গত (২৪ এপ্রিল) শনিবার রাতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে এক নাবালিকা মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় আলী নেওয়াজ (২২) নামের এক বখাটে যুবক। ঘটনার ৩ দিন পর ওই নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে না করেই কটিয়াদীর নদীরবাধ এলাকায় রেখে পালিয়ে যান ওই বখাটে যুবক।
-
রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় সামাজিক অপরাধে জড়িত হচ্ছে কিশোর গ্যাং
-
খোদ চেয়ারম্যানের বাতিজার নের্তৃত্বে বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট
-
আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত : পুলিশ
এরপর (২৭ এপ্রিল) মঙ্গলবার ওই নাবালিকা মেয়ে তার আপন (খালু) বকুল মিয়াকে বিষয়টি জানায়। ঘটনার দিন দুপুরে আলী নেওয়াজের অভিভাবকের কাছে বিচার নিয়ে যান মেয়েটির খালু বকুল মিয়া। পরে বিচার প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করেই একদল কিশোর গ্যাং দু’দফায় দেশীয় অস্ত্র রান দা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় ৪০টি বাড়িঘর কুপিয়ে তছনছ করে ও লুটপাট করে পালিয়ে যায় তারা।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) রাতে কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামের আলী নেওয়াজ ও স্থানীয় কিশোর গ্যাং লিডার রাতুলের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাং এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানো হয়।
এসময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে অন্তত ৫ জন আহত হন। তারা হলেন, পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামের মনির (১৮), মিলন মিয়া (৪০), নূরু মিয়া (২৫)। বাকি দু’জনের নাম জানা যায়নি।
হামলাকারীরা হলেন, পূবচর পাড়াতলা গ্রামের আবু সাঈদের পুত্র আলী নেওয়াজ (২২), লোহাজুড়ী দশপাখি গ্রামের বাদল মিয়ার পুত্র রাতুল (২১), পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামের ছইরত উল্লাহ’র পুত্র রাকিব (২২), নাজমুল (২১), মনির (২৫), বাবু ২৩) ও শহীদ (২৪)। বাকি হামলাকারীদের নাম রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
এলাকাবাসী জানান, আলী নেওয়াজ নামের এক বখাটে যুবক পার্শ্ববর্তী জালালপুর ইউনিয়নের এক এতিম নাবালিকা মেয়েকে বিয়ের কথা বলে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। ঘটনার তিনদিন পর বিয়ে না করে ফেরত পাঠায় মেয়েটিকে। বিষয়টি নিয়ে বিচার প্রার্থী হতে গেলে কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রুপ দলবল নিয়ে মানুষের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করে। পরে পরিস্থিতি বুঝে পালিয়ে যায় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আতাহার উদ্দিন ভূইয়া রতনের দূর সম্পর্কের ভাতিজা হন রাতুল। তারই পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় কিশোর গ্যাং এর নের্তৃত্ব দিচ্ছেন। তার মাধ্যমেই এলাকায় এসব হামলা, ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটে। চেয়ারম্যানের কারণে এদের কোন বিচার হয় না। শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে এলাকায় মানুষদের নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
এদিকে, ঘটনার একদিন পর শুক্রবার রাতুল নামের ওই কিশোর গ্যাং লিডারকে গ্রেফতার করে কিশোরগঞ্জ কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।
পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামের আম্বিয়া, হালিমা, মিলন মিয়া ও বকুল হোসেন জানান, ‘আমাদের প্রত্যেককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘরবাড়ি কুপিয়ে তছনছ করে দিয়েছে আলী ও রাতুল গং। পরে ৪০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে পালিয়ে যায় তারা। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলী নেওয়াজের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা সম্ভব হয়নি।
লোহাজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আতাহার উদ্দিন ভূইয়া রতন বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তিনি।’
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এস.এম. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।’
Comments
comments