৪২ বিঘা জমির ফসল নষ্ট করে মাটি কাটার কাজ চলছে। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি এভাবে নিয়ে নিলে আমরা চরমভাবে অসহায় হয়ে পড়বো। প্রশাসন আমাদের মাঠের ফসল তোলার সময় পর্যন্ত দিচ্ছে না। আমরা আমাদের ফসল ও পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গনের শিকার অসহায় ১৫০ টি পরিবারকে পূনর্বাসনের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি খাস জমিতে আমরা ভিটে তৈরির কাজ শুরু করেছি। দাবি করলেও সেখানে জমির মালিকানার পক্ষে কেউ বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আমি করো কাগজপত্র ছুড়েও ফেলিনি। একমাত্র আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছাড়া সরকারি জমিতে এই সরকারি কাজ বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভিটে তৈরির কাজ শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
Comments
comments