ঢাকাশনিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ পর্ব-০১

প্রতিবেদক
Kolom 24
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০ ৮:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ ৭ বছর ৭ মাস স্বজনরা জানতেন না আমি জীবিত না মৃত, ৮ মাস সূর্য্যরে আলো দেখিনি! কারাগারে বন্ধী থাকাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহর লেখা ডায়েরির পাতা ও তাঁর ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ তাঁর ডায়েরির ও ফেইসবুক ওয়ালে যা লিখেছেন তা থেকে জানা গেছে, তাঁর জীবনের ফেলে আসা অনেক স্মৃতি আজ চোখের সামনে ভিড় জমিয়েছে। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-যন্ত্রণায় ভরপুর স্মৃতিময় দিনগুলো তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাঁর যৌবনের সোনালী দিনগুলো কেটেছে আন্দোলন, সংগ্রাম, যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্যদিয়ে। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৭৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়ে, দীর্ঘ্য ৭ বছর ৬ মাস ২৮ দিন ক্যান্টনমেন্ট ও কারাগারের অসহ্য অমানুষিক যন্ত্রণাময় দিন কাটাতে হয়েছে। তাঁর লেখা অনুযায়ী এ ৭ বছর ৬ মাস ২৮ দিন যাবৎ তাঁর বাব-মা, পরিবার-পরিজনসহ আত্মীয়-স্বজনরা জানতেন না তিনি জীবিত আছেন নাকি মারা গেছেন! তাছাড়া ৭ মাস ২৩ দিন তিনি সূর্য্যরে আলো পর্যন্ত দেখেননি! ওই দিন গুলোতে সূর্য কখন উদয় হয়েছে, আর কখন অস্ত গিয়েছে তা দেখার সুযোগতো ছিলোইনা, বুঝারও কোন সুবিধা পর্যন্ত ছিলোনা বলে তাঁর লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন। অবশেষে ১৯৮৪ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম ও দাবির মুখে তাদের অনেক রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের তৎকালীন এরশাদ সরকার জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলো। তিনি (শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ) দীর্ঘ প্রায় আট বছর (৭বছর ৬মাস ২৮দিন) ক্যান্টনমেন্ট এবং কারাগারে অমানুষিক নির্যাতন ভোগ শেষে ১৯৮৪ সালের ১৬ এপ্রিল বিকাল ৪ টার দিকে ময়মনসিংহ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ কারাগারে বন্ধী থাকাবস্থায় তাঁর লেখা ডায়েরির পাতা ও তাঁর ফেইসবুক ওয়ালের লেখাটুকু হুবহু তুলে দেওয়া হলো-
জীবনের ফেলে আসা অনেক স্মৃতি আজ চোখের সামনে ভিড় জমিয়েছে। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-যন্ত্রণায় ভরপুর আমার স্মৃতিময় দিনগুলো। আমার যৌবনের সোনালী দিনগুলো কেটেছে আন্দোলন, সংগ্রাম, যুদ্ধ আর কারাগারের অভ্যন্তরে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে পুনরায় সক্রিয় ভাবে ছাত্র লীগের রাজনীতি শুরু করি। ১৯৭২ সালে নকলা থানা ছাত্র লীগের সভাপতি জনাব মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ডা. রফিকুল আলম আর আমি শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে মোস্তা ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়ে, এ বিভাগের ভি.পি নির্বাচিত হন এবং রফিক ভাই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়ে সেখানে ছাত্র লীগের নেতৃত্ব দেন। এমতাবস্থায় ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে নকলা থানা ছাত্র লীগের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। তৎকালে নকলা থানা ছিলো জামালপুর মহুকুমার অধীনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি তখন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ইন্টারমেডিয়েটের ফাইনাল পরীক্ষার্থী। ১৯৭১ সালের মতো আবার বই, খাতা, কলম টেবিলের উপর রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম। গারো পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদ করেছিলাম। খুনি জিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে ১৯৭৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছিলাম।

