ঢাকাশুক্রবার , ১০ এপ্রিল ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশে করোনাঃ আমাদের এ কেমন উপলব্দি?

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ১০, ২০২০ ৭:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চীনের উহানে গত ডিসেম্বরের শেষ থেকে শুরু হয়ে টানা ১১ সপ্তাহ চলে করোনার তান্ডব। চীনের লুকিয়ে রাখার নীতির ফলে এটি ছড়িয়ে পড়ে ইরানসহ ইউরোপের দেশগুলোতে। ইরানও প্রথমদিকে লুকিয়ে রাখার নীতি অবলম্বন করে যার ফলে এটি আরো ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়৷ এর মধ্যে Covid-19 ভাইরাসটি বৈশ্বিক মহামারি আকারে আবির্ভূত হয়।ভাইরাসটির রাসায়নিক গঠন, এর প্রকৃতি, এটা আদৌ জৈব অস্ত্র কী না? এসব বিষয়ে টানা ৪ মাস ধরেই আলোচনা চলছে। এসব আলোচনা এখন সারা বিশ্বে সবার মুখে মুখে। এরকম আরো বহু প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের হয়তো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

যখন চীন, ইরান, ইতালিতে করোনার তান্ডব চলছিলো তখনো আমাদের দেশে এটি ছড়িয়ে পরেনি। আমরা প্রায় তিন মাস সময় পেয়েছিলাম নিজেদের গুছানোর বা এর গভীরতা অনুধাবন করার। কিন্তু আমরা কতটুকু নিজেদের প্রস্তুত করতে পেরেছি? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে একটু ফিরে তাকাতে হবে। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় আমাদের চোখের সামনে চলে আসে এবং আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের ভঙ্গুর সমাজব্যবস্থা, লোভী দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক উদাসীনতা, সরকার ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা, ধর্মীয় দৈন্যতা, বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবসহ আরো অনেক কিছুই।

করোনার শুরুতে এক শ্রেণীর সচেতন জনগণ বারবার সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান। সরকারও এতে সাড়া দেয়। যার ফলে বিমান বন্দরগুলোতে স্থাপন করা হয় থার্মাল স্ক্যানার। নিঃসন্দেহে আমাদের সরকার প্রধান এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখলাম অল্প কয়েকদিনের মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া বাকি স্ক্যানারগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অনেকে টাকার বিনিময়ে সুস্থতার সনদ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এক্ষেত্রে বন্দর কর্মকর্তারাই দায়ী। আবার এরকমও শুনা গেলো অনেকে ঠান্ডা জ্বর নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আসার পূর্বে তিনটি চারটি নাপা এক্সট্রা খেয়েছেন যাতে করে স্ক্যানারে কিছু ধরা না পড়ে। আদতে ঘটলো তাই৷ বাঙালির বুদ্ধির তারিফ করতেই হয়। তারপর যাদের বন্দর থেকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হলো তাদের থাকা, খাবারে অব্যবস্থাপনা একের পর এক শিরোনাম হতে লাগলো। আবার অনেক প্রবাসী বন্দর থেকে পালালেনও। যারা বিদেশে সব ধরণের নিয়ম পইপই করে পালন করেন দেশে এসে কেনো তারা উদাসীন, এটা একটা বিস্ময়!

