ঢাকাসোমবার , ১৩ এপ্রিল ২০২০
  1. অন্যান্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. দেশজুড়ে
  5. পজিটিভ বাংলাদেশ
  6. ফটো গ্যালারি
  7. ফিচার
  8. বিনোদন
  9. ভিডিও গ্যালারি
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনার মহামারি: চাল চুরি ও আমাদের জনপ্রতিনিধি

প্রতিবেদক
Kolom 24
এপ্রিল ১৩, ২০২০ ৪:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

করোনার দিনগুলোতে দেশে যেনো চাল চুরির হিড়িক পড়ে গেছে। প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাল চুরির খবর জানতে পারছি। আর এসব চাল সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কিংবা জনসাধারণের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ সহায়তার অংশ। অথচ এসব জনপ্রতিনিধিরা দেশের দুর্দিনে চাল চুরি করে মজুত রাখার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাহলে দেশের একটি বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী যখন খাবারের জন্য হাহাকার করছে, তাদের খাবারের কষ্ট লাঘব হবে কীভাবে? এজন্য এখনই সরকারকে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যা কেন্দ্রীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ সহায়তা কার্যকম পরিচালিত হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি জেলার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অসহায়, দুঃস্থ মানুষের তালিকা করে তাদেরকে খাবার সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। এতে করে এসব দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো রাস্তায় বের হবেন না। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরি হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা সম্ভব। ফলে যে মানুষগুলো কারো কাছে লোকলজ্জার ভয়ে কিংবা আত্মসম্মানের জায়গা থেকে সাহায্য চাইতে পারছে না তারাও সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন। তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত ত্রাণ সহায়তা প্রদানের কার্যকম দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে যাবে বলে বিশ্বাস করি।

গত ১২ এপ্রিল ময়মনসিংহে জামালপুর পৌরসভার মুকন্দবাড়ি এলকায় ত্রাণ না পাওয়া কর্মহীন হতদ্ররিদ্র নারী-পুরুষরা ট্রাক আটকিয়ে চাল ও আলু নিয়ে যান। কেন এ মানুষগুলো চাল-আলু নিয়ে চলে গেলেন হয়তো তারা ত্রাণ পাচ্ছেন না। আবার পেলেও হয়তো খেয়ে বেঁচে থাকার মতো পর্যাপ্ত পাচ্ছেন না। তাহলে মানুষ যখন এভাবে কোনো ধরনের উপায় না পেয়ে চাল-আলু নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে তখন সেখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে যা অবশ্যই কাম্য নয়। এছাড়া জনসমাগম এড়িয়ে চলার যে নির্দেশনা রয়েছে সেটিও ঠিকভাবে হচ্ছে না।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করেননি এমন অভিযোগ গণমাধ্যমে উঠে আসে। অথচ করোনা ভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতিতে দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার খেটে খাওয়া মানুষদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া বগুড়ার নন্দীগ্রামে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৬৮ বস্তা চালসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদককে আটক করা হয়েছে। এরকম বেশকিছু চাল চুরি কিংবা মজুত রাখার সংবাদ গনমাধ্যমে সহজেই দেখতে পারছি। যা আমাদের মতো সচেতন নাগরিক কখনই প্রত্যাশা করে না।
অনেকে বলছেন, এসব চাল চুরির ঘটনায় জড়িত জনপ্রতিনিধিরাই সংশ্লিষ্ট এলাকায় চারিত্রিক সনদ দিয়ে থাকেন। অথচ জনপ্রতিনিধিদেরই চরিত্রের ঠিক নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের চারিত্রিক সনদ দেওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এসব জনপ্রতিনিধিকে নরপিশাচ, পশু ও অমানুষ উল্লেখ করে স্ট্যাটাসও দিচ্ছেন। মাহমুদুল হাসান পারভেজ নামের এক গণমাধ্যমকর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মহামারীর মধ্যে কিছু নেতা, জনপ্রতিনিধি চাল চুরি করছে। ব্যাপারটা আসলে স্বভাব। যত যাই হোক চুরির স্বভাব তো পরিবর্তন করা যাবে না। সম্পদ সীমিত হতে পারে কিন্তু চোরের অভাই নাই আমাদের। অন্তত এটা নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি।’ অবশ্য এরইমধ্যে বরাদ্দের চাল চুরি করা ও বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে হাজতে থাকা কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে উক্ত পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশের সদ্য সাবেক আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সরকারি ত্রাণ চুরি বা অনিয়মকারীদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশও দিয়েছেন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে। দেশের প্রায় ৩৮টি জেলায় ও ঢাকার ৭৫টি এলাকায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বেশকিছু জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কার্যত পুরো দেশই লকডাউন হয়ে পড়েছে। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়েছে লক্ষ-লক্ষ মানুষ। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তাও নিতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে এই মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমের খবরে উঠে আসছে, ‘খাবার না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন। আবার অনেকে কাজ না থাকায় কয়েকদিন ধরে খেতে পারছেন না।’

