ঢাকারবিবার , ১৮ এপ্রিল ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হাওরে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে সাইলেজ

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ১৮, ২০২১ ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সিরাজগঞ্জকে বলা হয় বাংলাদেশের ডেইরি রাজধানী। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পতিত জমির সু-ব্যবহারের দ্বারা কিশোরগঞ্জের হাওর হতে পারে ডেইরির দ্বিতীয় রাজধানী। ভৌগোলিক কারণেই হাওর অঞ্চলের জীবনযাত্রা ভিন্ন। প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতা এই অঞ্চলের মানুষদের একটু ভিন্নভাবে পরিচিতি দেয়। বর্ষায় রুপোলি নদীগুলো ফুঁসে উঠে। দুই তীর ছাপিয়ে প্লাবিত করে ফসলি মাঠ। দেখতে একেবারে সাগরের মতো। হাওরে বষার্ থাকে বছরের প্রায় ছয় মাস। পানি আসতে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে। শেষ হয় আশ্বিন-কার্তিকে। বাকি মাস এখানে শুকনো কাল। সে হিসেবে মূলত হাওরে ঋতু দুটি।

হাওর অঞ্চলের ৭০% মানুষ কৃষিজীবী। প্রায় ৯৫ ভাগ বাড়িতে রয়েছে গবাদিপশু। কিন্তু বর্ষাকাল এলেই হাওরের মানুষেরা গরু নিয়ে পড়েন বিপাকে। বষার্য় চরম গো-খাদ্যের অভাব দেখা দেয় এ অঞ্চলে। এতে করে অনেক কৃষক তাদের গরু বা গবাদিপশু বিক্রি করে দেয়। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ফসল পরিত্যক্ত জমিগুলো কাজে লাগিয়ে যেকোন কৃষক বা জমির মালিক পলি ব্যাগ বা গর্ত পদ্ধতিতে সাইলেজের দ্বারা বর্ষাকালে গো খাদ্যের অভাব দূর করতে পারবে। এতে করে নিত্য নতুন লোকদের যোগ্য কর্মসংস্থান এবং বছরব্যাপী গো-খাদ্যের সংকট কেটে গিয়ে সৃষ্টি হবে এক অপার সম্ভাবনার দ্বার।

সাইলেজ একটি প্রক্রিয়ার নাম। এটি একটি ইংরেজি শব্দ, যা দ্বারা গো-খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে সবুজ ঘাসের গুনাবলি ঠিক রেখে বিশেষভাবে সংরক্ষিত ঘাস বা গো খাদ্যকে বুঝায়।

সাইলেজ তৈরীর বিশেষ উপকরণ হচ্ছে; ভুট্টা গাছ কাটার মেশিন, পলিথিনের ব্যাগ, ব্যাগ রাখার জন্য মঁাচা, ইউরিয়া সার, চিটাগুড়, ছঁায়াযুক্ত স্থান। সংরক্ষণের পর বছরের যে কোন সময় সংরক্ষিত ঘাস তুলে সরাসরি গরুকে খাওয়ানো যায়। একটি গবাদিপশুর খামার উৎপাদনের জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করা। কিন্তু কম খরচে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করা বর্তমানের খামারিদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে সাইলেজ হতে পারে একটি অপার সম্ভাবনা।

সাইলেজ বানানোর জন্য প্রথমে ঘাস অথবা ভুট্টা গাছ সংগ্রহ করতে হবে। সাইলেজের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয় ভুট্টা গাছ। ভুট্টা গাছের মোঁচা, ফুল ও শিকড় বাদ দিলে যে অংশ থাকে তা দিয়ে সহজেই সাইলেজ তৈরী করা যায়। ভুট্টার সাইলেজে প্রচুর পরিমাণে শক্তির উপাদান থাকে। ভুট্টার দানার গোড়ায় কালো দাগ আসার সাথে সাথে সাইলেজ প্রস্তুতের জন্য ভুট্টা কাটার উপযোগী হয়। এ সময়ে ভুট্টা গাছের শুল্ক পদার্থের পরিমাণ ৩০-৩৫% হয়। ভুট্টা গাছগুলোকে ভূমি থেকে ১০-১২ সে.মি. উঁচুতে কাটা হয়। এরপর এগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করে সাইলেজের জন্য উপযুক্ত করা হয়। ভুট্টা গাছের সাথে ১ঃ১ এবং সর্বনিম্ন ১ঃ৩ অনুপাতে মিশিয়ে চিটাগুড় দিয়ে সাইলেজ করা উত্তম। নন-লিগুম জাতীয় ঘাস না পাওয়া গেলে শুকনা খড়ের সাথে মিশিয়েও সাইলেজ তৈরী সম্ভব।

প্রথমে ভুট্টা গাছ কাটার মেশিনের দ্বারা গাছগুলোকে ০.৫-১.০ ইঞ্চি আকারে কেটে নিতে হবে। টুকরো করা গাছের সাথে ৩-৪% হারে চিটাগুড় ভালোকরে মিশিয়ে তা বায়োরোধক পলি ব্যাগে ভরতে হবে। পলি ব্যাগ যত বেশি বায়োরোধক হবে সাইলেজের মান তত বেশি ভালো হবে। এভাবে পলি ব্যাগের মুখ বন্ধ অবস্থায় মাঁচার উপর ও ছায়াযুক্ত স্থানে ৪০ দিন পর্যন্ত রাখতে হবে। তা ৪০ দিন পর থেকে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ এটি এক বছর পর্যন্ত এভাবেই সংরক্ষণে রাখা যাবে।

গর্তের মাধ্যমে সাইলেজের নিয়ম একটু অভিন্ন। সাইলেজের গর্তের জন্য আসলে পরিমাপ নেই। ঘাস অনুপাতে সুবিধামত গর্ত করে খেয়াল রাখতে হবে গভীরতা যেনো এমন না হয় মাটির লেভেলের নিচে ঘাসের লেভেল হয়ে গেছে। মাটি ও ঘাসের লেভেল সমান থাকলে ভালো হয়। এতে করে পানি গর্তের ভিতরে প্রবেশের সুযোগ পাবেনা। গর্তের নিচে অবশ্যই পলিথিন বিছাতে হবে। তারপর এর উপর ধাপে ধাপে কাটা ঘাস বিছাতে হবে। দুই ধাপের মাঝে চিটাগুড় এবং পানির মিশ্রণ ছিটিয়ে দিতে হবে। সবুজ ঘাসের শতকরা ৩-৪ ভাগ চিটগুড় মেপে একটি চাড়িতে নিতে হবে। তারপর ঘন চিটাগুড়ের মধ্যে ১ঃ১ অথবা ৪ঃ৩ পরিমানে পানি মিশালে ইহা ঘাসের উপর ছিটানোর উপযোগী হবে। খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রণ যাতে খুব ঘন বা খুব পাতলা না হয়। এমনভাবে দ্রবন তৈরী করতে হবে যাতে আঠার মত ঘাসের গায়ে লেগে থাকে। ১০০ কেজি ঘাসের জন্য ৩ কেজি চিটাগুড় এবং ৩-৪ লিটার পানি দরকার হবে। চিটাগুড় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং এই কার্বোহাইড্রেট পরে অর্গানিক এসিডে রূপান্তর হবে যা সাইলেজ তৈরীর প্রধান কৌশল।

Comments

comments