ঢাকাশনিবার , ২৮ মার্চ ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঘরে বইসা থাকিলে পেট চালাইবে কে?

প্রতিবেদক
Kolom 24
মার্চ ২৮, ২০২০ ৫:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শহিদুল ইসলাম (৪৫)। একজন কলা বিক্রেতা। রয়েছে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট রোগ। হাটে-বাজারে লোকজন না থাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাথায় ঝাঁকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন মাত্র ১৮০ টাকার কলা। যা থেকে লাভ হবে মাত্র ৬০ টাকা। বাকি কলা দুই-একদিনের মধ্যে না বিক্রি করলে নষ্ট হবে, দাম পাবে না। উল্টো লোকসান।

শুধু শহিদুল ইসলাম নন, রিক্সাচালক, ইজিবাইক চালকসহ মাদারীপুর জেলায় হাজারো শ্রমজীবী মানুষের একই অবস্থা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে শহরে সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। শহর বা গ্রাম কোথাও নেই তেমন মানুষের আনাগোনা। হাট-বাজারগুলোতে মানুষের সমাগম একদমি নেই। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। পাচ্ছেন না তারা কোন সরকারি সহযোগিতা।

শহিদুল ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামে। তার বাবা-মা ৩ মেয়ে, ১ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। রোজ ঝাঁকা মাথায় কলা নিয়ে শহরে আসেন।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুদিন ঘরে বইসা রইছি। আইজ আর পারলাম না। ঘরে বইসা থাকিলে পেট চালাইবো কে? আমার শরীর অনেক অসুখ, হঁাটতে কষ্ট হয়। তাও পেটের দায় বের হইতে হইছে, সেই কালিগঞ্জ থেকে হাইট্টা আইছি। সারাদিন ঘুইরা ১৮০ টাহার কলা বেঁচছি, বাকি কলাডি দুইদিনের মধ্যে না বেঁচতে পারলে ৬০০ টাহার সব কলাডি নষ্ট হইবে।’

তিনি বলেন, ‘ঘরে চাউল-ডাইল কিছুই নাই। কেমনে বাঁচমু? করোনায় আর কী হবে? আয় না হইলে ঘরের বেকটির না খাইয়া মরতে হইবে।’

খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে করুণ অবস্থা শিবচর উপজেলায়। গত ৯ দিন ধরে উপজেলাটি অবরুদ্ধ। খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। শনিবার সকালে পাঁচ্চর এলাকায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন ভ্যানচালক এসকেন্দার আলী।

তিনি বলেন, ‘করোনার ভয় আর কতদিন ঘরে না খেয়ে কষ্ট করুম? ঘরে থাকলে সরকার আর ভাত দিবে না। তাই নিজেই রাস্তায় নামছি। দেখি কিছু আয় রোজগার করতে পারি নাকি?’

উৎরাইল এলাকার রিক্সা চালক মো. শাহীন মিয়া বলেন, সারাদিন রিক্সা চালিয়ে এহনো ১০০ টেকা কামাই করতে পারি নাই। ২৫০ টেকা গ্যারেজে জমা। গ্যারেজের টেকা না দিয়ে কাল রিক্সা দিবো না। এহন কি করমু জানি না। ঘরে ৩ জন পোলাপাইন আমরা ২ জন এডিরে খাওন-পড়ন দিমু কেমনে তাও জানিনা। লোকের মুখে হুনি করোনাভাইরাসের কথা। হের পরেও সংসারের দিক তাকাইয়া জীবনের রিস্ক লইয়া বাইর হইছি।’

কাবুল ব্যাপারী নামে আরেক রিক্সা চালক বলেন, ‘এক সপ্তাহহানী ধইরা খুবই খারাপ অবস্থা। প্যাসেনজার নাই। খালি রিক্সা লইয়া ঘুরতে হয়। তবুও দেখি দুই বেলা ডাইল ভাত খাইতে হইলে কিছু আয় তো লাগবে। আর রিক্সা না চাইলাতে পারলে সংসারে বাজার করার টেকা পামু কই।’
কলেজ মোড় এলাকায় যাত্রীর অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকা ইজিবাইক চালক সেকেন্দার ঘরামী। যাত্রী ইজিবাইকে না ওঠার ব্যাপার তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাটে মানুষই তো নাই। তিনদিন ধরে খুব কষ্টে আছি। রোজ ইজিবাইকের জন্য মালিকের কাছে ৪০০ টাকা দিতে হয়। দুপুর হইয়া আইলো ১০০ টাকাও হয়নি। কিভাবে চলমু বুঝতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতাই আমরা পাইনি।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে এখন করোনাভাইরাসের দুযোর্গ চলছে। আমাদের সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী এসেছে। আমরা খেটে খাওয়ার মানুষের কথা চিন্তা করে ত্রাণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। অসহায় মানুষসহ সবাই ঘরে থাকুন। ত্রাণ জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে অসহায়দের বাড়িতে পৌছে দেয়া হবে। কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না।’

ইমদাদুল হক মিলন, মাদারীপুর প্রতিনিধি

Comments

comments