এদিকে জেলা শহরের প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ (চাল কম দেওয়া) উঠেছে। ইতোমধ্যে চাল মজুত করে রাখা ও চুরি করার অভিযোগে গত কয়েকদিন বেশকিছু জনপ্রতিনিধিকে আটক করা হয়েছে। তারপরও চাল চুরি কিংবা চাল বিতরণে অনিয়ম বন্ধ হয়নি। এর বিপরীতে দেখেছি, অনেক জনপ্রতিনিধিই এলকার মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। আবার কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধও করছেন। তবে চাল চুরি করা, মজুত করা ও বিক্রি করে দেওয়ার মতো ঘটনায় এসব ভালো কাজগুলো আড়ালে চলে যাচ্ছে যা খুবই স্বাভাবিক। একইসঙ্গে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগটিও সফল হচ্ছে না। অনেকে দাবি করেছেন, এসব ত্রাণ সহায়তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে দেওয়ার। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেওয়া ত্রাণ সকলেই পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে দলীয় লোকজনই ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে যা সত্যিই দুঃখজনক! এছাড়া ঘরে খাবার না থাকায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো কর্মের জন্য রাস্তার পাশে বিক্ষোভ করছে। আবার বাধ্য হয়ে কেউ কেউ মানুষের কাছে হাতও পাতছেন। কারণ বেঁচে তো থাকতে হবে।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এতো রক্ত দেওয়ার পরে যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয় নাই। এখনো ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দিয়েছে। আামি এদের অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী। কিন্তু আর না। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়, আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে লুটতরাজ করে খায়।’ বর্তমান সময়ে যেনো বঙ্গবন্ধুর ভাষায় একশ্রেণির সংঘবদ্ধ ‘চোরের দলই’ সরকারের ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের উদ্যোগকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এতে করে গরিব, দুঃখী মানুষ খাবার না খেয়ে অনাহারে থাকছে। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই সময়ে দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ দেশের এমন পরিস্থিতিতেও যদি জনপ্রতিনিধিরাই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে, চাল চুরি করে, মজুত করে এবং ত্রাণ প্রদানের সময় ক্যামেরার দিকে না তাকালে ধাক্কা দেয় তবে এসব জনপ্রতিনিধিরা কতটুকু জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ তা সাধারণ মানুষের বুঝতে বাকি থাকে না। তাই এসব জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। কেননা এসব জনপ্রতিনিধিরা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলে সরকারের গৃহীত সকল উদ্যোগ নষ্ট করবে। তাই দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারী ও মুনাফাখোরী জনপ্রতিনিধিদের এখনই লাগাম টেনে ধরতে হবে। তা নাহলে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের গৃহীত সকল ধরনের উদ্যোগ সফল হবে না।

আলী ইউনুস হৃদয়
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

comments