যখন দেশে করোনা পাওয়া গেলো গেলো রব উঠতে লাগলো তখন বাঙালি একরের পর এক বিষ্ময় উপহার দিয়ে গেছে। এক ডাক্তার কোথা থেকে বিবৃতি দিলেন ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বেশি হলে করোনা ভাইরাস কাজ করেনা। এই একটি ঘটনা বাঙালির যতটুকু প্রস্তুতি ছিলো তাকে একেবারে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। হয়তো বা সরকারও ভেবেছে এমন যে, যেহেতু বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল শুরু হচ্ছে তাতে করে আমাদের আর করোনার ভয় নেই। তাই না হলো বিদেশের ফ্লাইট বন্ধ, না হলো অকেজো স্ক্যানার মেরামতকরণ আর না হলো বেশি করে কীট সংরক্ষণ। আর বাংলাদেশের তাপমাত্রায় করোনা কম কাজ করবে বলে প্রবাসী ভাইদের দেশে আসার হিড়িক পড়ে গেলো। তারমধ্যে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলো কোনো করোনা রোগী ধরা পড়ছেনা তাহলে তো তাপমাত্রার ঘটনা সত্যি! এটা ভেবে মন্ত্রীরা খুশিতে গদগদ করতে লাগলেন। সেতুমন্ত্রী বলেই ফেললেন আমরা করোনার থেকে শক্তিশালী। যদিও তিনি বাঙালি জাতির ঐক্য, করোনার থেকেও শক্তিশালী বুঝাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাঙালি একটু বেশি সমঝদার তাই তারা ঘরে ঘরে রটালো যে সরকার করোনার থেকে শক্তিশালী। তাপমাত্রার আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন এটা নরমাল ফ্লু, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যি সত্যি ভেবে বসলেন করোনা তাপমাত্রার জন্য বাংলাদেশে ছড়াবে না। তাই তিনি সগৌরবে প্রচার করলেন আমাদের ব্যপক প্রস্ততি আছে করোনা ভাইরাসে! আর তথ্যমন্ত্রীর আবোল-তাবোল নাই বললাম! আসলে উনারা কেউই এই দুর্যোগের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারেননি৷ এখন যে ডাক্তার এই তাপমাত্রা তত্ত্ব বের করলেন তিনি এখন পিপিই গায়ে বসে আছেন মাহফুজুর স্যারের পাশে। অথচ এটা একটা গুরুতর অপরাধ ছিলো যে কোনো রকম এক্সপেরিমেন্ট ছাড়া এই ধরণের কথা প্রচার করা। বাঙালি এই তাপমাত্রা তত্ত্বটি ভালোভাবে খেয়েছিলো কারণ এটি সকলের অনুকূলের কথা ছিলো। অনুকূলের যেকোনো কিছু গুজব হোক আর গজব হোক বাঙালি সেটা বীর দর্পে গ্রহণ করতে উস্তাদ! আমি মনে করি, এই তাপমাত্রা তত্ত্ব বাংলাদেশের করোনা প্রস্তুতির বারোটা বাজিয়েছে।

এদিকে চীন, ইতালি ও ইরানে করোনা তান্ডব দেখে  এই দেশে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলো ধর্মব্যবসায়ীরা। কারণ তারা এমন একটা মুখরোচক রসদ পেয়েছিলো যেটা এর আগে তারা কোনোদিন পাইনি। তাই কুরআন-হাদীসের গভীরে প্রবেশ না করে এই ধর্মব্যবসায়ীরা বাঙালির আবেগকে পুঁজি করে প্রচার করেছে এটা মুসলমানের কিছু হবেনা। যা হবার অন্যদের হবে। বাংলাদেশিরা আবার ধর্মীয় ক্ষেত্রে খুব আবেগপ্রবণ, যেখানেই যাক ধর্মীয় কথা শুনতে বলতে ভালোবাসে। সারাদিন মাইকে ওয়াজ বাজিয়ে কান্নাকাটি করবে কিন্তু নামাজের বেলায় ওই দুয়েক কাতার। তারা সারাদিন ধর্ম ধর্ম করবে আবার খাবার স্টক করবে, সুযোগ বুঝে দাম বাড়াবে, গুজব ছড়াবে, সুদ খাবে, ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়াবে না, মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ব্যবসা করবে কিন্তু তারা খুবই ধর্মভীরু। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তিরাসহ সাধারণ জনগণের অনেকে বিশ্বাস করেছে হয়তো সত্যি সত্যি কিছু হবেনা। তাই যে যার মতো করে উদাসীনতা দেখিয়েছে। যার ফল এখন ভোগ করতে হবে সকলকে। এর মধ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে থানকুনি পাতার গুজব, শিশু গুজবসহ আরো কত কী!

সর্বশেষ যে বিষয়টি অবাক করেছে আমাদেরকে সেটি হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স। সেখানে প্রায় অনেকগুলো জেলার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত ছিলেন যেটি কিনা লাইভ সম্প্রচার হয়েছে টেলিভিশনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক, এমপি, পুলিশ সুপার, সেনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনসহ জেলার সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তিদের সাথে। সেখানে সবাই একযোগে প্রধানমন্ত্রীকে বলে গেলেন কোথাও কোনো সমস্যা নেই সবকিছুই পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। প্রশাসন, জনগণ সব ঠিক আছে। জেলার সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ এত সুন্দর করে মিথ্যে বলতে পারে তা আগে জানা ছিলো না। এটি সত্যি অবাক করার মতো। বিরল ঘটনা। বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে কয়েকবার করে জিজ্ঞেস করলেন কোথায় কী কী লাগবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি আমাদের চোখে পড়ল না। ঘাটতি শুধু দেখলাম ওই ব্যক্তিগুলোর দায়িত্বশীল আচরণের!

