ঢাকামঙ্গলবার , ১৯ জানুয়ারি ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশী প্রবাসীদের অভিবাসনে নিরব কান্না

প্রতিবেদক
Kolom 24
জানুয়ারি ১৯, ২০২১ ৬:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সবাই চায় সুখ নামক সোনার হরিণ ধরতে। ১৯৭১ এর পর বাংলাদেশ হাটি হাটি পা করে এগিয়ে চলা শুরু করেছে মাত্র। সে সময় দিবা স্বপ্নের মতো দেখা দিলো বিদেশে কর্মসংস্থান নামক সোনার হরিণ। গজিয়ে উঠলো ছোট খাটো ট্রাভেল এজেন্সি। প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও মফস্বলে নিয়োগ দেওয়া হলো এজেন্ট ও সাব এজেন্ট। তাদের মধ্যে বাছাই করা কিছু চতুর প্রকৃতির লোক এসে জুটলো কতিপয় ট্রাভেল এজেন্সী বিজনেসে। এজেন্সীর দালালগণ বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে নানাভাবে মানুষকে স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায়। শুরু হয় অভাগাদের স্বপ্নের জাল বুনা। সেই স্বপ্ন বিক্রি করেই এজেন্ট নামক দালালগণ নিজেদের আখের গোছাবার জন্যে সাদাসিদে মানুষের সর্বস্ব লুন্ঠন করার ধান্ধায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

সাধারণ মানুষ শেষ সম্বল, ভিটে বাড়ি, সামান্য চাষের জমি, প্রিয়তমা স্ত্রীর অলংকার বিক্রয় বা বন্দক রেখে বিদেশ যাত্রা করে। উদ্দেশ্য হলো ভাগ্যের পরিবর্তন। বাবা-মা, ভাই- বোন, স্ত্রী-পুত্রের মায়া ত্যাগ করে যারা পারি জমায় অজানা গন্তব্যে। কেউ সুখী হতে পেরেছে, তবে অধিকাংশরাই নিরাশ হয়েছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মনে করে মেনে নিয়েছে সেই দুঃখময় জীবন। আবার পরাজিত হয়েছে স্বীয় জীবনের কাছে। বন্ধু-বান্ধবও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ধার দেনা করে প্রবাস নামক নরকে পা রাখে অনেকেই। দেনা পরিশোধ করা ও স্বজনদের চাহিদার বলি হয়ে কোনঠাসা হচ্ছে প্রতিটি প্রবাসী। নিজের দুঃখ, কষ্ট বুকের মাঝে চাপা দিয়ে শুরু করেন জীবন যুদ্ধ। এক ধকল সামলাতে না সামলাতেই শুরু হয় স্বজনদের চাহিদা নামক দ্বিতীয় যুদ্ধ। ভাইয়ের বিয়ে, বোনের বিয়ে, বোন জামাইয়ের পণের টাকা, ছোট ভাই-বোনের পড়া লেখার খরচ ও মোবাইল ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাণ উষ্ঠাগত হয়ে আসে খাটতে খাটতে তবে নিজের শত চাহিদা অপূর্ণ রেখে প্রবাসীগণ পূরণ করেন সকলের চাহিদা। কষ্ট শুধু একটাই, কেহ একটিবার জিজ্ঞেস করে না, কেমন আছো প্রবাসে? শরীর টা কেমন? তুমি ভালো তো? চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যায় কিন্তু শান্তনা দেওয়ার মতো সেখানে কেউ নেই।

এবার আসা যাক প্রবাসী নারীদের কথায়। যৌতুকের টাকা না দিতে পারায়, অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে স্বামীর সংসারে থাকা যখন দুর্বিসহ হয়ে উঠে, তখন ফিরে আসতে হয় স্বামী পরিত্যাক্ত হিসেবে। বাবার মেয়ে ফিরে আসে পিতৃকুলে। শুনতে হয় আপনজন ও প্রতিবেশীদের নানান গঞ্জনা। পরগাছা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে নারীগণ আত্মনির্ভর হতে পা বাড়ায় প্রবাসে বা গার্মেন্টস শিল্পে। অধিকাংশ নারীগণই বেছে নেয় বিদেশ গমণের পথ। কিন্তু প্রবাসে তাঁর জন্যে কি অপেক্ষা করছে সে নিজেও জানে না। প্রবাসে নারী গৃহকর্মীদের নানাভাবে অত্যাচার করা হয়। তন্মধ্যে যৌন হয়রানি অন্যতম। ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করলেই দেখা যায় প্রবাসী মা বোনদের আত্মচিৎকারের ভিডিও বা নির্যাতনের ভয়ঙ্কর দৃশ্য। সেখানে তারা গৃহকমী নয়, যেন বাড়ির পুরুষদের সবার যৌনদাসী। কিছু কিছু দালাল চক্র নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশী মালিক পক্ষ্যের কাছে দাসী হিসেবে বিক্রয় করে দেয়। এই প্রতারণার ফাঁদে আটকা পড়ে সইতে অকথ্য নির্যাতণ। এভাবেই মান সম্মান হারিয়ে না জানি কত মা-বোন অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে এযাবৎ সারা দেশে ৪৭৩জন নারী প্রবাসীর মরদেহ দেশে ফিরেছে। তন্মধ্যে ১৭৫ জনের মরদেহ এসেছে সৌদি আরব থেকে। বলা হচ্ছে ৫১ জনই এদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন।

এরপরে এলো ২০১৯ সালে কোভিড ১৯ তথা করোনা নাম প্রাণঘাতি ভাইরাস। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। না দেশে ফিরে আসা যায়, না প্রবাসে বেঁচে থাকা যায়। খাবারের অভাব, বেতন বন্ধ, মালিক পক্ষের অত্যাচার ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার সর্বত্রই। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, কিশোরগঞ্জ এর তথ্য অনুযায়ী অদ্যাবদি মোট কিশোরগঞ্জ জেলায় ২,২৮,৬৬৮ জন নারী পুরুষ প্রবাসী হন। তন্মধ্যে পুরুষ ১,৯৯,১৪৩ জন ও নারী ২৯,৫২৫ জন। করোনা কালীন সময়ে দেশে ফিরেন নারী-পুরুষ ১৭৭ জন। কিন্তু তারা কিভাবে আছেন? খবর নেওয়ার মতো যেন কেউ নেই এই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের। জীবনের অধিক সময় প্রবাসে কাটানোর পরেও অভাব দুরীকরণের লক্ষ্যে ফের পারি জমাতে হয় দূর প্রবাসে। সর্বোপরি শিক্ষনীয় বিষয় ও মূল কথা হচ্ছে মানুষ বিপদে পড়ে তার নিজের দোষে। সেজন্যে আমাদের সকলকেই চোখ-কান খোলা রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে।

Comments

comments