ঢাকাশুক্রবার , ১৫ জানুয়ারি ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিচিত্র জাত বেদেরা

প্রতিবেদক
Kolom 24
জানুয়ারি ১৫, ২০২১ ৬:২৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

“বিচিত্র জাত বেদেরা। জাতি জিজ্ঞাসা করিলে বলে, বেদে। তবে ধর্মে ইসলাম। আচারে পুরা হিন্দু; মনসাপূজা করে, মঙ্গলচন্ডী, ষষ্ঠীর ব্রত করে, কালী-দুর্গাকে ভূমিষ্ট হইয়া প্রণাম করে। হিন্দু পুরাণ-কথা ইহাদের কন্ঠস্থ। বিবাহ আদান প্রদান সমগ্রভাবে ইসলাম-ধর্ম সম্প্রদায়ের সঙ্গে হয় না, নিজেদের এই বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ। বিবাহ হয় মোল্লার নিকট ইসলামীয় পদ্ধতিতে, মরিলে পোড়ায় না কবর দেয়।”

বেদে সম্প্রদায়কে ছোটগল্প ‘বেদেনী’তে এভাবেই বর্ণনা করেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়। বেদে বাংলাদেশের একটি যাযাবর জনগোষ্ঠীর নাম। বেদেরা অস্থায়ীভাবে একেক সময়ে একেকস্থানে বসবাস করে। ১৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানরাজ বল্লার রাজার সাথে তারা প্রথম ঢাকায় আসে। প্রথমে তারা বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে। তারপর সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রবেদে সম্প্রদায়ের হালচালবেদে বাংলাদেশের একটি যাযাবর জনগোষ্ঠীর নাম। তারা অস্থায়ীভাবে একেক সময়ে একেকস্থানে বসবাস করে। ১৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানরাজ বল্লার রাজার সাথে তারা প্রথম ঢাকায় আসে। প্রথমে তারা বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে। তারপর সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বেদেদেরকে অনেকেই বাংলার জিপসী বলে থাকে। তবে জিপসীদের সাথে বেদেদের মিলের থেকে অমিলই বেশী। মিল শুধু একজায়গাতেই, উভয়েই যাযাবর। তারা নিজেদেরকে মাংতা বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। মূলত মাংতারা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের একটি যাযাবর সম্প্রদায়, যারা মাছ শিকারী। পটুয়াখালী অঞ্চলে এদের দেখা মিলে। মাংতাদের সাথে বেদেদের চাল-চলনে ব্যাপক মিল রয়েছে। সে কারনে মাংতারা বেদেদেরই একটি অংশ। যাযাবর হওয়ার ফলে তাদের ছেলেমেয়েরা হয় শিক্ষাবঞ্চিত। যার ফলে জীবিকা হিসেবে তারা বেছে নেয় পূর্বপুরুষের পেশা।

বাংলাদেশে প্রায় ৭৫,৭০২ জন বেদে জনগোষ্ঠী রয়েছে। বেদে জনগোষ্ঠীর শতকরা ৯৯ ভাগ মুসলিম এবং শতকরা ৯০ ভাগ নিরক্ষর। বেদেরা ৮টি গোত্রে বিভক্ত। বেদে জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে মালবেদে, সাপুড়িয়া, বাজিকর, সান্দার, টোলা, মিরশিকারী, বরিয়াল সান্দা ও গাইন বেদে ইত্যাদি। বেদে মেয়েরা বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেঘুরে নিজেদের বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে চিকিৎসা করে। তাদের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা গুলোর মধ্যে রয়েছে শরীরের বিষ-ব্যাথা সিংগা দিয়ে দূরীকরণ, বিভিন্ন রোগের জন্য তাবিজ-কবজ প্রদান করা ইত্যাদি। তবে বেদেরা বেশি যেটা করে সেটা হল সাপের বিভিন্ন রকমের খেলা প্রদর্শন করে টাকা উপার্জন করা। এছাড়াও মানুষকে সাপে কামড়ালে বেদেরা শরীর থেকে সাপের বিষ নামিয়ে দেয়।

ঢাকার সাভার, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুরের জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, হাটহাজারী, মিরসরাই, তিনটুরী, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, চান্দিনা, এনায়েতগঞ্জ, ফেনীর সোনাগাজী, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এসকল বেদের আবাস। বেদে সমাজে সর্দারই হলো সর্বপ্রধান। একজন প্রধান সর্দারের অধিনে থাকে আরো কিছু ছোট ছোট সর্দার। সর্দারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ওদের পূর্ব প্রথা। মুসলিম নিয়মে কলেমা পড়ে বেদে সমাজে বিয়ে হয়। তবে পানচিনি, গায়েহলুদের মতো কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানও আছে। বেদে সমাজে বর পক্ষ কনের বাবাকে পন দেয়। পনের পরিমান নির্ভর করে কনের উপার্জন ক্ষমতার ওপর। বেদে সম্প্রদায়ের মেয়েদের থাকে অফুরস্ত স্বাধীনতা। ইচ্ছে করলে কোন মেয়ে তার পনের টাকা ফেরত দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। সনাতন ধর্মের মতো বেদের বিয়ে হয় আন্তঃ গোত্রীয় পর্যায়ে। তাদের ভিন্ন গোত্রে বিবাহ নিষেধ। যেমন- মাল বেদের সাথে মালবেদেরই বিয়ে হয়। মুসলমানদের মতোই বেদেদেরকে কবর দেয়া হয় কেননা তারা অধিকাংশই মুসলমান। সাধারনত বাড়ির আঙ্গিনায় তাদের কবর দেয়া।

Comments

comments