প্রধানমন্ত্রী জেনে গেলেন সবকিছু ঠিকঠাক চলছে অথচ সিলেটে একজন ডাক্তার যিনি করোনা আক্রান্ত, আইসিইউ সুবিধা পেলেন না, এয়ার এম্বুলেন্স পেলেননা ঢাকা যাওয়ার জন্য। হাসপাতালে নেই ভেন্টিলেটর সুবিধা। নোয়াখালীতে মেডিকেল কলেজ আছে, নেই হাসপাতাল। এক যায়গায় কীট আছে তো টেস্ট করার যন্ত্র নেই। আরেক যায়গায় টেস্ট করার যন্ত্র আছে তো কীট নেই। সব আছে কিন্তু দক্ষ জনবল নেই! তাহলে এত সাজিয়ে গুজিয়ে মিথ্যে বলার কী দরকার ছিলো! এদিকে করোনা রোগী পালিয়ে যায় হাসপাতাল থেকে। ডাক্তার-নার্সদের পর্যাপ্ত পিপিই নেই। পিপিই পড়ে বসে আছে এমপির ড্রাইভার! করোনা ছাড়াই চিকিৎসা না পেয়ে মরে যায় ঢাবির ছাত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন আক্ষেপ করে বিদেশি ডাক্তারের কথা বললেন। সেটা নিয়েও শুরু হলো হাজার আলোচনা। এদিকে আবার অনেকের শয়তান মাথা হিসেব করে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার শাড়ির কালার, কতটা শাড়ি… ইত্যাদি! এসব বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ! যখন বলা হলো, জনগণের টাকায় ডাক্তার হয়েছে আমাদের ডাক্তাররা। তখন আবার অনেকে হিসাব কষে হিসাব দেয় তারা জনগণ থেকে কত নিলো আর জনগণকে কত দিলো! তারপর গার্মেন্টস কাহিনীতো সবার জানা! সত্যি এগুলো অসুস্থ বিকৃত মাথার কাজ কারবার।

এতকিছুর পরেও অসংখ্য  আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এই দুর্যোগে জনগণের পাশে এসে দাড়িয়েছে, ত্রাণ দিয়েছে, অনেকে অনেক পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছে। জনগণকে সচেতন করতে মাইকিং করেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে। অথচ দু-চারশ চাল চোর আওয়ামীলীগার, তাদের অর্জনকে ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। জনগণ আওয়ামীলীগের হাজার হাজার ভালো কাজকে পাশ কাটিয়ে মনে রাখছে চাল চোরদের! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধুই চাল চোরের কাহিনী। তবে এই দুর্যোগকালীন সময়ে ত্রাণ চুরদের যদি সরকার ঠেকাতে ব্যর্থ হয় তাহলে কিন্তু এর খেসারত সরকার এবং আওয়ামীলীগকেই দিতে হবে!

এই দুর্যোগকালীন সময়ে আমরা প্রচুর ভালো মানুষের দেখা পেয়েছি যারা ব্যক্তি উদ্যোগে প্রচুর ত্রাণ বিতরণসহ সচেতনতামূলক কাজ করেছে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, এক টাকার আহার তারা মানবতার অনন্য উপহার। এছাড়া  আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের পাশাপাশি  সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক জোটগুলোও তাদের ত্রাণ বিতরণ ও সচেতনামূলক কাজগুলো অব্যাহত রেখেছে। তাছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ক্যাডার, শিক্ষক পরিষদ, বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানি , বিভিন্ন চাকুরীজীবী-পেশাজীবী পরিষদগুলো যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সহায়তা করেছেন সত্যি সেটা এক অনন্য দৃষ্টান্ত। দেরিতে হলেও সরকারসহ প্রশাসন বুঝতে পেরেছেন পায়ের তলায় কতটুকু মাটি আছে! তাই শেষের দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণাসহ ৩১ দফা নির্দেশনা ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে। বিভিন্ন হটলাইন সেবা, প্রশাসনের কঠোর অবস্থান আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। মহল্লায় মহল্লায়, গ্রামে গ্রামে সামাজিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো প্রমাণ করেছে বিপদ গাড়ে এসে পড়লে বাঙালি সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে।

পরিশেষে বলবো, করোনা মোকাবেলায় সরকার, সশস্ত্র বাহিনী, ডাক্তার-নার্স, মাঠ প্রশাসন, ব্যাংকারসহ প্রত্যেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা সফল হোক, জয় হোক মানবতার।

খালেদ সাইফুল্লাহ ইলিয়াছ

কবি ও সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

Comments

comments