অনেক মানুষের জীবনে অনেক ধরনের স্মৃতি থাকে। তেমনি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় একটি দিন হলো ১৮ সেপ্টেম্বর; যে দিনটি আমার জীবনের গতি পথ পরিবর্তন করে দিয়েছে। আজ থেকে ৪৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৭৬ সালের এই দিনে শেরপুর সদর উপজেলার চান্দের নগর গ্রামে প্রায় দুইশ খানেক আর্মি, পুলিশ ঘেরাও দিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এর পর দেখতে দেখতে ৪৪ বছর চলে গেলো।

তার পরে জেলে বসে তিনি যে ডাইরি লিখেছিলাম এর মধ্য থেকে সংক্ষেপে দু’টি কথা লিখে স্মৃতি চারণ করবো। ডায়েরির সব কথা লিখতে গেলে বড় একটি বই হয়ে যাবে। তাই সংক্ষেপে বলছি- দিনটি ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সাল। ষড় ঋতুর এই দেশে তখন শরৎ কাল। শরতের স্নিগ্ধ সকাল। সূর্য তখনও উঠেনি। শেরপুর সদর থানার চান্দের নগর গ্রামের এক দরিদ্র কৃষকের কুঁড়ে ঘরে আমি একা তখনও ঘুমে আছি। সারা রাতের পথ চলায় কান্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল দেহ-মন। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। চৌকিতে বিছানো ছেড়া একটি কাঁথা। আমার বাম পাশে কাঁথার নিচে একটি জি-৩ রাইফেল, একটি নাইন এম এম পিস্তল, দুইটি হ্যান্ড গ্রেনেড, কিছু গুলি, কিছু বাংলার ডাক পত্রিকা ও কয়েকটি কয়টি ম্যাগজিন।’ এমতাবস্থায় আমাকে গ্রেপ্তারের পরেও আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হওয়ায় তারা আমাকে আবার ধরে এনে প্রথমেই রাইফেলের বাট দিয়ে তলপেটে সজোরে একটা আঘাত করে। সেই আঘাত আমার গোপনাঙ্গের উপরে ডান পাশে লাগে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। ওরা অশ্রাব্য-অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছিলো। একটা লাঠি দিয়ে পিঠে ও পায়ে তাদের ইচ্ছা মতো পিটালো। কিছু কক্ষনের মধ্যে গোপনাঙ্গ ফুলে গিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হলো। চোখ, হাত বেধে সম্ভাবত দুই জন সিপাহী দুই পাশে ধরে হাটিয়ে নিয়ে নকলা-শেরপুরের মূল রাস্তায় রাখা গাড়িতে উঠিয়ে ওদের ক্যাম্পে নিয়ে গেলো। শেরপুর থানার তৎকালীন সি.ও অফিসে আর্মিদের ক্যাম্প ছিলো। সেখানে একটা বিল্ডিংয়ের দো’তলার একটা রুমে নিয়ে সম্ভাবত একটি এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিয়ে অন্য আরেকটি রুমে নিয়ে হাত ও চোখ খুলে দিয়ে কক্ষের বাহির দিয়ে তালা লাগিয়ে দিল। ধীরে ধীরে ব্যথাটা কমে আসলো। প্রায় ঘন্টা খানেক পরে একজন ক্যাপ্টেন এলো। পাশের রুমে নিয়ে মেঝেতে বসালো। আমি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কাতরাতে কাতরাতে বসে রইলাম। আমাকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো। তাদের মনের মতো উত্তর না পেয়ে আমার বুকে একটা লাথি মারলো। আমি ছিটকে মেঝেতে পড়ে গেলাম। আমার দম বন্ধ হবার অবস্থা। তারা আবার উঠিয়ে বসালো। এবার তাদে হাতে থাকা বেতের লাঠি দিয়ে ৪-৫ টা সজোরে পিটুনি দিয়ে আবার আগের রুমে নিয়ে তালা লাগিয়ে দিল।

(চলমান)

লেখকঃ- খন্দকার জসিম উদ্দিন

Comments

comments